Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুটপাথ দখলমুক্ত হবে কবে?

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

রাস্তার দুই পাশে ফুটপাতগুলো তৈরির উদ্দেশ্য কী ছিল তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। সভ্য দুুনিয়ার প্রতিটি দেশে শহরাঞ্চলে সড়কের পাশে ফুটপাত থাকে পথচারীর যাতায়াতের সুবিধার্থে। আমাদের দেশেও সেকারণেই ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা দেখে-শুনে মনে হচ্ছে ফুটপাতগুলো পথচারীর চলাচল নয় বরং পাড়ামহল্লার মাস্তান, রাজনৈতিক টাউট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অসৎ সদস্যদের আয়বর্ধনের কাজেই শুধু লাগছে।

রাজধানীর কোথাও ফুটপাতে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ নেই বললেই চলে। অবৈধ দখলদারির কারণে পথচারীরা ফুটপাতের বদলে সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করে কখনো কখনো দুর্ঘটনায় পড়ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত ও সংস্কার করতে প্রতি বছর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। মাঝেমধ্যেই দুই সিটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে। প্রতিটি অভিযানে ন্যূনতম ৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকাও খরচ হয়। উত্তর সিটির সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী সংস্থাটি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাস্তা, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন উন্নয়নে ১৯০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। দক্ষিণ সিটি ব্যয় করেছে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে ফুটপাথ উন্নয়নে এ অর্থ খরচের সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।

ফুটপাত ও রাস্তা দখল ঘিরে চলে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। পুরো প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক শক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এলাকাভেদে প্রতিটি দোকানে দৈনিক ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। এসব দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েও আসে আলাদা আয়। তাই উচ্ছেদের পর আবার হয় দখল। ফুটপাতে পথচারীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে কড়া হতে হবে। এদের যারা লালনপালন করে তাদের সামাল দিতে হবে। নতুবা উচ্ছেদের নামে সময় ও অর্থের অপচয়ই শুধু ঘটবে। ফুটপাথ মুক্ত হবে না।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানাযায়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বে নবাবপুর রোডের গোড়া পর্যন্ত সড়কটি অন্তত ৬০ ফুট চওড়া, দৈর্ঘ্য অন্তত ২০০ ফুট। কয়েক বছর ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফুটপাতের হকাররা সড়কের পুরো অংশ দখল করে ব্যবসা পেতে বসেন। সড়কের উপর দোকান, সড়ক বিভাজকের উপর দোকান, পাশের ফুটপাতেও দোকান। সর্বত্রই হকারদের নানা পণ্যের পসরা। এ ছাড়া জিপিও থেকে শুরু করে নর্থ-সাউথ রোড পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে ফুটপাতের সঙ্গে এমনভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা জমে উঠেছে যে, এ পথে চলাচল করতে গেলে নবাগতরা ভীষণ ভয়ে থাকেন। ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের সামনে-পেছনের ফুটপাত ও রাস্তারও প্রায় একই দশা। এমনভাবে বিচিত্র সব দখল, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের কোনো উপায় নেই। গুলিস্তানের ফুটপাত ও রাস্তা সোনার চেয়েও দামি। এখানে ১০ বর্গফুট রাস্তার একাংশের দৈনিক ভাড়া ৫০০ টাকা। ফুটপাতের ভাড়া আরো বেশি। হকার ও ফুটপাত ব্যবসায়ীদের রাস্তায় পণ্য বিক্রির সুযোগ দিয়ে ভাড়া আদায় করা হয়। গুলিস্তান সিনেমা হলের পাশের রাস্তার পুরোটাই দখল করে বসেছে পোশাক, জুতা, ব্যাগ, ফল, নতুন টাকাসহ নানা ধরনের দোকান। রাস্তায় যানবাহন চলার কোনো উপায় নেই। শুধু গুলিস্তান নয়, পল্টন, দোয়েল চত্বর, মতিঝিল, মগবাজার, ফার্মগেট, মাজার গেট, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, নিউ মার্কেট, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুরসহ পুরো রাজধনীর ফুটপাতের একই চিত্র।

এদিকে, হকারদের কারণে ফুটপাতে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস একটি সংক্রমণ রোগ হওয়ায় বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অফিসের উদ্দেশে রওনা হই কিন্তু রাস্তায় চলাচল করতে গেলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একজন পথচারী অন্যের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে চলাচল করছেন। কোন মানুষ ভুলবশত বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের না হলে অন্যজনের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এতে শুধু একজন মানুষ নিজের নয় পুরো পরিবারের হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন।

করোনাভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা পরীক্ষা ছাড়া কখনই নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কোন মানুষের জ্বর হলে পরীক্ষা ছাড়াই তিনি যদি রাস্তায় বের হোন তখন অন্য পথচারীরা বুঝতে পারবেন না। মানুষটি করোনায় আক্রান্ত কিনা। করোনার মতো এমন মরণব্যাধি রোগেও ফুটপাত দখলে রেখেছেন হকাররা। ফলে হাঁটতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। ফুটপাত হকার মুক্ত থাকলে পথচারীরা কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারতেন।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন