পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। উন্নয়নের নানান প্রকল্পে ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হয়। জাতীয় সংসদে অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণে জমির দাম বাজার দরের চেয়ে তিনগুন বাড়িয়ে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন-২০২৭’ পাস করে। অধিগ্রহণের সময়সীমা, জমির মূল্য নির্ধারণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সে অর্থ প্রদানের সময়সীমা আইনে বেঁধে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা কী আইনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে জমির মূল্য পাচ্ছেন? নাকি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্তরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন? এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি ছাপা হলো।
বর্তমান সরকার উন্নয়নমুখি। নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নাগরিকদের কেউ যাতে জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে লক্ষ্যে সংসদে আইন পাস করে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য তিনগুন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য দ্রুত পায় সে লক্ষ্যে আইন করা হয়। কিন্তু অধিগ্রহণের জমির মূল্য দ্রুত পাওয়া দূরের কথা টাকা পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে জমির মালিকদের। এ নিয়ে ভুক্তোভোগীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন-২০১৭ পাস হয়। আইনের ৮ ধারার (৪) উপধারার (৩) এ বলা হয়েছে প্রাক্কলন প্রাপ্তির ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থার ক্ষতিপূরণের মঞ্জুরির অর্থ নির্ধারিত পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা প্রদান করিতে হইবে’। আর আইনের ১১ (১) ধারায় বলা হয়েছে ‘ধারা ৮ এর অধীন রোয়েদাদ প্রস্তুতের পর দখল গ্রহণের পূর্বে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক ধারা ৮ এর উপধারা (৩) অনুসারে প্রস্তুতকৃত ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা প্রদাণের অনধিক ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক উক্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ উপধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করিবেন’।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সুবিধা দিতে সরকার প্রশংসনীয় আইন করলেও তার কার্যকারিতায় আমলাদের অনিহা। ২০১৭ সালে আইন পাস করার পর হাজার হাজার মানুষের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কম ক্ষতিগ্রস্তই নির্ধারিত সময়ে টাকা পেয়েছেন। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য অনেকেই স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি, আবেগজড়িত জমি সরকারকে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু দায়িত্বশীল কিছু আমলার হেয়ালিপনার কারণে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পেতে ভুক্তোভোগীদের বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশের উন্নয়ন কাজের জন্য হাজার হাজার জমি অধিদগ্রহণ করেছে। অনেক জেলায় জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা টাকা পেলেও ঢাকা জেলা এবং গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা পাচ্ছেন না। নিজের স্মৃতিবিজড়িত জমি সরকারের উন্নয়ন কাজের অধিগ্রহণে দিয়ে টাকা পেতে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে হয়রানির শিকার মালিকরা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেয়ার জন্য বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবুও মিলছে না ক্ষতিপূরণের টাকা। আবার রাজধানীর গেন্ডারিয়ার এলাকায় ডিআইটির প্রকল্পের অধিগ্রহণের বাইরের জন্য ৬০ বছরে ধরে অবমুক্ত করেনি ঢাকা জেলা প্রশাসক। গাজীপুর মহানগরে অধিগ্রহণ ছাড়াই অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জমির মালিকদের কি হবে তা কেউ বলতে পারছে না। ভুক্তভোগীরা জানান, তারা জেলা প্রশাসকের কাছে গেলে ডিসি বলে দেন, আমরা জানি না। উন্নয়ন কাজ হচ্ছে টাকা কিসের। ক্ষতিপূরণ চেয়ে অনেকই উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন তবুও মিলছে না টাকা। এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ আইন বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭ সালে পাস হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান ও সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ইনকিলাবকে বলেন, যখন জমি অধিগ্রহণ হয় তার আগেই আমরা ডিসির অনুক‚লে টাকা দিয়ে থাকি। ডিসি জমির মালিকদের তালিকা যাচাইবাচাই করে টাকা বিতরণ করেন। এখানে আমাদের করার কিছু থাকে না। তারপর রাজধানীর ভাটারা থানার তিনশত ফিটের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু টাকা ডিসিকে দেয়া হয়েছে। নতুন করে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে চ‚ড়ান্ত অনুমোদন হলে তখন ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে জমির মালিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অথচ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বলে জানা গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে মামলা এল এ কেস ২৩টি এবং ৪০৮৯টি আবেদন সমাধন করতে পারেনি। তবে ১৭৮টি আবেদনের ক্ষতিপূরণ দিতে পেয়েছে বলে জেলা প্রশাসকরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তথ্য দিয়েছে। এদিকে দেশের ৮ বিভাগে মোট জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, ৬৩৫৫৩৩.০০৮৭ একর। অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১২ লাখ ৭ হাজার ৩৯ জন এর বিপরীতে ভ‚মি অধিগ্রহণ মামলা রয়েছে ৩২ হাজার ৬৪৫টি। গত অক্টোবর মাসে পর্যন্ত ২ হাজার ৮০১টি ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে. ঢাকা মহানগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি, অবৈধ দখল থেকে লেক উদ্ধারসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১০ সালে শুরু করা হয়েছে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে; কিন্তু তা হয়নি। তারপর খরচ বাড়ানো ছাড়া এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৪ বার। তবুও এ প্রকল্পের কাজ হয়নি। পঞ্চমবারের মতো এবার ৪ বছর সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এতদিন কেবল সময় বাড়ানোর দাবি করলেও এখন খরচ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজউক এমন খরচ ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে অথচ এখনো জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। প্রকল্পটির এতদিন বাস্তবায়নের খরচ ছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
এ প্রকল্পে আগে যা ছিল তা সংশোধন করে ৮২ দশমিক ৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ, ২০ হাজার ৫৫২ দশমিক ১৭ রানিং মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩১ দশমিক ১৩ ঘন মিটার মাটি ভরাট, ৩৭৩ দশমিক ৪৮ রানিং মিটার কজওয়ে নির্মাণ, ৫ হাজার ২১৮ দশমিক ৩২ রানিং মিটার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ, ২ হাজার ৫০০ রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ, ৬৯ হাজার ৬১ বর্গমিটার গ্রাস টার্ফিং, ৮ লাখ ৯২ হাজার ৭২৭ দশমিক ৪৪ ঘনমিটার লেক খনন, একশটি সীমানা পিলার নির্মাণ, ৪ হাজার গাছ রোপণ ও পরামর্শক সেবা গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা দীর্ঘ ৭ বছর থেকে টাকা পাচ্ছে না। আবার ভ‚মি উন্নয়ন করও দিতে পারছে না। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে ঢাকা জেলায় সব চেয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সবসময় বেশি থাকে। এখনে সরকারি বিধি মোতাবেক ভ‚মির মালিকদের টাকা দেয়া হচ্ছে। যখন যে প্রকল্পের টাকা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোকে আগে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এরইমধ্যে আমরা তিনশত ফিটের ক্ষতিপূরণের জন্য রাজউক থেকে একটা বরাদ্দ পেয়েছি। তা বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রাজাধানী গুলশান এলাকার জমির মালিক মো. নেহাজ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমার জমি ২০১৫ সালে অধিগ্রহণ করেছে রাজউকের নামে। কিন্তু ৩, ৫ ও ৭ ধারা জারি করা পর ডিসি অফিস থেকে টাকা পাচ্ছি না। আবার বাকি অংশ জমির খাজনাও দিতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কেউ মানছে না। আমি ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য একবার ডিসি অফিস আর একবার রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।