নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
নতুন বছরে নতুন শুরুর যে প্রত্যয় বুকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল, দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের শেষ সেশনেই ছিল তার ইঙ্গিত। লড়াকু মনোভাবে দ্বিতীয় দিনে ফেরার সেই অভিযান পেল পূর্ণতা। গত ২০ বছরে যা পারেনি অঅগের কোনো দল, নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্টে ব্যাটে-বলে ঝলমলে একটি দিনই কাটাল বাংলাদেশ। গতকাল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সকালের সেশনে বোলারদের দারুণ সাফল্য আর পরে মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং দৃঢ়তায় দুই দিন শেষে শক্ত অবস্থানে দল। দ্বিতীয় দিন শেষে রোববার প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১৭৫।
‘সে বাংলাদেশের পরবর্তী সুপারস্টার হবে’- টেস্টের আগের দিনই মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মুমিনুল হক। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দিনই নাকি মাহমুদুলের মধ্যে ভবিষ্যতের এক তারকাকে দেখতে পেয়েছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিন নম্বরে খেললেও টেস্ট দলে যাকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওপেনার, সেই মাহমুদুল ব্যাট হাতে উপহার দিয়েছেন দারুণ চমক। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে ধৈর্যশীল ও স্থিতধী ব্যাটিংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনীতে করেছেন প্রথম ফিফটি। দিন শেষ করেছেন ২১১ বলে ৭০ রান করে। নিউজিল্যান্ডে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ওপেনার খেলতে পারল ২০০ বল। মাহমুদুলের সঙ্গে শতরানের জুটির অংশীদার শান্ত ফেরেন ৬৪ রান করে। প্রায় ৪০ ওভার খেলে এই দুজনের জুটিতে রান আসে ১০৪।
মাহমুদুলকে বিদায় করার কিছু ‘হাফ চান্স’ কাজে লাগাতে না পারা নিউজিল্যান্ডের জন্য হয়তো সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে রিভিউ না নেওয়া। রিভিউ নিলেই ২০ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হতো মাহমুদুলকে। সেবারই শুধু নয়, ভাগ্যকে এ দিন বেশ কবারই পাশে পেয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী এই তরুণ। কয়েক দফায় একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল। কয়েকবার অল্পের জন্য ফিল্ডারের হাতে যায়নি ক্যাচ। দুয়েকবার বেঁচে যান ‘প্লেড অন’ হতে হতে। তবে তার কৃতিত্ব তাতে কমে যাচ্ছে না। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উইকেট আঁকড়ে রেখে তিনি ধরে রাখেন দলের হাল। সফল হ্যান্ডে খেলে তার বাউন্স সামলানোর দক্ষতাও ছিল দেখার মতো।
দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দৃঢ়তার আগে দিনের শুরুতে সুরটা বেঁধে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে শুরু করে নিউজিল্যান্ড যোগ করতে পারে আর কেবল ৭০ রান। ৩২৮ রানে অলআউট হয় কিউইরা, দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে যা তাদের সর্বনিম্ন। দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এক পর্যায়ে হ্যাটট্রিকের আশাও জাগান এই অফ স্পিনার। তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। আগের দিন দুই উইকেট নেওয়া শরিফুল ইসলাম এ দিন নেন আরেকটি।
আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ানকে আউট করা মুমিনুল এদিন বিদায় করেন হেনরি নিকোলসকে। তার ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সৌম্য সরকারের চার ক্যাচের রেকর্ড স্পর্শ করেন সাদমান ইসলাম। এরপর বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম সেশনের ৩ ওভার কাটিয়ে দেওয়া। সেটায় উতরে যাওয়া সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল দ্বিতীয় শেষ সেশনের প্রথম ঘণ্টাও নিরাপদে পার করে দেন। ১৮ ওভার খেলে ফেলা জুটিকে পানি পানের বিরতির পর প্রথম বলেই বিচ্ছিন্ন করেন নিল ওয়াগনার। ৪৩ রানের জুটি থামে সাদমানের (২২) বিদায়ে। এই পেসারেরই পরের ওভারে নিউজিল্যান্ড রিভিউ নিলে ফিরে যেতে হতো মাহমুদুলকেও। তার রান ছিল ২০। শুরুতে একটু ভোগান্তি হলেও পর ছন্দে ফিরেন শান্ত। মাহমুদুলের সঙ্গে গড়ে তোলেন জুটি। দুই জনের দৃঢ়তায় আর কোনো উইকেট না হারিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে ৬৫ রান যোগ করা সফরকারীরা তৃতীয় সেশনে শান্তর উইকেট হারিয়ে যোগ করে ১০৫ রান।
প্রথম ওভারে বোল্টকে চার মেরে শুরু, ৯০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন রাচিন রবীন্দ্রকে সøগ সুইপে ছক্কা মেরে। জয়ের সাথে জুটির রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ২২৬ বলে। পরে ওয়াগনারের ফাঁদে পা দিয়ে ১০৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রানে ফেরেন শান্ত। রবীন্দ্রর বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৬৫ রান বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মাহমুদুল। দুয়েকটি নার্ভাস মুহূর্ত তার এসেছে ফিফটির পরও। তবে হাল ছাড়েননি। মুমিনুল হকের সঙ্গে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন নিরাপদে। শান্তকে হারানোর পরও তাই বাংলাদেশের তৃপ্তি দারুণ একটি দিন কাটানোর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২৫৮/৫) ১০৮.১ ওভারে ৩২৮ (নিকোলস ৭৫, রবীন্দ্র ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, বোল্ট ৯*; তাসকিন ০/৭৭, শরিফুল ৩/৬৯, ইবাদত ১/৭৫, মিরাজ ৩/৮৬, মুমিনুল ২/৬)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬৭ ওভারে ১৭৫/২ (সাদমান ২২, মাহমুদুল ৭০*, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮*; সাউদি ০/৪১, বোল্ট ০/৩৭, জেমিসন ০/৩৫, ওয়াগনার ২/২৭, রবীন্দ্র ০/২৬)। দ্বিতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।