চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
চরিত্র মানব জীবনের মহামূল্যবান সম্পদ ও মুকুটম্বরূপ।তাই চারিত্রিক গুণই মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তােলে, মহৎ করে এবং এই পৃথিবীতে অমর করে রাখে। সম্পদ হারিয়ে গেলে কখনাে কখনাে পুনরুদ্ধার করা যায়, কিন্তু চরিত্র এমন এক সম্পদ যা হারালে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না।
প্রিয়নবী (সা.) এর দৃষ্টিতে সেরা ১০ মানুষের মধ্যে একজন হলেন চরিত্রবান মানুষ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত একটি রেওয়াতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (সহিহ বোখারি : ৩৭৫৯)। অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে প্রাসাদ নির্মাণের জন্য জামিন হব এবং তার হিসাবের পাল্লা অনেক ভারী হবে। (আবু দাউদ শরীফ)।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। পার্থিব জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলেও নৈতিক চরিত্র অনুশীলনের বিকল্প নেই। নতুন প্রজন্মকেও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে নৈতিকতা চর্চা করা অপরিহার্য কর্তব্য। রাষ্ট্রে বা সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরণের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হলো চরিত্র। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর: ৩৫৫৯)।
চরিত্র শুধু মানুষকে সুন্দর করে না, চরিত্রের মাধ্যমেও যে অপরিসীম সওয়াব লাভ হয় তা আমরা অনেকে জানি না। এর সওয়াব এত বেশি যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কেয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গোনাহ পরিমাপের জন্য মিজানে ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো- উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) রোজা পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৯৮)।
চরিত্র এবং চরিত্রবান ব্যক্তি দুটোই পরশপাথরের মতো। উত্তম চরিত্র একজন মানুষকে সোনার মানুষে পরিণত করে আর একজন চরিত্রবান সোনার মানুষের প্রভাবে তার আশে মানুষ তথা পুরো একটা সমাজ হয়ে উঠে মহৎ জীবনের অধিকারী। উত্তম চরিত্রের কাছে পার্থিব অর্থ খুব নগন্য। অর্থ আর ক্ষমতা দিয়ে চরিত্রকে কেনা যায় না। মানব জীবনে চরিত্রই সবচেয়ে বড় অলংকার।নির্মল চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তির চেয়ে অধিক ধনবান এই ধরায় আর কেউ নেই।মূল্য দিয়ে এটা কিনা যায় না। চরিত্র মানব জীবনকে সুশোভিত করে।
যখনই যে রাষ্ট্রে বা সমাজে চারিত্রিক অধঃপতন শুরু হয় সেখানে বিভিন্ন বিপদ ও গযব আসতে শুরু করে। পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লাহ তায়ালা বড় বড় যত শাস্তি মানুষকে দিয়েছেন, সেগুলোর কারণ ছিল চারিত্রিক অধঃপতন ও অশ্লীলতার ছড়াছড়ি।
কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা হজরত লূত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের অশ্লীলতা, চারিত্রিক অধঃপতন ও তাদের ওপর নেমে আসা ভয়াবহ শাস্তির কথা আলোচনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমি উক্ত জনপদের উপরকে নিচে করে দিলাম এবং তার ওপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সুরা হুদ : ৮২)।
প্রতিটি মানুষকে তার চরিত্র রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া খুবই জরুরি। চরিত্রের অধঃপতন থেকে বাচতে প্রথমে মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব এই আত্মপরিচয় সব সময় স্মরণ রাখতে হবে আর সেটিই চরিত্রহীনতা থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করবে। আত্মসম্মানবোধও চরিত্রকে রক্ষা করে। আমাদের চরিত্র হতে হবে হযরত ইউসুফ (আ)-এর মত। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন ও আমাদের চরিত্রকে হেফাজত করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।