২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, অশান্তি বা চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে অনেক সময় মানসিকভাবে ভারাকান্ত্র হয়ে পড়ি আমরা। এই মানসিক অবসাদ কখনও মানুষের জন্য লাভদায়ক ফলও দিতে পারে, আবার কখনও ক্ষতিকারকও হতে পারে। অর্থাৎ মানসিক চাপ তখনই ভালো যখন এটি মানুষের মনে উৎসাহ জোগায়। যদি আমাদের মনের ইচ্ছা বা বাসনা অনেক বড় হয় বা তাকে পূরণ করতে না পারি তাহলে আমরা নেতিবাচক চাপের শিকার হয়ে পড়ি। বারবার চেষ্টা করার পরও যখন প্রত্যাশানুযায়ী সাফল্য মেলে না তখন আমরা হতাশার শিকার হয়ে পড়ি। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তির জন্য পরিশ্রম তথা একাগ্রতা সহকারে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। এই মানসিক অবসাদের শিকড় যতই মজবুত হয়, একজন মানুষ ততই ভেঙে পড়েন।
আজ পর্যন্ত ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনযাত্রার এমন একটি ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমরা মানসিক চাপের সম্মুখীন হই না। মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণ নেতিবাচক বা ইতিবাচক দু-ধরণের হতে পারে। যেমন একজন মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে অসমর্থ হলে মানসিক চাপের সম্মুখীন হন। অন্যদিকে কোনো এক ব্যক্তি পরিস্থিতির কাছে হেরে গেলেও মানসিক চাপে ভোগেন। কোনো নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা পেলেও মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। কখনও কোনো কাজে সফলকাম না হলে বা পরীক্ষায় বিফল হলে মানসিক চাপ বাড়ে। এমনকি পরীক্ষার ফলাফল এগিয়ে আসলেও মানসিক চাপ বাড়ে। মৃত্যু ও বিয়ে তথা প্রেমে প্রতারিত হলেও মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়ে মানুষ। মানসিক চাপগ্রস্ত এক ব্যক্তির জীবনের প্রতি অনীহা আসা কোনো বড় কথা নয়। এমন ব্যক্তি উচিত নির্ণয় নিতে অসমর্থ হয়ে পড়েন। ফলে তাঁর জীবনে আরও সমস্যা দেখা দেয়। এতে মানসিক চাপ আরও দুগুণ বেড়ে উঠে।
মানসিক চাপের ফলে হজমশক্তিতে প্রভাব পড়ে। ফলে পেটের সমস্যার পাশাপাশি খিদে না-পাওয়া বা বেশি খিদে পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। টেনশনের ফলে মাথা, কোমর, ঘাড় এবং বুকেও ব্যথা হয়। হুদযন্ত্রের গতি দ্রুত হয়। মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষের ঘুম কমে যায় বা খুব বেশি ঘুম হয়। টেনশনে ভোগা যুবক-যুবতীর ঘাঁয়ের সমস্যাও দেখা দেয়। হৃদরোগ, ষ্ট্রোক, আলসার, সুগার, মাইগ্রেন ইত্যাদির মতো রোগের সঙ্গে মানসিক চাপের সরাসরি সম্পর্ক থাকে।
এছাড়া মানসিক চাপগ্রস্ত একজন মানুষ কোনো সময় রিলাক্স বা সুস্থির অনুভব করে না। কোনো কাজেই তাদের মন বসে না। প্রায়ই তাদের নখ কামড়াতে বা অধৈর্য হতে দেখা যায়। মানসিক চাপের ফলে তাদের মাথা ঠিক থাকে না। সামান্য কথাতেই রাগ উঠে। সর্বদা খিটখিটে মেজাজের থাকেন এধরণের মানুষ। ফলে তাঁরা ধীরে ধীরে নিজের দায়িত্ব এড়াতে শুরু করেন এবং অবশেষে নেশার আশ্রয় নিতে শুরু করে মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তি। কখনও কখনও নিজেকে নিঃসঙ্গ করে তোলেন এমন ব্যক্তিরা।
মানসিক চাপে ভোগা ব্যক্তিদের প্রথমেই নিজের শরীরের চেক-আপ করানো উচিত। যদি শরীরে কোনো রোগ পাওয়া যায়, তবে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমিত আহারে নিজেকে সুস্থ রাখা উচিত। রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত। আলসেমি না করে দৈনন্দিন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। মনে ইতিবাচক চিন্তধারা আনুন। নিজেকে কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। এছাড়া অহেতুক চিন্তা করে মনমেজাজ নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, জীবনের সর্বদা সাফল্য পাওয়া যায় না। তাই বিফলতাকেও ইতিবাচক চোখে দেখুন। ছোট ছোট কথা মনে লাগাবেন না। মনে রাখবেন আপনার ইচ্ছানুযায়ী দুনিয়া চলবে না। তাই নিজেকে দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার যোগ্য করে তুলুন।
মনের সুস্থ মনোরঞ্জনের জন্য অবশ্য সময় বের করুন। নিজের সখ পূরণ করুন। যখনই সুযোগ পাবেন, পছন্দের গান শুনুন, বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন, ছবি আঁকুন। মোট কথা যা করে আপনি আনন্দ পান তাই করুন। প্রতিদিন কিছু পরিমাণে মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করলেও টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।