Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপরিবহনে নৈরাজ্য আর কত

নীলকণ্ঠ আইচ মজুমদার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে বাস মালিক ও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কয়েকদিন পর এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়বে আন্দোলন, হয়তো সেটাই চাচ্ছে গণপরিবহনের মালিক পক্ষ। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বার বার বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরকারই বাস মালিকদের কাছে অসহায়। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস মালিকদের অসহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব বিশৃঙ্খলা কেবলমাত্র রাজধানীতেই নয় সারাদেশেই বিরাজমান। রাজধানীর এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও মাঠ পর্যায়ের বিষয়গুলি থেকে যায় অন্তরালে। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সারাদেশে বাসভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সরকার যে হারে বৃদ্ধি করেছে তার থেকে অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বাসভাড়া।

শুধু বাস নয় সেই সাথে মাঠ পর্যায়ে চলা অন্যান্য যানবাহনের ভাড়াও অযথা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ যেন ভাড়া বাড়ানোর এক মহোৎসব। সেক্ষেত্রে মালিকপক্ষ অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। সেখান থেকেই জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করে আসছে তার মধ্যে দুর্ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও নিহত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সারাদেশে সব গণপরিবহনে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাফ পাস নিশ্চিত করা এবং কোন শর্ত না দেওয়া, গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী, নারীদের অবাধ যাত্রা ও ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করা, ফিটনেস, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া; বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি তুলে ধরেছে সেসব গণমানুষেরও দাবি। দাবিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব দাবি সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে গোটা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় একটা আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। এর ফলে কেবল শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে না, হবে দেশের সকল মানুষ। কিন্তু বাস মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো দাবিকে গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারও এব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা নিচ্ছে না। যার ফলে পরিবহন ব্যবস্থায় বেড়ে চলছে নৈরাজ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথাও কোথাও অ্যাকশনেও যাচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীদের আন্দেলনকে পুঁজি করে বাইরের কিছু লোকজনও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে।

গণপরিবহনে যে নৈরাজ্য চলে আসছে তা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার একটি ফসল। এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. শামসুল হকের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘সিস্টেমের কারণে ঢাকার মতো জনবহুল একটা শহরে বাসের ব্যবসা লাভজনক নয়। এটা আমার কথা নয়, তিনটি স্টাডি করা হয়েছে সবগুলোতেই একই তথ্য পাওয়া গেছে। কেন হচ্ছে এমনটা? এর জন্য দায়ী এই মালিক সমিতির নেতারাই। কারণ, একেকটা করিডরে একাধিক কোম্পানির বাস নামিয়েছে। যেখানে কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। বাস নিয়ে আসছে, সরকার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। আবার যানজট ও বিশৃঙ্খলা রয়েছে। ফলে একটা বাসের যে প্রোডাক্টিভিটি, বেশি ট্রিপ দেওয়া সেটা কমে যায়। কিন্তু মালিক তার টাকাটা নিয়ে যায়। যদি বেশি ট্রিপ দেওয়া যায় তা হলে শ্রমিকদের কাছে বেশি টাকা আসবে। কিন্তু যখন যানজটের কারণে ট্রিপ কমে যায় তখন চালক-হেলপার উগ্র হয়ে যায়। বেশি ভাড়া আদায় করে। হাফ পাস চাইলে তারা মনে করে, তার পেটে লাথি লাগছে। এ কারণে তিনি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়।’ বলা বাহুল্য, এর জন্য কেবলমাত্র মালিকপক্ষ দায়ী নয়, সরকারও দায়ী। সরকার সব সময় সঠিক ভূমিকা রাখছে না। প্রায় সব সরকারই এ খাতকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে আসছে। বিশেষ করে এ ব্যবসায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভাগ বসিয়েছে। সামান্য হাফ ভাড়ার বিষয়টিতেও প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। গণপরিবহনে নৈরাজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি ও পুঙ্গত্ব।

মহাসড়কে ধীর গতির গাড়ি না চলার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। নিয়মবহির্ভূতভাবে অবাদে লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। মালিক সমিতির অসহযোগিতা ও প্রশাসনের নিরব সমর্থনে রাস্তায় চলছে বাতিলকৃত যানবাহন। হেলপারের হাতে চলে চলে এসেছে গাড়ির স্টিয়ারিং আর বেশির ভাগ ড্রাইভারই রয়েছে লাইসেন্স বিহীন। না দেখার ভান করেই চলে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এযেন এক লুকোচুরি খেলা। এছাড়াও রাস্তায় রাস্তায় সংগঠনের নামে যে পরিমাণে চাঁদাবাজি হচ্ছে এর সঠিক পরিসংখ্যান ও গন্তব্যস্থল জানা যায় না। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, কন্ডাক্টর লাইসেন্স, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, পরিবহন কমিটি, রুট পারমিট, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, মোটরযানের নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষাবেক্ষণ, ট্রাফিক ও ওজননসীমা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ, দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা এবং বীমা, মোটরযান ড্রাইভিং স্কুল, মোটরযান মেরামত কারখানা, ডাম্পিং ইয়ার্ড; অপরাধ, বিচার ও দন্ড, পুনর্বিবেচনা ও আপিল ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। আইনে উল্লেখিত বিষয়গুলির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব। সকলের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। কেবলমাত্র ব্যবসার চিন্তা পরিহার করে মালিকপক্ষকে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নৈরাজ্য দূর হলে রাস্তায় দুর্ঘটনা যেমন কমবে, তেমনি কমবে মৃত্যু।

লেখক: শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণপরিবহন

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->