পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির জেরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে কাজাখস্তানে। এনিয়ে দেশটির সরকারের ইতোমধ্যে পতন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি দমাতে দেশটিতে সেনা পাঠিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার কাজাখস্তানে আধাসামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধান শহর আলমাটিতে ডজনখানেক দাঙ্গাকারীকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের মাথা কেটে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩০০ জনের বেশি কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দমনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাজাখ পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনের ওপর হামলা চালাতে চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। গুলিতে ডজনখানেক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। কাজাখ পুলিশের মুখপাত্র সালতানেট আজিরবেক খবর ২৪ টেলিভিশনে বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশের বৃহত্তম শহর আলমাটিতে চরমপন্থী শক্তি রাতজুড়ে প্রশাসনিক ভবন ও পুলিশের বিভাগে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। তিনি আরো বলেন, ডজন খানেক হামলাকারীকে নির্মূল করা হয়েছে এবং তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে, ২০০ এর বেশি জনকে আটক করা হয়েছে। দেশটিতে গত শনিবার এলপিজির দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। এরপর দিন দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ মানজিস্তাউয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে এই বিক্ষোভ আলমাটিসহ দেশটির অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা আলমাটি শহরের থানাগুলো দখল করার চেষ্টা করার পর নিরাপত্তা বাহিনী এক অভিযান চালালে বেশ কিছু লোক নিহত হয়েছে। গত রোববার থেকে চলতে থাকা এ বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জন সদস্যও নিহত হয়, আহত হয় ৩৫৩ জন।
নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, দেশটির প্রধান শহর আলমাটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য এক অভিযান চালিয়ে তারা কয়েক ডজন সরকারবিরোধী দাঙ্গাকারীকে হত্যা করেছে। দেশটিতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাবার পর এ বিক্ষোভের সূচনা হলেও এর সাথে এখন রাজনৈতিক অসন্তোষও যুক্ত হয়েছে এবং তা কাজাখস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।
কাজাখ প্রেসিডেন্টের অনুরোধে রাশিয়া ‘দেশটিকে স্থিতিশীল করার জন্য’ সৈন্য পাঠাচ্ছে। রাশিয়া, কাজাখস্তান, বেলারুস, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও আরমেনিয়াকে নিয়ে গঠিত সিটিএসও নামে যে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি করা হয়েছে - তার অধীনেই রুশ সৈন্যদের পাঠানো হচ্ছে। রুশ সৈন্যদের একটি অগ্রবর্তী দল এর মধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন যে তিনি সিটিএসও সহায়তা চেয়েছেন। সিটিএসও -র বর্তমান চেয়ারম্যান আরমেনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান নিশ্চিত করেছেন যে ‘সীমিত সময়ের জন্য’ জোটের পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষী পাঠানো হবে।
প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ কাজাখস্তানে অসন্তোষের পেছনে ‘বিদেশের প্রশিক্ষণ পাওয়া সন্ত্রাসী গুÐাদল’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর মধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি এবং কারফিউ ও সভাসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে। আলমাটিতে পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন, বৃহস্পতিবার শহরের তিনটি প্রশাসনিক ভবনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, শহরের পুলিশ ভবনগুলোতে ঢোকার চেষ্টা চালানোর পর কয়েক ডজন আক্রমণকারীকে ‘নির্মূল’ করা হয়েছে। তিনি শহরের লোকদের ঘরে থাকতে বলেছেন। এই সহিংসতায় প্রায় ১ হাজার লোক আহত হয়েছে। হাসপাতালে ৪০০ লোককে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং ৬২ জন ইনটেনসিভ কেয়ারে আছেন।
এর আগে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার হুমকি দেন। তিনি এক টিভি ভাষণে বলেন, তিনি দেশটির সাবেক নেতা নূরসুলতান নাজারবায়েভের কাছ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে নেবেন। জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর বড় শহরগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এদিকে সিনহুয়া জানায়, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, চীন বিশ্বাস করে কাজাখ কর্তৃপক্ষ সা¤প্রতিক গণবিক্ষোভ সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারে। মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন একটি দৈনিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেছেন যে, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কাজাখস্তানে বড় আকারের দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে।
ওয়াং বলেন, ‘স¤প্রতি কাজাখস্তানে যা ঘটছে তা তার অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং চীন বিশ্বাস করে যে, কাজাখ কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে’। চীন এবং কাজাখস্তান বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং স্থায়ী ব্যাপক কৌশলগত অংশীদার উল্লেখ করে ওয়াং বলেন, চীন আশা করে, কাজাখস্তানের পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্থিতিশীল হবে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সূত্র : বিবিসি নিউজ, সিএনএন, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।