Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে স্টুডেন্ট ভিসায় জালিয়াতি : যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ১৯ শিক্ষার্থী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৪৮ পিএম | আপডেট : ৮:৫২ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

সিলেটে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাঠানোর নামে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৯ শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটির পঞ্চম তলাস্থ ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রসেসিংয়ে জাল কাগজপত্র জমা দিয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির মাহবুব। শিক্ষার্থীরা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেকের ৩ হাজার পাউন্ড করে কেটে রাখছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে যেতে সিলেটের ১৯ শিক্ষার্থী দ্বারস্থ হন ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’ নামের প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির মাহবুবের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা টাকা ও কাগজপত্র জমা দেন। শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ইউনিভার্সিটি অব দ্যা ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড (ইউডাব্লিউই) -এ ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসব শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট ও কাগজপত্র ভিএফএস গ্লোবালে জম দেওয়া হয়। সব শিক্ষার্থীর কাগজপত্র প্রসেসিং করেন মাহবুব। কাগজপত্রের সাথে আর.এম. গ্রুপের ‘জব সার্টিফিকেট’ও তৈরি করে দেন তিনি।

মূলত, স্টুডেন্ট ভিসায় জব সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর যদি ‘স্টাডি গ্যাপ’ (শিক্ষাবিরতি) বেশি থাকে, তখন জব সার্টিফিকেট দিতে হয়। এর মাধ্যমে বুঝানো হয় যে, ওই শিক্ষার্থীর স্টাডি গ্যাপের কারণ হচ্ছে তিনি কাজে লেগে গিয়েছিলেন। এদিকে, পাসপোর্ট ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাসখানেক পরে ইউকে হোম অফিস (ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়। সেখানে জানানো হয়, যে জব সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া! এর ফলে এসব শিক্ষার্থীকে ১০ বছরের ব্যানড (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে।

এমন ই-মেইলে শিক্ষার্থীরা বড় ধাক্কা খান। তারা ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’-এর মুনতাসির মাহবুবের কাছে ছুটে যান। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ইউকে হোম অফিসে রিভিউ করেন মাহবুব। এরপর হোম অফিস আবারও আর.এম. গ্রুপে খোঁজ নেয়। তারা জানতে পারে, যে জব সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। ফলে রিভিউ বাতিল হয়, বহাল থাকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের শঙ্কায় নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। তারা জানান, তারা নিজেরাই জব সার্টিফিটেক তৈরি করে জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুনতাসির মাহবুব তাতে কর্ণপাত না করে নিজেই জব সার্টিফিকেট তৈরির দায়িত্ব দেন।

এ বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায় উভয়পক্ষের মধ্যে হওয়া একটি অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে। ভিসা না পাওয়া এবং যুক্তরাজ্যে ব্যানড হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মুনতাসির মাহবুবের কাছে ছুটে যান। তাদের ক্ষোভ নিবৃত করতে মাহবুব একটি অঙ্গীকারনামা করেন। গত ৩১ মে করা ওই অঙ্গীকারনামা ৪ পৃষ্ঠার। ৩০০ টাকা মূলের চারটি স্ট্যাম্পে এই অঙ্গীকারনামা করা হয়েছে। অঙ্গীকারনামায় মুনতাসির মাহবুব বলেন, “আপনারা ২য় পক্ষগণ (শিক্ষার্থীরা) নিজ নিজ দায়িত্বে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের (কাজের অভিজ্ঞতা) কপি প্রদান ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু, আমি ১ম পক্ষ তাহাতে বাধা দেই এবং আপনারা ২য় পক্ষগণকে আর.এম. গ্রুপের ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের কপি আমি ১ম পক্ষ নিজে তৈরি করে দিবো এবং তাহাতে কোন সমস্যা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেই।”

“আমি ১ম পক্ষ আরও অঙ্গীকার করি যে, উক্ত ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের কাগজপত্র জমা প্রদান করিলে যদি কোনো সমস্যা হয়; তবে যাবতীয় দায়ভার আমি ১ম পক্ষের উপর পড়িবে এবং যাবতীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবো মর্মে অঙ্গীকার করি।” এদিকে, স্টুডেন্ট ভিসা না হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় জমাকৃত সব টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু এই ১৯ শিক্ষার্থী জাল কাগজপত্র ভিসার জন্য জমা দেওয়ায় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ হাজার পাউন্ট করে কেটে রাখছে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ইউনিভার্সিটি অব দ্যা ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড (ইউডাব্লিউই)। ১৯ শিক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৭৫০ পাউন্ড জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার পাউন্ড কেটে রাখা হচ্ছে। জানা গেছে, ভয়াবহ জালিয়াতির শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা গত ৪ ডিসেম্বর মুনতাসির মাহবুব ও তার স্ত্রী ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’র চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস রাফাকে সিলেট নগরীর কোতোয়ালী থানায় সোপর্দ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করতে চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এবারও ছলে-বলে-কৌশলে থানা থেকে বেরিয়ে যান মাহবুব ও তার স্ত্রী। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরেকটি অঙ্গীকারনামা করেন তারা। এবার সময় নিয়েছেন দুই মাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। ভিসা হলো না, ব্যানড খেলাম, টাকাও গেল। আমরা ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি। এই প্রতারণার, জালিয়াতির উপযুক্ত বিচার চাই আমরা।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুনতাসির মাহবুবের দুটি ফোন নাম্বারে দফায় দফায় কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নগরীর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী একজন লোককে তার স্ত্রীসহ আমাদের নিকট সোপর্দ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই মাসের সময় নিয়ে একটি অঙ্গীকারনামা করেছেন। দুই মাসের মধ্যে তিনি বিষয়টির সমাধান করবে বলে অঙ্গীকার করেছেন। উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ