Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ও সম্ভব!

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ পিএম

আমরা নিজের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কতটা সচেতন? বাইরে যা দেখাই, অন্তরেও কি আমরা তাই? কণ্ঠ বিশ্লেষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এমনকি রোগব্যধির লক্ষণও শনাক্ত করা সম্ভব৷

কণ্ঠ পার্কিনসনের মতো রোগেরও সন্ধান দিতে পারে৷ অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর থেকে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব৷ জার্মানির আউগসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিয়র্ন শুলার বলেন, “পার্কিনসন রোগ আসলে নিউরোজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার৷ অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মোটোর স্কিলস বা শরীর নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ একেবারে প্রাথমিক স্তরেই সূক্ষ্ম পেশীর উপর প্রভাব পড়ে, যা আমাদের কণ্ঠে ধ্বনি সৃষ্টি করার সময় প্রয়োজন হয়৷”

তখন সুস্থ মানুষের কণ্ঠের সঙ্গে একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়৷ অত্যন্ত অসুস্থ মানুষের কণ্ঠ ভাঙা শোনায়৷ গবেষকরা একেবারে প্রথম পর্যায়ে পার্কিনসন রোগ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন৷ অটিজম, এডিএইচএস বা ডিপ্রেশনের মতো রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও কণ্ঠ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া কাজে লাগছে৷ এই প্রক্রিয়ার সাফল্যের হার ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ৷ সিস্টেমে এরই মধ্যে কয়েক'শো রোগীর তথ্য জমা হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে৷

মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি আগেই সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে৷ তিন জন স্বেচ্ছাসেবীর সাহায্যে তা যাচাই করা হয়েছে৷ যেমন ডিয়র্ক নামের ব্যক্তির কৌতূহল ছাড়া তার আর কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা গেছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রফেসর শুলার বলেন, ‘‘ডিয়র্কের মধ্যে হালকা অন্তর্মুখী প্রবণতা রয়েছে৷ অর্থাৎ সে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার বদলে নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে৷''

ডিয়র্ক নিজেও সেই মূল্যায়ন সম্পর্কে একমত৷ অর্থাৎ পূর্বাভাস আবার মিলে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা আমাকে ভালো করে চেনে না, তারা এমনটা ভাবতেই পারে না৷ তবে আমি সত্যি একা থাকতে ভালোবাসি৷''

কাটারিনা নামের এক নারীর ক্ষেত্রেও কি সিস্টেম এমন নিখুঁত বিশ্লেষণ করেছে? তিনি নিজের বুটিকে অনেক কাজ করতে ভালোবাসেন৷ নিজের ক্যাফেতেও তাই৷ তাঁর কণ্ঠ শুনলে প্রথমে বহির্মুখী মনে হবে৷ নিজের সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘আমি গ্রিসের মানুষ৷ পরিবারের লোকজন অথবা স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সময় গলার স্বর চড়ে যায়৷ অনেকে ভাবে আমরা ঝগড়া করছি৷ আসলে সেটা ঠিক নয়৷''

কম্পিউটারও তাকে ভুল বোঝে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় ছিল৷ কিন্তু প্রফেসর বিয়র্ন শুলার তাঁর কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করে বলেন, ‘‘ডিয়র্কের তুলনায় কাটারিনার ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ভারসাম্য লক্ষ্য করছি৷ অর্থাৎ তাঁর কণ্ঠ শুনে মনে না হলেও বাস্তবে খুব বড় ভারসাম্য রয়েছে৷''

তাহলে তিনি বহির্মুখী নন! সত্যি কি সব ক্ষেত্রেই গড়পড়তা লক্ষ্য করা গেছে? কাটারিনা নিজে সেই মূল্যায়ন মেনে নিয়ে বলেন, তিনি নিজেকে সত্যি মধ্যপন্থি মনে করেন৷ অর্থাৎ কম্পিউটার ঠিকই ধরেছে৷ কাটারিনা প্রায়ই একা থাকতে ভালোবাসেন৷

রবিন নামের ব্যক্তির ক্ষেত্রে কী জানা গেছে? তিনি আপাতত নেপাল ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে ট্রেকিং ট্যুর করতে চান৷ খেলাধুলা তাঁর খুবই পছন্দ৷ সংকল্প অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন৷ নিজের সম্পর্কে রবিন বলেন, ‘‘যে কাজই করি না কেন, ভেবেচিন্তে করি এবং সব সময়ে নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে চাই৷ আমার অনেক বন্ধু ও পরিচিত আমাকে এভাবেই চেনেন৷''

প্রো. শুলার মনে করেন, রবিনের কণ্ঠের মূল্যায়ন দেখলে বোঝা যাবে যে, তার বহির্মুখতা গড় মানুষের তুলনায় আলাদা৷ কণ্ঠ বিশ্লেষণের ফল অনুযায়ী তিনি বাস্তবে অন্তর্মুখী ও আত্মমূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত৷ ব্যক্তিত্বের বাকি বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সাধারণ৷ রবিন অবশ্য নিজের সম্পর্কে একেভাবে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন৷ রবিন নিজে মনে করেন, যে তিনি যথেষ্ট বিবেকবান, মিশুকে এবং স্থিতিশীল৷

তাহলে কি সিস্টেম এবার ভূল করেছে? নাকি সেটি সত্যি আমাদের আরও ভালোভাবে চিনতে পারে? বর্তমানে পার্সোন্যালিটি টেস্টের সাফল্যের মাত্রা ৭০ শতাংশের কিছুটা বেশি৷ অর্থাৎ, এই প্রযুক্তি এখনো মানুষকে শতভাগ চেনার পর্যায়ে আসেনি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবিষ্কার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ