২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এটি আর কোন গোপন কথা নয় যে আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় মানসিক চাপ সবার নিত্যসঙ্গী। দিনের বেলায় অনেকেই যখন রাগান্বিত থাকেন বা দুঃশ্চিন্তাগ্রন্থ থাকেন তখন অবচেতন মনে দাঁত কামড়ান। ডাক্তারী ভাষায় দাঁত কামড়ানোকে ব্রুকসিজম বলা হয়। ঘুমের মধ্যেও অনেকেরই দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস রয়েছে যা স্লিপ ব্রুকসিজম নামে পরিচিত। শিশুরা ঘুমের
মধ্যে দাঁত কামড়ালে অনেক অভিভাবকই চিকিৎসকের নিকট এসে বলেন শিশুর পেটে কৃমি হয়েছে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও শিশুদের কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করিয়ে থাকেন। আসলে দাঁত কামড়ানোর সাথে পেটে কৃমি থাকার কোন ধরণের সম্পর্কই নেই। তবে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম বলে শিশুদের বা বড়দের এমনিতেই কৃমি থাকতে পারে। দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস খুব অল্প হলে এটি তেমন কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু যদি অনবরত বা মাত্রাতিরিক্ত দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকে তাহলে এ অবস্থা থেকে চোয়ালের সমস্যা, মাথা ব্যথা, দাঁতের ক্ষয় এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। স্লিপ ব্রুকসিজম যাদের রয়েছে, সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত তারা এ সম্পর্কে অনেক সময়ই অবগত হন না। তাই পাশে থাকা প্রিয়জনদের একে অন্যের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।
ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানোর লক্ষণসমূহ:
* দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ অনেক সময় পাশে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে পর্যন্ত জাগিয়ে দিতে পারে।
*দাঁতের উপরিভাগ ক্ষয় হয়ে সমান হয়ে যাওয়া।
* দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলে যাওয়া।
* দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া।
* চোয়ালের ব্যথা অথবা চোয়ালের মাংশপেশী শক্ত অনুভব করা।
* কানে ব্যাথ্যাঃ- ক্রমাগত চোয়ালের মাংশপেশীর সংকোচনের কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, কানের সমস্যার কারণে এমন হয়েছে।
* সকাল বেলা হালকা মাথা ব্যথা হতে পারে।
* মুখে ব্যথা হতে পারে।
ব্রুকসিজম এর কারণসমূহ:
* যদি প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে উপরের এবং নীচের চোয়ালের অবস্থান যথাযথ না হয়।
* প্রায়ই দেখা যায় মানসিক চাপ ব্রুকসিজম সৃষ্টি করে। যেমন ক) দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, ভীতি। খ) অবদমিত রাগ ও হতাশা। গ) অতি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, আক্রমণাত্মক, অতিচঞ্চল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে।
* শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানো গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট এর সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।
* গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন শিশুদের ক্ষেত্রে দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস হয়ে থাকে এজন্যই যে তাদের উপরের এবং নীচের দাঁত সব সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
* অন্যরা মনে করেন শিশুরা দাঁত কামড়ায় ভয়, রাগ, এলার্জিজনিত সমস্যা থেকে।
* এছাড়া কান বা দাঁতের ব্যথা থেকেও শিশুরা এমনটি করতে পারে।
* শতকরা ৩০ ভাগ শিশুদের ৫ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে ব্রুকসিজম দেখা দিয়ে থাকে। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে যাদের সেরিব্রাল পালসি এবং মারাত্মক মানসিক চাপ বা দাঁতের সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয় না।
* পারকিনসনস্ রোগের জটিলতা হিসাবেও ব্রুকসিজম দেখা যেতে পারে।
* বিষন্নতানাশক ঔষধসহ মানসিক রোগের অন্যান্য ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও কমক্ষেত্রে ব্রুকসিজম দেখা যেতে পারে।
* ক্যাফেইন, টোবাকো, কোকেন, এম্ফিটামিন বা ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনের কারণে ব্রুকসিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* স্নায়ুর প্রদাহের কারণে ব্রুকসিজম হতে পারে। ব্রুকসিজম হলে আপনার উপরের পাটি ও নিচের পাটির সবগুলো দাঁত বাধানোর ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, আপনার দাঁত বাধানো যাবে না। এছাড়া আপনার ব্রুকসিজমের অভ্যাস থাকলে এবং তা পরিত্যাগ করতে না পারলে দাঁতের ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমস্যা দেখা দিবে। তাই এই বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। ব্রুকসিজম থাকলে এবং পাশাপাশি আপনার দাঁত যদি যথাস্থানে না উঠে থাকে তবে সেক্ষেত্রে যথাযথ কামড় বা বাইট না পড়ার কারনে আপনার মুখের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেনে আঘাত লেগে মুখের আলসার হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সাথে সমস্যা সমাধান করতে হবে। মুখের আলসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় টুথ গ্রাইন্ডিং বা দাঁত সামান্য ঘষে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, আদৌ টুথ গ্রাইন্ডিং এর প্রয়োজন আছে কি না? বা বিকল্প কোনো উপায়ে সমস্যা সমাধান করা যায় কি না? তাই এসব ক্ষেত্রে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিয়ে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করে তবেই একটি সঠিক সিদ্ধান্তে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
ব্রুকসিজমের চিকিৎসা: শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস দেখা যেতে পারে। সাধারণত ১০ বছর বয়সের মধ্যে ভাল হযে যায়। তবে অন্য কোন রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সবার জন্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুঃশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে হবে। নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে প্রস্রাবের বেগ থাকলে প্রস্রাব করে ঘুমোতে যেতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। রোগীর অবস্থাভেদে মানষিক চাপ মুক্ত করার জন্য কিছু বিষন্নতানাশক অথবা ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, সব রোগীর জন্য একই ঔষধ প্রয়োগ করা যায় না, যদিও রোগের ধরন একই। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা গ্রহণ করবে না। নিজ থেকে কোনো ঘুমের ঔষধ সেবন করবেন না।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ডেন্টাল কেয়ার
মিরপুর-১৪ ব্যাটালিয়ন বউ বাজার, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।