পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর যেখানে সেখানে বিশেষ করে রাস্তার দু’পাশে, মার্কেট বা শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিং সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব জায়গায় গাড়ি রাখা বৈধ ও সঙ্গত না হলেও এই কারবারটি দিব্যি চলছে। ভবন ও মার্কেটের নিজস্ব পার্কিং প্লেস থাকার কথা, সেখানে ভবন ও মার্কেটসংশ্লিষ্ট গাড়িগুলো রাখা যেতে পারে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর অধিকাংশ ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। যেসব মার্কেট বা শপিংমলে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানেও দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় পার্কিং প্লেস ছোট বা অপরিসর। এমতাবস্থায়, ভবন বা মার্কেটসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ গাড়ি রাস্তার পাশে ও ভবন-মার্কেটের সামনে পার্ক করে রাখা হয়। এতে যাতায়াতে যেমন বিঘ্ন ঘটে, তেমনি যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে রাজধানীর রাস্তাঘাট প্রায়ই অচলাবস্থার শিকার হয়। ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে একঘণ্টা-দেড়ঘণ্টাও কখনো কখনো পার হয়ে যায়। রাজধানীর যানজটে প্রতি বছর কত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, কত আর্থিক ক্ষতি হয়, তার বিবরণ-পরিসংখ্যান প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা তো অশেষ, যার তুলনা হয় না। গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে যানজট কিছুটা হলেও উপশম হতো। বলে রাখা উচিৎ, অবৈধ গাড়ি পার্কিংই যানজটের একমাত্র কারণ নয়। অন্য আরো অনেক কারণ রয়েছে। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য, অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রাখাসহ দোকানপাটের রাস্তামুখী প্রসারণ ইত্যাদিও এর জন্য দায়ী। সম্প্রতিকালে বিকাল থেকেই রাস্তায় ভ্যানে করে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রী হতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে ভ্যানের পর ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীদের যাতায়াত ও যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যানজট প্রায়শই এমন প্রকট আকার ধারণ করছে যে, মধ্যরাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকছে।
রাজধানীতে সমস্যার কোনো শেষ নেই। এর মধ্যে যানজটের কথা বিশেষভাবে বলা যায়। ইতোপূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি, অবৈধ পার্কিং, রাস্তা দখল ইত্যাদি এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া যানবাহনের আধিক্য, রিকশাসহ ত্রিচক্রযানের অবাধ চলাচলও দায়ী। ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতাসহ সড়ক ব্যবস্থাপনার দৈন্যের কথাও এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। সুচারু ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে যা বুঝায়, তার লেশমাত্র এখানে নেই। সড়কেও নেই কোনো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর, তাদের অবহেলা-অকর্মণ্যতা সীমাহীন। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা এত বেশি যে, অনেক সময় পা ফেলারও জায়গা থাকে না। সব দেশে, সব শহরে রাস্তা ও গাড়ির একটি গ্রহণযোগ্য অনুপাত আছে। কিন্তু ঢাকায় সেটা নেই। এখানে রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। এরপরও প্রতিদিন শতাধিক নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কী অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যানজট নিরসনে একের পর এক ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে। তাতে যানজট এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েছে। যানজট অবসানের লক্ষ্যে মেট্রোরেলসহ আরো কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব প্রকল্প কার্যকর হওয়ার পরও যানজট নিরসিত হবে, এমন দাবি করা যায় না। তাদের মতে, যানজটের কবলে থেকে নগরজীবনকে রেহাই দিতে, সময় ও অর্থক্ষতি নিরোধ করতে রাস্তা দখলমুক্ত করাসহ রাস্তা ও গাড়ির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, রাস্তা, পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ইত্যাদি অপরিহার্য। এইসঙ্গে জনচাপ কমানোও দরকার। এগুলো করা সম্ভব হলে রাজধানী সব সময় সচল থাকবে। জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি আরো গতিশীলতা লাভ করবে।
রাজধানীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আলাদা আলাদা অথবা সমন্বিত বা যুগপৎভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের যে সমস্যা, তার সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা দায়িত্বটি তাদেরই। প্রতিটি ভবন, মার্কেট ও শপিংমলের নিজস্ব পার্কিং প্লেস থাকতে হবে, না থাকলে নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন অংশে সাধারণ পার্কিং প্লেস গড়ে তুলতে হবে, যাতে কোনো গাড়িই পথের বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বহুতল পার্কিং ভবন নির্মাণের কথা ছিল। দু’য়েকটি ভবন নির্মাণের কথাও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু গাড়ির মালিকরা সেখানে গাড়ি রাখতে আগ্রহ দেখাননি। পরিকল্পনাটি নানা কারণে পরে আর বাস্তবায়িত হয়নি। ওই পরিকল্পনাটিই সামনে রাখা যেতে পারে, সংশোধন ও পরিবর্তন করা যেতে পারে এবং বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। মোটকথা, অবৈধ গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। ভবন ও মার্কেট মালিকদের গাড়ি পার্কিং প্লেসের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করতে হবে। অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে গাড়ির মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব পদক্ষেপ নেয়া গেলে অবৈধ পার্কিং দ্রæত কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।