পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অসময়ের বৃষ্টিতে আমন ধান, আলু, সবজিসহ অন্যান্য রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্বপ্নে ফসল বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে চোখের পানিতে ভাসছেন। ধানের ক্ষেত, সবজি, বীজতলাসহ সবই পানিতে তলিয়ে গেছে। রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, সরিষা, গম ও আলু রোপণের পর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এভাবে কয়েক লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা দার-দেনা করে জমিতে আবাদ করেছিলেন। এ অবাদি জমি অসময়ের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। দু’চোখে শুধু অন্ধকার দেখছেন। আবার নতুন করে জমি প্রস্তুত করে চাষাবাদ করার সামর্থ্য অনেক কৃষকের নেই। যে দার-দেনা করেছেন তাই বা শোধ করবেন কীভাবে।
এ অবস্থায় কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারের বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে আমন ধানের এবং সবজির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাতে বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। চাল, আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন ধারণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই সরকারকে এখনই বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অসময়ে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে দেশের প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মধ্যে যশোর অঞ্চলের ছয় জেলার ৯৪ হাজার ৫৩৮ হেক্টর ও বরিশাল অঞ্চলের চার জেলায় ৩৮ হাজার ৪২৯ হেক্টর আবাদি জমির ধান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদি আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া শুধু মুন্সীগঞ্জ জেলাতেই ১০ হাজার হেক্টর জমিতে লাগানো আলুর বীজ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষকদের ধারণা প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার হেক্টর জমিতে লাগানো আলু পানিতে তলিয়ে গেছে।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। এর মধ্যে দেশের প্রায় ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। এই আবাদি জমির প্রায় দেড় লাখ হেক্টরের ধান বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ লাখ টন কমে যাবে। এতে আগামীতে চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশিষ্ট কৃষিবিদ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কৃষিপ্রধান এ দেশ কৃষি আর কৃষকের উন্নতি ছাড়া সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের কৃষকদের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ খুব যথেষ্ট নয়। কৃষি খাতকে প্রকৃত অর্থে আধুনিকায়নের ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট। সরকার অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। কিন্তু তাতে সার্বিকভাবে কৃষক বা কৃষিখাতের খুব একটা লাভ হচ্ছে না। কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কৃষকদের বিজ্ঞানসম্মত কৃষিকাজের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। তাহলে কৃষক অপ্রতুল সম্পদ কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারবে। এতে ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ড. ফরহাদ বলেন, অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। সহায়তা পেলে তারা নতুন করে আবার আলু বা সবজি চাষ করতে পারবে। তা না হলে এসব জমি পতিত পড়ে থাকবে। এতে করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে এবং ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে আমন ধানে এবং রবি শস্যে যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব খুব শিগগিরই বাজারে পড়বে। এতে মানুষের জীবন ধারণ আরও কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সরকারকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে এরই মধ্যে বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিনে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। শীতের সবজি বাজারে প্রচুর থাকলেও বৃষ্টির অজুহাতে শিম, কফি, বেগুন এসবের দাম বেড়ে গেছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ইনকিলাবকে বলেন, সরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় একেবারে ব্যর্থ। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই বারবার বলেছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণের কথা চিন্তা না করে ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সরকার বারবার ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এ তেলও এখন সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। নানান অজুহাতে যখন তখন ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমন ধান এবং আলুসহ রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এর সুযোগে এরই মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে একেবারেই ব্যর্থ। বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঘাটতি পর্যালোচনা করে তাতে যোগান দেয়ার জন্য সরকার আগাম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ করবে। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনাতেই ঘাটতি রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে এ নয় যে, ব্যবসায়ীদের ওপর সব কিছু ছেড়ে দিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে হবে। শুধু রেফারির ভ‚মিকা নয়, সরকারকে সক্রিয় পার্টিসিপেন্ট এর ভ‚মিকা পালন করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করতে পারে। যেমনটা এর আগে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে হয়েছে। এবারও উৎপাদনে ঘাটতির সম্ভাবনা থাকলে এজন্য আগাম পরিকল্পনা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। তা না হলে চালের দামেও পেঁয়াজের মতো নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।