পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দু'হাজার তিন সাল। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে 'অপারেশন ক্লিন হার্ট' শেষ হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। প্রতি সপ্তাহেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর মধ্যে গোলাগুলি লেগেই থাকতো। তখন ঢাকার একেকটি এলাকা একেকজন সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাড়ি বানানো থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে তাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো। তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এর আগে চিতা, কোবরা ইত্যাদি নামে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি।
সেই সময়কার পরিস্থিতি এবং র্যাবের গঠন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছিলেন ঢাকার একজন সিনিয়র সাংবাদিক কামরুল হাসান। তখন তিনি জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার, পরে প্রথম আলোর হেড অব ক্রাইম রিপোর্টিং হন। বর্তমানে আজকের পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। কামরুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''বিএনপি জোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে অনেকগুলো পেশাদার সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল এবং তাদের কর্মকাণ্ড ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব অবনতি হয়েছিল। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ অঞ্চলে বামপন্থীদের কর্মকাণ্ড ছিল, আবার জেএমবিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।'' ''ঢাকায় তখন অনেকগুলো ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, যেখানে সেখানে গোলাগুলি হতো। পেশাদার অপরাধীদের হাতে বিদেশি অস্ত্র দেখা যেত,'' তিনি বলছেন।
সেই সময় অপরাধ দমনের জন্য বিশেষ একটি বাহিনীর গঠনের ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। বড় বড় অভিযান পরিচালনা করার জন্য ২০০৩ সালে পুলিশের সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়, যার নাম ছিল র্যাপিড অ্যাকশন টিম বা র্যাট। এর প্রধান ছিলেন একজন উপ-পুলিশ কমিশনার। তখনকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী লিয়াকত হোসেনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু বাহিনীটির নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে সংক্ষিপ্ত রূপ দাঁড়ায় 'র্যাট', যার বাংলা অর্থ ইঁদুর। এ নিয়ে খানিকটা আলোচনা শুরু হয়। আবার তখনকার পুলিশের অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় তারা খুব আলাদা ভূমিকাও রাখতে পারছিল না।
অপরাধ দমনে এলিট ফোর্স: ২০০৩ সাল থেকে সরকার ভাবতে শুরু করলো, র্যাট দিয়ে হচ্ছে না, বড় একটা বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে, যারা দেশ জুড়ে শুধু বড় বড় অভিযান চালাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থেকে এই বাহিনী অনেকটা এফবিআইয়ের আদলে কাজ করবে, তখন ব্যাটালিয়ন গড়ার কথা ভাবা হয়নি।
''র্যাট ছিল র্যাবের টেস্ট কেস বলা যায়। কিন্তু র্যাটের নাম নিয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা শুরু হলে তখন এটাকে বড় বাহিনী করে, সব বাহিনী মিলে পেশাদার অপরাধী দমনে একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করা হলো। প্রথমে ব্যাটালিয়নের কথা ভাবা হয়নি, তখন চিন্তা করা হয়েছিল অনেকটা এফবিআইয়ের আদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই বাহিনী থাকবে। তারা সারা দেশে বড় বড় অপারেশন করবে, এই চিন্তা থেকে র্যাব গঠনের পরিকল্পনা করা হলো,'' বলছেন কামরুল হাসান।
যখন এই বাহিনী সাজানো হচ্ছিল, তখন ভাবা হলো, যেহেতু বিশেষায়িত বাহিনী হবে এবং বড় বড় অভিযান চালাবে, তাই এই বাহিনীতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রথমে এই বাহিনীকে আলাদা বা স্বতন্ত্র একটি বাহিনী হিসাবে গঠন করার কথা ভাবা হলেও পরবর্তীতে পুলিশের আপত্তির মুখে সেটাকে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী হিসাবে গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেজন্য আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন অ্যাক্ট আইন খানিকটা সংশোধন করে এই বাহিনীকে গ্রেপ্তার ও তদন্তের ক্ষমতা দেয়া হয়। ফলে বাহিনীটি থাকবে পুলিশ মহাপরিদর্শকের আওতায়।
২০০৪ সালের ২৬শে মার্চ র্যাব গঠন করা হলো। তবে বাহিনীটি তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে সেই বছরের জুন মাসে। প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে নিযুক্তি পান আনোয়ারুল ইকবাল, যিনি পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হয়েছিলেন। বাহিনীতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, তখনকার বিডিআর (এখনকার বিজিবি), পুলিশ, আনসার থেকে সদস্য নিয়োগ দেয়া হতো। পরবর্তীতে কোস্টগার্ড গঠন হলে সেখান থেকেও সদস্য নেয়া শুরু হয়। প্রত্যেক বাহিনী থেকে সদস্য নেয়ার হার নির্দিষ্ট করা।
যদিও শুরু থেকেই কমান্ডিং পদমর্যাদা নিয়ে মতবিরোধে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা বাহিনীতে যেতে চাইতেন না। এখনো এই বাহিনীতে সরাসরি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন কোন কর্মকর্তা কাজ করেন না। বাহিনীর মহাপরিচালক পুলিশ থেকে আসেন, তবে অতিরিক্ত মহাপরিচালকরা সবসময়ে এসেছেন সেনাবাহিনী থেকে। পুলিশ সদস্যদের তুলনায় র্যাবের জন্য অনেক আধুনিক অস্ত্র, যানবাহন, সরঞ্জাম ইত্যাদি বরাদ্দ দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তারবার্তা অনুযায়ী, র্যাব গঠনের পর পুলিশের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ ৬.৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৬.৯ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
র্যাব নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একটি গোপন তারবার্তা ফাঁস হয়েছে উইকিলিকসে। র্যাবের বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের ওই বিশ্লেষণ 'র্যাব অ্যানিভার্সারি অ্যানালাইসিস' শিরোনামে পাঠানো হয়েছিল ২০০৫ সালের ২৩শে অগাস্ট। সেই সময় র্যাবের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বলেছেন, ''র্যাবের উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ আর সহিংস অপরাধ থেকে গরীব লোকজনকে রক্ষা করা।'' তারবার্তায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, যেভাবে র্যাবের আকার ও সহায়তা বাড়ছে, তাতে সেটি কোন সাময়িক ব্যবস্থা নয়, বরং স্থায়ী একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবেই তৈরি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, শীর্ষ জঙ্গি বিরোধী অভিযান, চরমপন্থিদের দমনের কারণে বাহিনী হিসাবে রাতারাতি র্যাব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''র্যাব আসলে একটা বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে তৈরি হয়েছিল। গতানুগতিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ যেভাবে কাজ করে, পুলিশের যেভাবে গঠন, এটা ঠিক সেরকম গঠন ছিল না। বিভিন্ন বাহিনী থেকে আসা সদস্যদের নিয়ে মিশ্র একটি বাহিনী। তারা পুলিশের লোগো ব্যবহার করে, কেতাবি অর্থে তারা পুলিশের একটি শাখা, কিন্তু গণ মানুষের মধ্যে এই ধারণাই প্রচলিত আছে যে, এটা একটা সামরিক বাহিনী।'' ''যেভাবে শুরুর দিকে র্যাবকে সাজানো হয়েছিল, যে গেটআপ দেয়া হয়েছে, যেসব সরঞ্জামাদি দেয়া হয়েছে, সেসব ছিল বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব। ফলে তারা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা অনেক সময় সাহসিকতা, ক্ষিপ্রতাও দেখাতে পেরেছে'' বলছিলেন মি. রহমান।
'ক্রসফায়ার' নিয়ে বিতর্কের মুখে র্যাব: বাহিনী হিসাবে র্যাব সবচেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে তথাকথিত 'ক্রসফায়ারের' কারণে। বাংলাদেশে পুলিশের সঙ্গে এর আগেও বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসীদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে র্যাবের সঙ্গে 'ক্রসফায়ার' যেন অনেকটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাবের বন্দুকযুদ্ধের সূচনা হয় পিচ্চি হান্নানের 'ক্রসফায়ারের' মধ্য দিয়ে। সেই সময় অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী র্যাবের সঙ্গে 'ক্রসফায়ারে' নিহত হওয়ায় রাতারাতি র্যাব 'জনপ্রিয়' হয়ে ওঠে। সেই সময় কিছু 'ক্রসফায়ারের' পর এলাকায় মিষ্টি বিতরণের ঘটনাও ঘটেছে।
তবে বিচার বহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডে শুরু থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়েছে, ''র্যাবের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্রসফায়ার নামের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যার কারণে পথঘাট নিরাপদ হয়ে উঠেছে বলে তারা দাবি করেছে। প্রতিবারের গল্প প্রায় একই রকম। ''তবে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতারা কুখ্যাত অপরাধীদের দমনে ক্রসফায়ার খুব কার্যকরী সমর্থন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী - তারা সবাই বলেছেন, র্যাব আত্মরক্ষায় গুলি করেছে অথবা ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া সবাই কুখ্যাত অপরাধী ছিল, এভাবে মৃত্যুই তাদের প্রাপ্য,'' - মার্কিন দূতাবাসের ফাঁস হওয়ায় তারবার্তায় বলা হয়েছে।
সাবেক পুলিশ উপ-মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলছেন, ''বাংলাদেশ পুলিশ গতানুগতিক ধারায় পুলিশিং করে আসতো। গুলি ছোঁড়া- এটা পুলিশের একেবারেই স্বভাব বিরুদ্ধে কাজ ছিল। র্যাব আসার আগে পর্যন্ত 'ট্রিগার হ্যাপি''পুলিশিং দেখা যায়নি।" "তখন থেকে জনমানুষের মধ্যে একটা আকর্ষণ তৈরি হলো যে, তারা অ্যাকশন ধর্মী পুলিশি কর্মকাণ্ড দেখতে চাইতো। সেই কারণে এই বাহিনীটি একটা আস্থাও তৈরি করে নিয়েছিল। '' ''আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেটা ইতিবাচক দিক তৈরি করেছিল, জনমানুষের আস্থা তৈরি করেছিল। সেই সাথে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে, যে প্র্যাকটিস আগে ছিল না, সেসব প্র্যাকটিস তৈরি হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল,'' - বলছেন মি. রহমান।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় থেকে বিএনপির ক্ষমতার মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হওয়া পর্যন্ত র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ৩৮০ জন নিহত হয়েছে। যদিও বিরোধী দলে যাওয়ার পর বিএনপি র্যাবের বন্দুকযুদ্ধের বিরোধিতা শুরু করেছে। র্যাবের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগে বিএনপিরও দায় আছে বলে বিএনপি মনে করে কিনা জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''র্যাব যখন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তখন মূল উদ্দেশ্য ছিল আইনশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। ত্রাস বা সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিএনপি সরকারের আমলে একটিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কোন ব্যবস্থা র্যাব গ্রহণ করেনি।''
র্যাব নিয়ে বিশ্লেষণে ২৩ অগাস্ট ২০০৫ সালের মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়েছে, র্যাবের কোন কোন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়া, চাঁদা আদায় করা, এমনকি ডাকাতির অভিযোগও উঠেছে। সেই সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছিলেন, ''যদি কোন র্যাব সদস্য বিশৃঙ্খলা করে, তার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।'' র্যাবের কর্মকর্তারা বরাবরই দাবি করেছেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে দেখেছেন, যেখানে কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় পত্রপত্রিকার বরাত দিয়ে মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, সেই সময় পর্যন্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১০৯ জন র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে ক্রসফায়ারের কারণে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। কামরুল হাসান বলছেন, ''প্রথমে দেখা গেল র্যাব শুধুমাত্র বিশেষ ধরনের অপরাধ আর পেশাদার অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখা গেল, বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের নানা এজেন্ডা র্যাবকে দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু হলো। তখনি র্যাবকে নিয়ে বিতর্কটা বেশি শুরু হলো।''
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, ''র্যাবের গঠন নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। কারণ যে প্রেক্ষিতে র্যাব গঠন হয়েছিল, তখন নানাভাবে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছিল। তাই একটা এলিট ফোর্সের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তখন থেকেই আমরা যে কথা বলে এসেছি, আমাদের করের পয়সা তাদের যে সাজসজ্জা দেয়া হয়েছে, মারণাস্ত্র দেয়া হয়েছে, সেটা কতটা তারা কতটা প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে, কতটা নিয়ম বা বিচার, আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেছে, সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন ছিল। সেসব প্রশ্নের সদুত্তর আমরা কখনো পাইনি।''
র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের আলোচিত অন্যতম একটি ঘটনা ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেনের পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলির ঘটনা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, এবং কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুল হকের ক্রসফায়ারে মৃত্যু - এ ঘটনাগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে র্যাব। গত কয়েক বছরে নিখোঁজ বা গুমের শিকার অনেকের পরিবার অভিযোগ করেছেন, তাদের স্বজনদের র্যাব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে বরাবরই এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে র্যাবের মুখপাত্র বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ ১২ই ডিসেম্বর র্যাব) এবং সংস্থার সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার জন্য বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায়ী করছেন অপরাধ প্রতিবেদক মি. হাসান। ''আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তারা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সরকারে এসে তাদের অবস্থান বদলে গেছে।''
কামরুল হাসান বলছেন, ''র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলেও, আসলে এই বাহিনী কিন্তু চলে একটি আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে। এমন না যে বাহিনীর সদস্যরা যার যা ইচ্ছা, তাই করছেন। সুতরাং র্যাবকে দোষারোপ করার আগে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দায়ী করা উচিত। কারণ তারা যেভাবে চালাতে চাইছেন, যেভাবে পরিচালনা করছেন, বাহিনী হিসাবে র্যাব কিন্তু সেভাবেই চলছে।''
সুলতানা কামালও বলছেন, ''বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে (যারা) এই ঘটনা ঘটাচ্ছে, নিশ্চয়ই তাদের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় তারা এই কাজ করছে। সুতরাং উপর দিক থেকে আমাদের চিন্তা করতে হবে, রাষ্ট্রের নীতির ওপরেই নির্ভর করেই এসব হচ্ছে।'' সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।