চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
প্রতিবন্ধী বলতে আমরা তাদের বুঝি, যাদের দেহের কোনো অংশ বা তন্ত্র আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে, ক্ষণস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তবে প্রতিবন্ধীরা আমাদের মতো মানুষ ও মানবজাতির অংশ। তাঁদের আছে আমাদের মতো আত্মীয়-স্বজন-প্রিয়জন। তারা প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিভাবন্ধী নয়, বরং সাধারণ সুস্থ মানুষের মতো তাদেরও আছে প্রতিভা। অনেক সময় সুস্থ অপ্রতিবন্ধী মানুষের তুলনায় তারা হয় প্রতিভাবান ও তীক্ষ্ম মেধাবী। প্রতিবন্ধী হয়েও বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। নিম্নে কয়েকজন সফল প্রতিবন্ধীর জীবন নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করবো।
১. হযরত বেলাল (রা.)। তিনি ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী, কথা অস্পষ্ট হতো। তথাপি তিনি ছিলেন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে-মুয়াজ্জিন। রাসুলের মুয়াজ্জিন বলে যিনি পেয়েছিলেন অভিধা। হজরত বেলাল রা. ছিলেন সোনালী যুগের মুসলিম উম্মাহর মুয়াজ্জিন। মধুর কণ্ঠে আযান দিতেন। যে আজানের নজির নেই পৃথিবীর অন্য কোথাও। ২. আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম। তিনি ছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখে দেখতে পারতেন না, এর পরেও রাসূল সা. তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আজান দেওয়ার। এমনকি তার নামে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে।
৩. স্টিভেন উইলিয়াম হকিং। তিনি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। ২১ বছর বয়সে ওয়াক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আধ্যয়নকালীন অ্যামিওট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস)। ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কথা বলা ও চলার শক্তি হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে যান। তবুও বহু বছর যাবৎ তিনি তার গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক পুরস্কার তিনি তুলে নেন নিজের থলে।
৪. ক্রিস্টি ব্রাউন। তিনি বিখ্যাত আইরিশ লেখক। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়ে দুই হাত অসার হয়ে যায়। তথাপি থেমে থাকেনি তার স্বপ্ন। পায়ে টাইপ করে বইয়ের স্ক্রিপ্ট লিখতেন। তার আত্মজীবনী ‘মাই লেফ্ট ফুট’ বিশ্বে সাড়া জাগানো গ্রন্থ। এবং বাংলাভাষায় তাঁর অনুবাদ পাওয়া যায় ‘আমার বাম পা’ নামে।
৫. হেলেনা কেলার। আমেরিকার একজন খ্যাতনামা কৃতিবিদ্যা লেখিকা ও সমাজসেবী। জন্ম থেকেই তিনি দৃষ্টিহীন ও বধির ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ছয় বছর তখন বাবা-মা তাকে ওয়াশিংটনের প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী, টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শ গ্রহণের জন্য নিয়ে যান। তিনি হেলেন কেলারকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, হেলেন আর কোনো দিন চোখে দেখতে পাবে না এবং কানেও শুনতে পাবে না। শিশুকাল থেকেই হেলেন কেলার একাধারে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়ে বহুমুখী প্রতিবন্ধিত্ব নিয়েই বড় হতে থাকেন। এই প্রতিবন্ধকতা হেলেনা কেলার কে দমিয়ে রাখতে পারেনি, দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁর স্বপ্নকে।
১৯০৪ সালে হেলেনা প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ডিগ্রি অর্জনের আগেই তার আত্মজীবনী 'দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ' বইটি প্রকাশিত হয়। তিনি নানান প্রতিবন্ধিত্বে আক্রান্ত হওয়ার পরেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন তার মতো মানুষদের অনুপ্রাণিত করতে। নিজের মেধা ও প্রতিভায় তিনি পৌঁছে গেছেন সফলতার উচ্চ শিখরে।
সমাজ সেবা ও রাজনীতির অঙ্গনে কাজ করার পরেও সফলতার সাথে ১২টি গ্রন্থ রচনা করে তৈরী করেছেন বিশ্বে অনন্য নজির। তার মধ্যে হেলেনা কেলারের প্রধান বই হচ্ছে দি স্টোরি অফ মাই লাইফ (১৯০৩), লেট আস হ্যাভ ফেইথ, দি ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন (১৯০৮), ওপেন ডোর ইত্যাদি।
এমন তালিকা আরও দীর্ঘ হতে বাধ্য। প্রতিভাবান প্রতিবন্ধী অনকে মনীষা রয়েছেন, যারা নিজেদের মেধা দিয়ে পৌঁছে গেছেন সফলতার উচ্চ শিখরে। তাদের ও তাদের স্বপ্নকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে সফলতার সাথে ছুঁয়েছে নিজেদের অভিষ্ট লক্ষ্য। প্রতিবন্ধী হয়েও বিশ্ব বিখ্যাত হওয়া এই সকল মনীষীরা বাস্তব দৃষ্টান্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।