যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
ওজন নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। ডাক্তার বারবার বলে, ওজন কমান। তাহলে ভালো থাকবেন। বাড়তি ওজন ঝুকিপূর্ণ। বললেই কি হলো। ওজন কি হুট করে কমানো যায়। কম করে খেলেন। কই ওজন তো কমলো না। মাঝে মাঝে ব্যায়ামও করেন। ওজন তো কমছে না। ওজন কমাতে নিয়ম মানতে হবে। তাহলেই না ওজন কমবে। আপনি চর্বি যুক্ত একটা খাবারও বাদ দেন না। তাহলে ওজন কমবে কিভাবে। আবার খাবার নিয়ে আদ্যিক্ষেতা নেই আপনার। তবে শারীরিক পরিশ্রুমে বেজায় অলস আপনি। দু’ কদম হাটতে চান না। শুয়ে বসে কাটিয়ে দেন অলস সময়। আপনার ওজন কত, বয়স কত, উচ্চতা কত? সে অনুযাীয় আপনি দৈনিক কত ক্যালরি গ্রহন করতে পারবেন। প্রথমে সেটা আপনাকে জানতে হবে। ইন্টারনেটে থেকে এটা জানা যায়। ধরা যাক আপনার লিমিট ১৫০০ ক্যালরি। দৈনিক ১৫০০ ক্যালরির বেশি গ্রহন করতে পারবেন না। আপনি যদি ১৫০০ ক্যালরি বা এর চেয়ে সামান্য কম বেশি গ্রহন করেন। তাহলে ওজন বাড়বেও না। কমবেও না। মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। ১৫০০ ক্যালরির জায়গায় যদি ১০০০ ক্যালরি গ্রহন করেন। তাহলে মাস শেষে কেজি দুয়েক ওজন কমতে পারে। মানুষভেদে একটু কম বেশি হতে পারে। আপনি যে ১০০০ ক্যালরি গ্রহন করবেন। অবশ্যই তার মধ্যে পুষ্টিকর খাবার থাকতে হবে। ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ইত্যাদি আছে এমন খাবার। ধরা যাক আপনার প্রিয় খাবার বিরিয়ানী। আপনি ১০০০ ক্যালরির ৫০০ ক্যালরি বিরিয়ানী খেলেন। এটা মোটেও ঠিক হবে না। বিরিয়ানীতে দরকারী সব ভিটামিন নেই। শুধু বিরিয়ানী খেলে বা বিরিয়ানীকে প্রধান্য দিলে শরীরের ভিটামিনের অভাব দেখা দিবে। ব্যালেন্সড খাবার খেতে হবে। তাই জানতে হবে কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে। লোভটাকে বন্দি রাখা বাড়তি মেদ কমানোতে অপরিহার্য।
কিছু খাবারের ক্যালরির পরিমান জেনে নিন। ৮০ গ্রাম (এক কাপ) ভাতে ২৭২, ১০০ গ্রাম মাছ রান্নায় ৩২৩ থেকে ৫০০, পোলাউ (এক কাপ) ২৫৮, চিকিন বিরিয়ানী (এক কাপ) ৪১৮, এক প্লেট খাসির বিরিয়ানিতে আছে ৪৭০,তেল দিয়ে করা ১টি ডিম পোচে ২০২, গরু ভুনা (এক কাপ) ৪৩৪, মিক্সড সবজি (এক কাপ) ১১০, নুডুলস সিব্ধ (এক কাপ) ২২০, পরোটা তেলে ভাজা ১টিতে ২৮৩ থেকে ২৯০, ১টি সিঙ্গারাতে ১২৩, প্লেইন কেক এক টুকরোতে ২১৮, কাজু বাদাম এক মুঠোতে ১৭৮, ১টি আপেলে ৫০/৬০, কলা মাঝারি সাইজের ১টিতে ৫০ থেকে ৬০, আম ১টি ছোট সাইজের ৫০ থেকে ৬০, আঙ্গুর ২০টি ছোটতে আছে ৫০ থেকে ৬০ ক্যালরি। ছোটকাল থেকেই আপনি ভোজররশিক। এক বসায় এক কেজি গরু ভুনা সাবার করেন। তাহলে হুট করে আপনার জন্য খাবার কমানো একটু কঠিন। খেয়েও শরীরটা ফিট রাখা যায়। বাড়তি মেদ কমানো যায়। আপনার লিমিট ১৫০০ ক্যালরি। আপনি ১৫০০ ক্যালরির খাবার খাবেন। ব্যায়াম করে ৫০০ ক্যালরি বার্ন করতে হবে। তাহলে কিন্তু ১০০০ ক্যালরি গ্রহনের মধ্যেই থাকা হলো। ক্যালরি বার্ন করতে পারলে উত্তম। তাহলে খেলেও তা গায়ে লাগবে না। অধিকাংশ মানুষ ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করতে চান না। প্রয়োজনের চেয়ে ক্যালরি কম গ্রহন করে ওজন কমানো সহজ। ডায়েট মানে একদমই না খেয়ে থাকা নয়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই সকালে নাস্তা খাই না। ভাবি সকালে নাস্তা না খেলে মেদ কমবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সকালের নাস্তা হবে রাজার মতো। রাতের খাবার হবে ফকিরের মতো। আমরা উল্টোটাই করি। সকালে দুটি রুটি, এক বাটি সবজি, একটি ডিম ভাজা উত্তম নাস্তা। ডিম ক্ষতিকর। এমন ধারনাও আছে আমাদের সমাজে। অথচ দৈনিক একটি ডিম মোটেই ক্ষতিকর নয়। দুপুরে সামান্য ভাত (এক কাপ), একটু সবজি, মাছ বা মাংশ খাওয়া যায়। বিকালে তো ক্ষুধা লাগে। একটা বার্গার খেয়ে নেবেন নাকি? একটা বারগারে ৪০০ ক্যালরি। খাবেন কি খাবেন না। আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম। বিকালে এক টুকরো বিস্কিট, এক কাপ গ্রিন টি খাওয়া যায়। বিকালে ফল খেলেও অসুবিধা নেই। রাতের খাবার সারতে হবে সন্ধ্যা ৭ টা হতে ৮টার মধ্যে। এক গ্লাস দুধ, ফলমুল খেতে পারেন। যতটা সম্ভব রাতের খাবার হালকা হবে। খেয়ে হাটহাটি করা ভালো। হয়তো মাঝ রাতে ক্ষুধা লাগতে পারে। এটা সহ্য করতে হবে। তখন কয়েকটা কাজু বাদাম খাওয়া যায়। রিচ ফুড খাওয়া যাবে না। এমনটা ডাক্তারগন বলেন। কারণটা হলো রিচ ফুডে ক্যালরি বেশি। চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য ভালো নয়। প্্রতিদিন এক কোয়া কাচা রসুন, লেবুর রস, একটু কালোজিরা, অল্প একটু মধু, অল্প বাদাম, আদা চা খাওয়া, কয়েক টুকরো শষা খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। প্রকৃতিক খাবার বেছে নিতে চেস্টা করুন। ডাক্তারগন প্রতিদিন ৪০ মিনিট হাটার পরামর্শ দেন। অফিসের একটু আগে নামুন। তারপর হেটে যান। আবার বাসার খানিকটা আগে নেমে হেটে যাওয়া যায়। যাদের হাটার সময় থাকে না একদমই। তারা এমনটা করতে পারেন।
ওজন কমাতে সবচেয়ে বেশি দরকার। প্রবল ইচ্ছা শক্তি। যত মজার খাবার হোক না কেন। খাবোই না। মনোবল এমন দৃঢ় করুন। অধিকাংশ মানুষ এখানেই ব্যর্থ হোন। কয়েকদিন ডায়েট করেন বটে। পরে এক অনুষ্ঠানে মজার খাবার দেখে সব ভুলে যান। সাত দিনেরটা এক দিনে পুষিয়ে নেন।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কলাম লেখক
বাসা-৩২, রোড-২৯/ডি, মিরপুর-১২, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫ ৩৬৪২০৩।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।