পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর বিতর্কিত কর্মকান্ড ও তাকে কানাডায় ঢুকতে না দেয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য নিয়ে আইএমএফ’র প্রশ্ন এবং সর্বশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব-এর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো ঘটনায় দেশের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসব ঘটনা দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ও দুঃখজনক। এর মধ্যে র্যাব-এর সাবেক ও বর্তমান ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব-এর ওপর পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ৭ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালাক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি এবং ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চীন, মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অন্যকোনো বিষয়ে বিশ্বে প্রশ্ন তোলা যেকোনো দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। তার চেয়েও অসম্মানের ক্ষমতাধর কোনো দেশ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট দেশের উপেক্ষা করার সুযোগ নেই এবং উচিৎও নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ, আমাদের পুলিশ কখনো কাউকে ক্রস ফায়ার বা বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা করে না। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সুন্দরভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছে।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আইনবিদ ও সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন এবং সমালোচনাও করেছেন। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন এবং সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। যে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সে এবং তার মিত্রদেশগুলো যে এ অভিযোগ থেকে মুক্ত, তা বলা যায় না। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে এবং এতে যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, এ নিয়ে বিশ্বে সমালোচনা হলেও তারা তা আমলে নেয়নি বা নিচ্ছে না। ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের প্রতিনিয়ত অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করছে এবং বিজেপি সরকার মুসলমানদের বিতাড়নে বৈষম্যমূলক আইন করেছে, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র টুঁ শব্দটি করছে না। মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এ দ্বৈতনীতির কথা কারো অজানা নয়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম পরাশক্তি হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তার পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশের পক্ষে তার পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি, বিনিয়োগ, ঋণ সহায়তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করার সুযোগ সীমিত।
যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়ে। বিশেষ করে তার মিত্র প্রভাবশালী দেশগুলো তার নীতি অবলম্বন করে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশ তার সিদ্ধান্তকে পরোক্ষভাবে হলেও সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্র যে দেশকে যেভাবে দেখে, তারাও অনেকটা সেভাবেই দেখে। বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের যে ৭ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে আসা সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠিত। ফলে এর দায় সকল বাহিনীর ওপর কম-বেশি বর্তায়। এ প্রেক্ষিতে, নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং দেশের জন্য যেমন অমর্যাদাকর ও অপ্রত্যাশিত, তেমনি এক ধরনের বার্তাও বটে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া জরুরি। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কিভাবে মোকাবেলা ও অতিক্রম করা যায়, এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের ভাবমর্যাদা আরও উজ্জ্বল করতে অধিক তৎপর হতে হবে। বিশ্বের অন্যকোনো দেশে যাতে এর প্রভাব না পড়ে, এজন্য এখন থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।