পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে মাদকের ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক ভবন, বিউটি পার্লার, স্পা সেন্টার, আবাসিক হোটেলের আড়ালে চলছে রমরমা মাদক কারবার। আর ওই কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন তরুণ-তরুণীরা। সমাজে কিশোর গ্যাং হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তরুণদের বড় একটা অংশ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এলাকায় খুচরা বিক্রেতারা দিচ্ছেন ‘হোম সার্ভিস’। ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কাক্সিক্ষত মাদক। আর মাদকের সেলসম্যানের ভূমিকায় রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সুন্দরী তরুণীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আইনশৃংখলা বাহিনীও এখন তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত কয়েক বছরে দেশের নির্বাচনগুলো হয়ে থাকে এক দলীয়। প্রশাসনের সহায়তায় এসব নির্বাচনে ভোটের দিন সরকার দলীয় প্রার্থীরা প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে হাজার হাজার তরুণকে ভাড়া করে নামায়। ওই সব তরুণ প্রতিপক্ষকে ঠেকানোর কাজ করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনে প্রভাব খাটায় এবং উৎশৃংখল আচরণ করে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনে ভোটের দিন প্রভাব দেখানোয় পরবর্তীতে তারা একই আচরণ করে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব জাহির করে। এভাবে তারা এক সময় নিজেরাই কিশোর গ্যাং তৈরি করে। পরবর্তীতে চুরি-ছিনতাই, খুন-রাহাজানীতে ভাড়াটেসহ নানান ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি এদের কেউ কেউ মাদকের রাজ্যে ঢুকে পড়েন। টাকা বিনিময়ে মাদক কারাবারি করেন; কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে মাদকসেবনের দ্বারা বিমূর্ত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, নৈতিক মূল্যবোধ। মাদকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবে সমাজ যেন আজ অবৈধ, অনৈতিক, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আঁতুড়ঘর। একটি জাতির সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংসের অন্যতম এই হাতিয়ার মাদকের বিরুদ্ধে যথাসময়ে সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন না করলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই জাতি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রথমত মাদক এখন সহজলভ্য হয়ে যাওয়াতে সবাই গ্রহণ করছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর গফলতির কারণে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক আসছে। এক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আরো কঠোর হতে হবে। যাতে মাদক সহজলভ্য না হয়। তিনি আরো বলেন, সরকারের মদদপুষ্ট না হলে কেউ কোনো অপরাধ করতে পারে না। আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় মাদক কারবার চলছে। কারণ তারা এর ভাগ পায়। রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনশৃংখলা বাহিনীর জোড়ালো ভূমিকা থাকলে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তানদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদের সন্তানের পকেট খরচ বেড়ে যাচ্ছে না কি, বেশি রাতে বাড়ি ফেরে না কি, নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না কি, দেরি করে ঘুম থেকে উঠে না কি ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি নজর রাখতে হবে। পিতা-মাতাকে সন্তানের বেশি করে সঙ্গ দিতে হবে। সন্তানদের কখনো একাকিত্ব থাকতে দেয়া যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদকের নেশা এমনই এক নেশা, যে নেশার কাছে সমাজ সংসার সব তুচ্ছ হয়ে যায়। মাদক সেবন করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। সর্বনাশা মাদকের ছোবলে বহু সংসার ছারখার হয়ে গেছে। গত নভেম্বরে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে ছবি খাতুন নামে এক নারী খুন হয়েছেন। পরে এ ঘটনায় ছবি খাতুনের ছেলে সবুজ হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। সবুজের বাবার দাবি, তার ছেলে নিয়মিত মাদক সেবন করত। মাদকের টাকার জন্য সবুজ তার মাকে হত্যা করেছেন। শুধু মাদক সেবনই নয়, মাদক কারবারের সাথেও জড়িয়ে পড়ছেন তরুণ-তরুণীরা।
গত ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই তরুণীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ জহুরা বেগম, মেহেরুন নেছা মিম, মো. জালাল মৃধা ও নাসির উদ্দিন।
ডিএনসি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত জহুরা ও মিম নামের দুই তরুণী বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে কক্সবাজার থেকে বিমানযোগে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন। এরপর ফ্ল্যাগ সংযুক্ত দামি গাড়ি নিয়ে ওই ইয়াবার চালান অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও ধানমণ্ডিতে সরবরাহ করত। জহুরা ও মিম চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাদের একাধিক স্বামীও রয়েছে।
এছাড়া গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থেকে ইয়াবাসহ এক তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। কামরুন্নাহার আক্তার ওরফে নাহার ওরফে জহুরা নামের ওই তরুণী ৫ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে কাকরাইল ডায়মন্ড হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে অবস্থান করেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, ধণাঢ্য পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে সুন্দরী তরুণীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠায়। আবার অনেকেই ধণাঢ্য পরিবারের সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ইমো ও হোয়াটসআপের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করে। পরে সময় করে তাদের সাথে স্বাক্ষাৎ করে। এক পর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওইসব হোটেল বা স্পা সেন্টারে নিয়ে যায় টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে। সেখানে গিয়ে মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম করে। এ সময় গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে অনেকের ছবিও তুলে রাখা হয়। তবে মাঝে মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্পা সেন্টারে অভিযানের নামে আইওয়াশ করা হলে বিউটি পার্লার, বিভিন্ন আবাসিক ভবন, আবাসিক হোটেলে নিরাপদেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে অপরাধী চক্রের সদস্যরা।
সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানের ১২৩ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে একটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে স্পা সেন্টারের আড়ালে দীর্ঘ দিন থেকে অনৈতিক কার্যকলাপ চলছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে শুরুতেই তোপের মুখে পড়ে পুলিশ। পরে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছোট ছোট রুমে অনৈতিক কাজের প্রমাণ পায় পুলিশ। কেয়ারটেকার জানায়, অধিক অর্থের লোভে ফ্ল্যাট মালিকদের যোগসাজশে সেখানে চলে দেহব্যবসা। ওইদিন গুলশান ও বানানীতে তিনটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ২৮ তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, এসব স্পা সেন্টারে চলে মাদক সেবনও। বারবার অভিযান চালানো হলেও আইনি দুর্বলতার কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অপকর্ম।
ডিএমপির গুলশান জোনের এডিসি নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ভালো পরিবারের ছেলে যারা নিজেদের বাসায় মাদক সেবন করতে পারছে না, তারা এখানে আসছে। এসব জায়গা তারা বেছে নিয়েছে, প্রচলিত আইনানুসারে তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তবে এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন বা একমাস পর জামিনে মুক্ত হয়ে অন্যত্র যায় তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত ও জনবহুল এলাকায় আবাসিক ভবনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুর, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় এসব কর্মকাণ্ড পারচিলা করা হয়। এছাড়া কাকরাইল ফুটওভার ব্রিজের আশপাশ এলাকায় আবাসিক ভবনে বিভিন্ন নামে মিডিয়া সেন্টারে আড়ালে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলামোটর পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্সের পাশের গলিতে কয়েকটি বাসায় নিরাপদেই চলে মাদক সেবন ও অনৈতিক কাজ। এছাড়া বনশ্রী, মিরপুর, ধানমণ্ডি, উত্তরা, ফার্মগেট, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ এলাকায়ও এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।
এসব আস্তানায় বেশিরবাগ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে নিরাপদে মাদক সেবন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে তারা। রাজধানীতে এসব কাজে জড়িত প্রায় শতাধিক চক্র রয়েছে। একটি একটি চক্রে ৮ থেকে ১০ জন সদস্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, ওইসব চক্রের সদস্যরা গ্রুপভিক্তিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে একজন টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন। এমনকি ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এবং হোস্টেলে নবাগত শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। এক পর্যায়ে ওই বন্ধুদেরও এমন অপরাধে নিয়ে আসেন। এ সময় অপরাধ কর্মকাণ্ডের চিত্রও গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখা হয়। কোনো সময় যদি টিম লিডার বা গ্রুপের তথ্যের বাইরে গেলে তাকে গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি ওই গ্রুপের অপকর্ম যাতে কাউকে না বলে এ জন্য হুমকি দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যেসব তরুণ-তরুণী স্পাতে গিয়ে মাদক সেবন করেন তাদের মধ্যে কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমত তারা একাকি থাকতে ভালোবাসে। এছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কম কথা বলা, নিজের পরিচয় গোপন রেখে বন্ধুত্ব করা, সব সময় মিথ্যা কথা বলা, নিজের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দেয়া ইত্যাদি। এছাড়া এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে এবং অভিভাবকদের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তারা। কেউ কেউ টিউশনি, কেউ কেউ কোচিংয়ের কথা বলে অভিভাবকদের চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। আর দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ কিশোর ও তরুণ। মাদকাসক্তদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকে আসক্ত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, মাদকের প্রভাব বুঝতে পেরে আমাদের দফতরের মহাপরিচালক কয়েকটি অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছেন। এই প্ল্যান অনুযায়ি আমাদের অপারেশন, প্রচার-প্রচারনার কাজ চলছে। এছাড়া অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। এই প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।