Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহ পাকের অফুরন্ত রহমত-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৫ পিএম

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের অফুরন্ত রহমতের কথা আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এবং এই পৃথিবীতে পুণ্যবান বান্দাহদের সার্বিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ও প্রদত্ত হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি উপদেশ দানের পর যাবুর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্ম পরায়ন বান্দাহগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে। নিশ্চয়ই এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্য পর্যাপ্ত বিষয় সম্ভাবের আয়োজন রয়েছে।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৫-১০৬)।

এই দুটি আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বেশ কয়েকটি সত্য দিক নির্দেশনার প্রতি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করেছেন, যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। যেমন, যাবুর কিতাব, নসীহত ও উপদেশ, আরদ অর্থাৎ পৃথিবী, পৃথিবীর মালিক বা অধিকারী হওয়া এবং এই দায়িত্ব পালন করবে সৎ কর্ম পরায়ন বান্দাহগণ ইত্যাদি। এ পর্যায়ে নির্দেশিত বিষয়বস্তুগুলোর সম্যক পরিচয় লাভ করা একান্ত দরকার। আসুন, এবার সে দিকে পর্যায়ক্রমে নজর দেয়া যাক।

(ক) যাবুর কিতাব : যাবুর শব্দটি বহু বচন। এর এক বচন হলো ‘যাবরুন’। যাবরুন অর্থ কিতাব, গ্রন্থ। হযরত দাউদ (আ.) এর ওপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম ও ছিল যাবুর। উপরোক্ত আয়াতেকারীমায় যাবুর বলতে কি নির্দেশ করা হয়েছে তৎসম্পর্কে বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, উপরোক্ত আয়াতে যিকির বলে তাওরাতকে বুঝানো হয়েছে। আর যাবুর বলে তাওরাতের পর অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থসমূহকে বুঝানো হয়েছে। যথা, ইঞ্জিল, যাবুর ও কোরআন। ইমাম দাহহাক থেকে এরূপই বর্ণিত আছে। (ইবনে জারীর তাবারী)।

আর হযরত ইবনে যায়েদ হতে বর্ণিত আছে, এখানে যিকির শব্দ-দ্বারা লাওহে মাহফুজ বুঝানো হয়েছে এবং যাবুর বলে পয়গাম্বরগণের প্রতি অবতীর্ণ সকল আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম বাজ্জাজ এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। (রুহুল মায়ানী)।

(খ) নসীহত ও উপদেশ : উপরোক্ত আয়াতে নসীহত ও উপদেশ বলতে সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআনকে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দিক হতে নসীহত ও উপদেশ আল কোরআনের মাধ্যমেই পূর্ণতা লাভ করেছে। এরপর পৃথিবীতে আর কোনো কিতাব নাজিল হবে না।

(গ) আরদ অর্থাৎ পৃথিবী : উপরোক্ত আয়াতে আরদ বলতে কি বোঝানো হয়েছে, এতদ সম্পর্কে কয়েকটি মতের সন্ধান পাওয়া যায়। (১) এখানে আরদ বলে জান্নাতের দুনিয়া বুঝানো হয়েছে। এই তফসীর ইবনে জারীর হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন।

তাছাড়া হযরত মুজাহিদ ইবনে যুবায়ের ইকরিমা সুদ্দী, আবুল আলীয়া থেকেও এই তফসীর বর্ণিত আছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বলেন : আল কোরআনের অন্য আয়াতও এর সমর্থন করে। ইরশাদ হয়েছে : ‘সৎ কর্মরায়ন বান্দাগণ এই পৃথিবীর মালিক হবে।’ এটা যেমন সুনিশ্চিত ঠিক তেমনই পৃথিবী বলতে জান্নাতের পৃথিবী বুঝানোও হতে পারে। কারণ, দুনিয়ার পৃথিবীর মালিক তো কাফের, মুমিন সবাই হয়ে যায়। আরো স্মরণ রাখা দরকার যে, এখানে সৎকর্ম পরায়নদের পৃথিবীর মালিক হওয়ার কথাটি কিয়ামতের আলোচনার পর উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়ামতের পর জান্নাতের পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো পৃথিবীর কোনো অস্তিত্বই নেই।

(২) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এখানে আরদ শব্দ দ্বারা সাধারণ পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে। এক সময় এককভাবে সৎ কর্মপরায়ন বান্দাগণ সারা দুনিয়ার মালিক হবে বলেও প্রতিশ্রæতি দেয়া আছে। আল্ কোরআনের একাধিক আয়াতে এই সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, ‘পৃথিবী আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা-এর মালিক বানান। আর শুভপরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্যই।’ অপর এক আয়াতে এসেছে : ‘মুমিন ও সৎ কর্মপরায়ন বান্দাহদেরকে আল্লাহপাক অঙ্গীকার দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা করবেন।’

অপর এক আয়াতে এসেছে : ‘নিশ্চয়ই আমি আমার পয়গাম্বরগণকে এবং মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে এবং কিয়ামতের দিন সাহায্য করব।’ আল্লাহপাকের এই সাহায্যের ফলেই ঈমানদার সৎ কর্মপরায়ন বান্দাহগণ একবার পৃথিবীর এক বৃহদংশ অধিকার ভুক্ত করেছিল। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় তাদের সেই বিজয়-বৈজয়ন্তীর কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে এবং পৃথিবীবাসী তা প্রত্যক্ষ করেছে। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাদের গড়া শান্তিময় পরিস্থিতি অটুট ছিল। শেষ যমানায় সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর শাসন আমলে আবার সেই পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। (তফসীর ইবনে কাসির ও তফসীরে রুহুল বয়ান)।

বস্তুত : সৎ কর্মপরায়নদের বিশ্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি আল্লাহর সাহায্য ও আল্লাহর রহমতেরই ফলশ্রæতিমাত্র। ইহা আল্লাহপাকের অফুরন্ত রহমতের একটি ঝলক বই কিছুই নয়। আল কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : পয়গাম্বর বললেন : ‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি ন্যায়নূগ ফায়সালা করেদিন, আর আমাদের পালনকর্তা তো দয়াময়, সহায়তাকারী, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত-১১২)। সুতরাং আল্লাহ পাকের অফুরন্ত রহমতের একটি ¯্রােতধারা যে অতি নিকটে চলে এসেছে, তা’ বলাই বাহুল্য।

 

 



 

Show all comments
  • Nusrat Faria ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমাকে ডাকো বা আমার কাছে চাও। আমি তোমার ডাকে সাড়া দিবো বা তোমার চাহিদা পূরণ করবো।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ রমিজ ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    মুসলিম বান্দার উচিত, ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, দেশে-প্রবাসে যে যেখানেই থাকুক, নিজ নিজ কর্ম সুন্দরভাবে সম্পাদনের জন্য দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন মনির ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাঁর নিকট সাহায্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
    একের পর এক বিপদ-মসিবত দ্বারা আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি। চারদিকে সব মানুষ হতাশা ও পেরেশানিতে নিমজ্জিত, সবার মনে প্রশ্ন? কবে এই বিপদ-মসিবত থেকে আমরা মুক্তি পাবো? আমরা যারা মুমিন মুসলমান, আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তায়ালার একান্ত রহমত ও দয়া ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়কোবাদ মিলন ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৩০ এএম says : 0
    আসুন আমাদের যার যা সামর্থ্য আছে তা নিয়ে প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন কে কেন সমস্যায় আছে খবর নেই, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও দয়া লাভ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন