Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই দিনাজপুরে বিএনপি’র সমাবেশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ পিএম

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খালেদা জিয়া মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষেপাবেন না। হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার পতনের জন্য কোটি মানুষের প্রয়োজন হয় না। কেবল ঢাকা অবরোধের মাধ্যমেই স্বৈরাচারই সরকারের পতনের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তিন বারের সফল প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পিছনে রয়েছে সমগ্র দেশের জেলা উপজেলা ও গ্রামের কোটি কোটি মানুষ। নির্বাচনে বিএনপি কোটি কোটি ভোট পায়। যারা ভোট দেয় তারা সকলেই বিএনপি করে না। তারা ভালবাসে বিএনপি’র শহীদ জিয়াকে। ভালবাসে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষের রোষানলে পরবেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত কেউ বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পায় না একথা ঠিক নয়। শহীদ রাষ্ট্রপতির শাসনামলে যাবজীবন কারাদন্ড দন্ডিত আ স ম আবদুর রব বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নাসিমও সুযোগ পেয়েছিলেন। আর বেগম খালেদা জিয়াকে-তো মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক রণাঙ্গনের নেতৃত্বদানকারী যোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই শিশু পুত্রকে সাথে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে কারাবন্দী ছিলেন। পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধের দাবীদার নেতা-নেত্রীরা ভারতের হোটেলে আরাম আয়েসে জীবন যাপন করেছিলেন। কেয়ারটেকার সরকারের সময়ও তিনি বিদেশে না যেয়ে দেশের মাটিতে কারাবরণ করেছিলেন। জনগণের দেয়া সম্মানে ভূষিত আপোষহীন এই নেত্রী আজ ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে-কিন্তু আমরা চাই আমাদের নেত্রী’র দীর্ঘায়ু।

তিনি উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। সুস্থ হলেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু বেগম জিয়া ফাঁসির আসামী নয়। তিনি মিথ্যা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। তাহলে তিনি কেন উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন না। আর তার যে উন্নত চিকিৎসা দরকার একথা আমি বা আমাদের দলের কথা নয়। এ কথা চিকিৎসকদের। সেদিনও আপোস করেনিসরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন দেশ নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষেপাবেন না। কোটি কোটি মানুষ লাগে সরকার পতন করতে। তিনি বলেন নির্বাচনে বিএনপি কোটি কোটি ভোট পায় এরা সকলেই বিএনপি করে না-এরা শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ভালবাসেন।

মাত্র চার মিনিটের ভাষনে নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দি জীবন যাপনকারী আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া আজ মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি রয়েছেন। তিনি বলেন খালেদা জিয়াকে কারাগারে একাকি আটকে রেখেছিল সরকার। সুস্থ হয়ে কারাগারে যান আর অসুস্থ হয়ে কারাগার থেকে বের হোন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত হলে বিদেশে চিকিৎসা নেয়া যাবে না একথা ঠিক নয়। শহীদ জিয়ার শাসনামলে যাবত জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আ স ম রব বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন আমরা আমাদের নেত্রী’র দীর্ঘায়ু কামনা করি। এজন্য তার উননত চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা সভা সমাবেশ করে তার মুক্তি দাবী করছি। তাকে মুক্তি দেয়া না হলে চিকিৎসা অভাবে তার যদি কিছু হয় এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎনার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবীতে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপি’র সমাবেশ বুধবার দুপুর ২ টায় স্থানীয় ষ্টেশন চত্বরে হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করে বিএনপি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে প্রশাসন তা বাতিল করলে সমাবেশ স্থানীয় লোকভবনে করার প্রস্তুতি নেয়। বিএনপি সমাবেশ লোকভবনের (অডিটোরিয়াম) এর ভিতরে নয় বাহিরে করার অনুমতি চাইলে প্রশাসন তা দেয় না। অতঃপর একেবারে শেষ মুহুর্তে বুধবার সকালে জেলরোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সভা করার অনুমতি পায়। কার্যালয়ের ভিতরে সমাবেশের অনুমতি থাকলেও নেতা কর্মীদের উপস্থিতি সড়কে চলে আসে। পুলিশ বাধা দিলেও নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ শুরু করেন। বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে জানান, তাদের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই সমাবেশ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। এ কারনে কোন প্রকার ব্যানার বা আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতির নাম ঘোষনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই দিনাজপুর পৌর মেয়র বিএনপিতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দল খালেক, অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু’র বক্তব্যের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথির ভাষনে মিজানুর রহমান মিনু তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, এদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা আমাদেরই সন্তান। কিন্তু কিছু কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা ও একটি বিশেষ এলাকার বাসিন্দা এবং বিদেশী এজেন্ট রয়েছে। তাদের নাম ও ঠিকানা লেখে রাখার আহবান জানিয়ে বলেন আগামী ইনশাল্লাহ দেশ নেত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন। তিনি বলেন, বিএনপি মাটি মানুষের দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতি যখন দিশেহারা হয়ে মুক্তি পেতে চায় তখন আজকের স্বাধীনতা সোল এজেন্ট দাবীদারেরা রাতের অন্ধকাওে পালিয়ে যেয়ে ভারতের হোটেলে আরাম আয়েশ করছিলেন। সেই সময় শহীদ জিয়া আমি মেজর জিয়া বলছি বলে স্বাধীনতা ঘোষনার মাধ্যমে সাধারন মানুষকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আহবান জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, শ্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা চট্রগ্রামে বলেছিলেন এরশাদ সরকারের সাথে যারা হাত মিলাবেন তারা জাতীয় বেঈমান হবেন। অথচ ২৪ ঘন্টা পর আপনি ঢাকায় এসে এরশাদের সাথে লংড্রাইভে যেয়ে টাকার বিনিময়ে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আপনি নির্বাচনে গিয়েছিলেন। আর খালেদা জিয়া গনতন্ত্রের জন্য আপোষ করেননি। এজন্যই জনগন তাকে আপোষহীন নেত্রী হিসাবে ভ‚ষিত করেছিল। তিনি বলেন দেশে আজ হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। কৃষক ধানের দাম পায়না শ্রমিক ন্যায্য মুজুরী পায় না।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন সিপাহী নিয়োগে গোপনীয় তথ্য যাচাই বাছাই করা হয় অথচ বর্তমান সরকারের একজন ধর্ষককে যাচাই বাছাই ছাড়াই মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানানো হয়। জায়গা হয় মন্ত্রী পরিষদে শেখ হাসিনা শপথ বাক্য পাঠ করেন-কিন্তু তিনিতো নিজেই শপথ ভঙ্গ করেছেন। মাত্র ২০ মিনিটেই স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ শেষ করে বলেন, আপনারা প্লাকার্ড ফেষ্টুন নামিয়ে বাড়ী চলে যান। যেন কোন অজানা ভীতির আশংকায় নেতারা কর্মীদের বাড়ী ফেরার আহবান জানান।

এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অনেকেই সমাবেশ স্থলে আসতে পারেনকি। বিএনপি নেতা কর্মীদের অভিযোগ শহরের প্রবেশ স্থলগুলিতে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় লাঠি পেটা করা হয়েছে। তবে সমাবেশস্থলে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিনাজপুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ