Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন নির্বাসনে

তৈমূর আলম খন্দকার | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ভাত ও ভোটের এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্পদের সুষম বণ্টনের পরিবর্তে ধনীরা দিন দিন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। মধ্যবিত্তরা হচ্ছে দরিদ্র। আর দরিদ্র হচ্ছে হতদরিদ্র। যার ২০০ বিঘা জমি ছিল সে হাজার বিঘা জমির মালিক বনে গেছে। যার ৫-১০ বিঘা জমি ছিল, সে অভাবের তাড়নায় জমিজমা বিক্রি করে হয়েছে হতদরিদ্র। সপরিবারে স্থান হয়েছে বস্তিতে। ভোটের অধিকার পরিণত হয়েছে ‘প্রতিদ্ব›িদ্বতাবিহীন নির্বাচনী সংস্কৃতিতে’। অর্থাৎ নির্বাচন নামের একটি আনুষ্ঠানিকতা থাকবে, কিন্তু প্রতিদ্ব›িদ্বতা থাকবে না। এতে জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়ে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যালট বাক্স ব্যালটে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

সংবিধান মোতাবেক জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে পরিচালিত হওয়ার বিধিবদ্ধ নিয়ম থাকলেও বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন নামক পদ্ধতি প্রায় নির্বাসিত। নির্বাচন শব্দটির জায়গা এখন শুধু পত্রিকার পাতায়, আমলাদের প্রতিবেদনে এবং নির্বাচন কমিশনারের মুখে মুখে। অর্থাৎ কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ক্ষমতার বদৌলতে ব্যালটকে যে যেভাবে খুশি ব্যবহার করছে। ব্যালটের মালিক ‘জনগণ’ এখন বনবাসে। কারণ ভোটারের ব্যালট কোথায় কে প্রয়োগ করেছে জনগণ তা জানতে পারে না। ভোটারের ব্যালটটি কে কখন লুটে নিচ্ছে তার কোনো হদিস নেই। অন্যদিকে ব্যালট লুট দেখতে দেখতে জনগণ হয়রান বিধায় এখন আর তারা খোঁজখবর নেয়ার গরজবোধ করে না। বরং নির্বাচনের দিন সুখের ঘুম ঘুমাতেই বেশি স্ব্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নির্বাচনের জয়লাভের জন্য এখন আর জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। শুধু প্রয়োজন একটি ‘নমিনেশন’ এবং রেডিও, টিভিতে একটি অ্যানাউন্সমেন্ট। জনগণকে নির্বাচনে ব্যালট ব্যবহারের স্বাদ ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে দেখেই মেটাতে হয়। ব্যালটের মালিক জনগণের এ অবস্থা দেখে মুখ লুকানো ছাড়া অন্য কোনো গত্যন্তর থাকে না তাদের।

ব্যালটের প্রয়োগগত ভাষা কেড়ে নেয়া হয়েছে। জনগণের দাবির মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতির স্থান সংবিধানে সংযোজিত হওয়ার পর ব্যালটের মান-মর্যাদা কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছিল, কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্যালট ফের নির্বাচনী লুটেরাদের হাতে অপব্যবহার হতে হতে বর্তমানে নির্বচনী ব্যবস্থায়ই নির্বাসনে গেছে।

নির্বাচনীব্যবস্থা শুধু স্থানীয় শাসন ও জাতীয় পর্যায়ে ভূলুণ্ঠিত হয়নি, বরং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ ব্যবস্থা অনুপ্রবেশ করেছে। গ্রাম ও মফস্বল শহরের সব প্রতিষ্ঠান হাট-বাজারসহ সব কমিটিতে এখন নির্বাচন পদ্ধতি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যেকের সশস্ত্রবাহিনী রয়েছে। সরকার দল যাকে সিলেকশন করে দেবে; তিনিই হবেন সংশ্লিষ্ট ‘নির্বাচিত’ কর্মকর্তা। সংসদ সদস্যদের বাহিনী এখন শহর-বন্দর, মহল্লা-অলিগলি সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে বা রুখে দাঁড়ালেই তার কপালে রয়েছে কারাবরণ অথবা শারীরিক নির্যাতন।

ব্যালট ব্যবহারের সংস্কৃতি দিন দিন কমে আসছে। ফলে ব্যালটের মালিকদের পাশ কাটিয়েই গদিতে বসার স্বাদ এখন গতানুগতিক হওয়ায় ‘জোর যার মুল্লুক তার’ সংস্কৃতি দিন দিন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই সংস্কৃতি এখন যেন জনগণের গা সওয়া হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় অধিকাংশের বিবেক এখন আর কাজ করছে বলে মনে হয় না।
লেখক: রাজনীতিক ও আইনজীবী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন