Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে সময় গুরুত্বপূর্ণ

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হলো সময়। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এই নেয়ামতটির যথার্থ মূল্যায়নের প্রতি বিশেষ তাগিদ ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আজ থেকে নতুন বছর শরু হতে যাচ্ছে। এখন থেকে আমরা নিয়ত করি আগামীর দিনগুলো ভালো ও উত্তম কাজে ব্যয় করতে পারি। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হলো সময়। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সূরা আসর: ১-৩)। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান হলো যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা হলো যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪)। পরকালে মানুষকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬)।
পরকালে মানুষ যে বিষয়ে সবচেয়ে অনুতপ্ত হবে তা হলো, অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার না করা। নেক আমল করলে বান্দার অবস্থার উন্নয়ন হবে, বদ আমল করলে তার অবনতি হবে। আমল ছাড়া সময় পার করলে তার জন্য প্রকারান্তরে ক্ষতি হিসেবেই গণ্য হবে। উদাসীনতা বা সময়ের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে সাবধান করে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিসমূহ দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারো বলি, এটি মোটেই সমীচীন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে সব নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা ১০২ তাকাছুর, আয়াত: ১-৮)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সময়ের সঠিক ব্যবহার করার তৌফিক দিন। আমিন।

ঢাকা শেওড়াপাড়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ইংরেজি নববর্ষের সূচনাকালে মুসলিম জাতির করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়েমনো বাক্যে তাওবা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘হে রাসূল বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের ওপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আল-যুমার: ৫৩)। রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী গুনাহমুক্ত ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যায়।’ খতিব বলেন, ২০২২ সালের নতুন বছরের সফলতার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমাদের প্রভু বলেন তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (সূরা আল মু’মিন: ৬০)। সার্বিক জীবনে ইসলামি নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ।’ (সূরা আল বাকারা: ২০৮)। আল্লাহ আমাদেরকে গুনামুক্ত জীবন দান করুন। আমিন।

ঢাকার মানিক নগর সর্দারবাড়ি জামে মসজিদের খতিব মুফতি জাবের কাসেমী গতকাল খুৎবার বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, বিগত বছরটি আমাদের জীবনের অন্যান্য বছরের মতো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত ছিল। এই নেয়ামত থেকে কতটুকু আল্লাহর আনুগত্যে এবং মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে আর কতটুকু আল্লাহর নাফরমানিতে ও মানুষের অকল্যাণে ব্যয় হয়েছে তার হিসাব নেয়া উচিত। সুতরাং যতটুকু আল্লাহর আনুগত্যে ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে তার জন্য শোকরিয়া আদায় করে আলহামদুলিল্লাহ বলা। আর যতটুকু তার নাফরমানিতে ব্যয় হয়েছে তার জন্য ইস্তেগফার বা ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হয় বর্তমানে আমাদের অনেকেই নিজের বিগত বছরের হিসেব বাদ দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে নতুন বর্ষ বরণ করার জন্য শিরক নাচ গান মদ ইত্যাদি গুনার কাজে লিপ্ত হয়। আসুন বিজাতীয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে নিজের জীবনের হিসাব নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, বর্তমান সময়ে মুসলমানদের সীমাহীন মতানৈক্য সুস্পষ্ট ফিৎনা। যা কিনা কেয়ামতের আলামত। ফেৎনার জামানা শুরু হয়ে গেছে। অমুসলিমদের ফিৎনা ইসলামে সুস্পষ্ট যা কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে আমাদের নিকট পরিষ্কার। কিন্ত মুসলমানদের শতধা বিভক্তি ও ফেরকা ইসলামের নামে যা চালানো হচ্ছে তা আজ চক্ষুষ্মানদের নিকট সুষ্পষ্টভাবে বড় আকারের ফিৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাও সুষ্পষ্ট কেয়ামতের আলামত। এসময় ঈমান ও আমল রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে রাসূল (সা.) মুসলমানদের সতর্ক করেছেন। কোরআনুল কারীমের সূরা আনআমের ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে তোমরা জেনে রেখো একমাএ এটাই (ইসলামই যা আমি আমার রাসূলের নিকট পাঠিয়েছি) সরল সঠিক পথ। তোমরা শুধু তাই অনুসরণ করবে। এতদ্ভিন্ন বিভিন্ন মত ও পথ তোমরা অনুসরণ করবে না। যদি কর তাহলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।’ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক বিদা’ত ও সুবিধাবাদী স্বার্থপর মুনাফিক বর্ণ চোরাদের খপ্পর থেকে ঈমান রক্ষার জেহাদে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা-পূর্ব বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ