পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লেদার ও লেদার গুডস পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যকে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। নতুন করে ৩৮৩টি আইটেম এ তালিকায় যোগ হলো। এতে এখন থেকে চীনের বাজারে বাংলাদেশের ৮ হাজার ৯৩০টি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। এই বাড়তি সুবিধা কার্যকর করতে লেটার অব এক্সচেঞ্জ করবে বাংলাদেশ ও চীন। ইতোমধ্যে চীনা সরকারের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এতে স্বাক্ষর করেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বাড়িয়েছে। এখন থেকে চীনে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ লাইনের ৯৮ শতাংশ পণ্যে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন চীনে পণ্য রফতানির গতি খুব একটা বাড়ছিলো না। ২০২০ সালে মহামারি করোনায় দেশে যখন চরম অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছিল। অনিশ্চিয়তা এবং হতাশা গার্মেন্টসসহ অন্যান্য রফতানিকারকদের মধ্যে। আর ওই সময়েই ২০২০ সালের ১৬ জুন চীন বাংলাদেশকে শর্তহীনভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে চীন অনন্য সহযোগীতা বা অনন্য সুযোগের হাতছানি দেয়। যা চীনের বাজারে পণ্য রফতানির পথ নতুন করে উন্মুক্ত করে। দেশের রফতানি বাণিজ্য ঘুড়ে দাড়ানোর পথ সুগম করে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে ব্যাপক কর ছাড় দেয়ায় দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। আর এই ধারাবাহিকতায় নতুন করে ৩৮৩টি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে এটা একটি ভালো সংবাদ। তাদের মতে, এ পদক্ষেপ রফতানি বাণিজ্যকে প্রসারিত করবে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় সকল পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে। ফলে, চীনে রফতানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই সুযোগকে এখন সরকার ও ব্যবসায়ীরা কিভাবে ব্যবহার করে ঘুড়ে দাড়াবে সে নিয়ে পরিকল্পনা করার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ ইনকিলাবকে বলেন, চীন বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব নেয়ার জন্য বড় সুযোগ দিয়েছে। এটা দুই দেশের রফতানি বাণিজ্যকে প্রসারিত করবে। এর আগেও বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন কোন ভাবেই তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। একই সঙ্গে সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব বজায় রাখতে পারি বলে উল্লেখ করেন ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।
সূত্র মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যকে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয় চীন, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এর আওতায় বাংলাদেশের ৮৫৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়েছে। অর্থাৎ, চীন বাংলাদেশের আরও ৩৮৩টি পণ্যকে নতুন করে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। তবে চীনে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বেশ কিছু আইটেম শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে ছিল। এবার এসব পণ্যকেও শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, চীনা দূতাবাস থেকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা পণ্যতালিকা পেয়েছি। চীনা ভাষায় লেখা এ তালিকার এইচএস কোড বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফলে যে ৩৮৩টি আইটেম নতুন করে শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর নাম এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, লেদার ও লেদার গুডসের আইটেমগুলো চ্যাপ্টার ৪৬ এর অন্তর্ভুক্ত। এ চ্যাপ্টারের আওতায় থাকা পণ্যগুলোর মধ্যে আগে ৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল, নতুন তালিকায় এ চ্যাপ্টারে পণ্য সংখ্যা বেশ বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ও বাংলাদেশি চামড়ায় উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্যের মূল বাজার চীন। ইউরোপের দেশগুলোতে রফতানি হওয়া চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা হয় বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা এ খাতের রফতানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় লেদার ও লেদার গুডস অন্তর্ভুক্ত করাকে ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, চীনের এ সিদ্ধান্ত লেদার সেক্টরের রফতানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে চীনের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনা বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে।
৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করতে বাংলাদেশকে লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়ে গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল দিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস। চীন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে চীন সরকার বাংলাদেশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দ্রুত এই লেটার অফ এক্সচেঞ্জে স্বাক্ষর করলে তা হবে একটি দারুণ ব্যাপার, এতে করে বাংলাদেশের জনগণ এই বিশেষ উদ্যোগ এবং শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারবে।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, চীনের দেয়া ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকখাতের সকল আইটেমসহ বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ৯৯ শতাংশ কাভার করতো। তবে লেদার ও লেদার গুডসের বেশকিছু আইটেম এ তালিকার বাইরে ছিল, যা এখন অন্তর্ভুক্ত করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।
ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধা ১ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বাড়ানোর এই ঘটনা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।
একক দেশ হিসেবে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু চীনের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ খুবই কম। গত অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বাড়লেও চীনে বাংলাদেশের রফতানি খুব বেশি বাড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশ। একই সময়ে চীনে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চীনে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ৩৫৭ মিলিয়ন ডলার। চীনে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য ওভেন গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, চীন বড় দেশ। বড় অর্থনীতির দেশ। চীনে বিশ্বের বড় বড় ব্রান্ড কাজ করে। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারও অনেক বড়। তাই এই সুবিধা শুধু রফতানি বাণিজ্যকে প্রসারিত করবে না। চীনও আমাদের দেশে বিনিয়োগ বাড়াবে। এখানে পণ্য উৎপাদন করবে। যা আমাদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম চীন ২০১০ সালের ১ জুলাই স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে। প্রাথমিকভাবে এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ চীনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু চীনের এ সুবিধা বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতার অনুকূল কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা আছে এমন অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রফতানি সম্ভাবনাময় পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদানের জন্য চীনকে অনুরোধ করে। বাংলাদেশের অনুরোধের পর চীন লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষর করে। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ২০২০ সালের ১৬ জুন চীন বাংলাদেশকে শর্তহীনভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে (৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য) শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করে আদেশ জারি করে। এর ফলে চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনাময় পণ্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে, যা ওই বছরের ১ জুলাই কার্যকর হয়।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।