নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প‚র্ব নির্ধারিত ফিকশ্চার ভেঙ্গে ভেন্যু পরিবর্তন, সূচির ধারাবাহিকতা লংঘন, মাঠকর্মীদের অবহেলায় ম্যাচ পিছিয়ে দেয়া, এক ভেন্যুতে টানা ২ দিন অপেক্ষার পরও মাঠে ম্যাচ না গড়ানোয় পয়েন্ট করে ভাগাভাগি করে নেয়া- এমন বিস্তর অভিযোগে ঠাঁসা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট। তবে সবচাইতে গুরুতর অভিযোগ মেলে মাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে। ‘বিশেষ’ কোনো ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই তারা এমনটা করে থাকেন বলে অভিযোগ প্রতিপক্ষ শিবির থেকে।
চলতি বছরের ১৩ জুন এমনই এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের গোড়াপত্তন হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) এক ম্যাচকে কেন্দ্র করে। চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ঐ ম্যাচে ভুল আম্পায়ারিংয়ে মেজাজ হারিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সেই ঘটনায় সাকিবের শাস্তি হলেও আম্পায়ারিংয়ের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ জানায় বিসিবি। গঠিত হয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিও। সেই কমিটির একজন বোর্ড পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় তদন্তের আগেই আভাষ দেন বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের। আবাহনীর ম্যাচগুলোতে ঘুরেফিরে কম অভিজ্ঞ আম্পায়ারদের দায়িত্ব প্রদান, টানা ৭ ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে কোনো এলবিডবিøউ না থাকা- ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল বিসিবিকেও। সেই চ্যালেঞ্জকে দমনের লক্ষ্য নিয়েই আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানের গুরু দায়িত্ব হাতে তুলেছেন প্রথমবারের মত বিসিবি পরিচালক নির্বাচিত হওয়া জ্যেষ্ঠ ক্রিকেট সংগঠক ইফতেখার রহমান মিঠু।
বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের ক্রিকেটের আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন, জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। গতপরশু আনুষ্ঠানিতভাবে দায়িত্ব পেয়েই পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মিঠু। আম্পায়ার কমিটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জানান, তার অধীনে আম্পায়ারিংয়ে ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল দেখা যাবে না, ‘আমি ঘোষণা করছি, ক্লাব বা কারও চাপে এখন আম্পায়ারিংয়ে ত্রæটি হবে না, অন্তত আমি থাকাকালে। এই সাপোর্ট আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দিব। আম্পায়ারদের আই টেস্ট করাতে হবে, হিয়ারিং টেস্ট করাতে হবে। এসব নিয়ে নতুন করে সুগঠিত করতে হবে।’
পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের পেছনে আছে ক্লাবগুলোর প্রভাব বিস্তারের নিন্দনীয় চর্চা। ঘোষণা দিয়ে আম্পায়ারিংয়ের ত্রæটি দ‚র করা তাই সহজ কাজ নয়। মিঠুও তা মানছেন। তিনি নিজেও ক্লাব ক্রিকেটে সঙংগঠকের ভ‚মিকায় আছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। মিঠু বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। কারণ গত কিছু বছর ধরে আম্পায়ারিং একটা বার্নিং ইস্যু ছিল। সবার সাথে কথা বলে সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সবকিছুরই তো সমাধানের একটা উপায় আছে। প‚র্ণ মনোযোগ দিয়ে সেটাই করব।’
শুধু পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং নয়, একইসাথে ভুল আম্পায়ারিং বন্ধের জন্যও সচেষ্ট থাকবেন বলে জানিয়েছেন মিঠু। সেজন্য গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সব পর্যায় থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। এছাড়া সাবেক ক্রিকেটারদের আম্পায়ারিং পেশায় যুক্ত করার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, এতে দেশের আম্পায়ারিংয়ের মান বৃদ্ধি পাবে, ‘খারাপ সিদ্ধান্ত দুই রকমের হয়। একটা ইচ্ছাকৃত, একটা ভুল। আম্পায়াররা ভুল সিদ্ধান্ত দেয় ধরে নিলাম, সেটা শুধরাতে নানান ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছে। আরও উন্নত করব। কিছু খেলোয়াড়কে যুক্ত করার চেষ্টা করব। খেলোয়াড়রা আম্পায়ারিংয়ে আসলে অটোমেটিক আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নত হবে। আমরা গণমাধ্যমের কাছ থেকেও পরামর্শ নিব। এটা তো রকেট সাইন্স না। সবাই পরামর্শ দিতে পারবে। সমস্যা সমাধানের জন্য গভীরে যেতে হয়। আমার প্রথম কাজই হল সমস্যা খুঁজে বের করা। আমার প্রথম ১৫ দিনের কাজ হল সমস্যাগুলোর তালিকা তৈরি করা।’
বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি মিঠুর বেশ কাছের বন্ধু। ভারতের সাবেক ও অন্যতম সফল এই অধিনায়ক তার আত্মজীবনীতে মিঠুকে উল্লেখ করেছিলেন ‘পরিবারের একজন’ হিসেবে। মিঠু দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব ফিয়ার ফাইটার্স থেকে বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময়ও ছিল সৌরভের সমর্থন। সৌরভের বোর্ডের অধীনে নিজেদের গড়ে তোলা ভারতের আম্পায়াররা বৈশ্বিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারলেও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন আম্পায়ারও আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করতে পারেননি। আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নতির জন্য সৌরভের সহায়তা নেবেন মিঠু, প্রয়োজনে দ্বারস্থ হবেন আইসিসিরও, কিংবা আম্পায়ারিংয়ে সফলতা দেখানো অন্যান্য দেশের, ‘শুধু সৌরভ গাঙ্গুলি নয়, দরকার হলে অস্ট্রেলিয়া, আইসিসি থেকে সহায়তা নিয়ে কাজ করব। গাইডলাইন পাল্টাতে হলে পাল্টাব। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। যতটা নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।’
পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং নিয়ে মিডিয়ায় প্রচারিত, প্রকাশিত অভিযোগ শুনতে শুনতে বহুবারই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। এবার নতুন কমিটির অধীনে সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পায় কি-না দেশের ক্রিকেট, সেটিই দেখার!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।