চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তে মেতে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির পালাবদলে নেচে ওঠে গ্রাম-গঞ্জের সবুজ মাঠ। সবুজ প্রান্তর। ঋতুচক্রে শীত, সত্যিই মহান সষ্টার অপার মহিমা। শীত অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ঋতু। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাছে এ মৌসুম আরো প্রিয়।আর শীতকালকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনের জন্য ঋতুরাজ বসন্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ্ (সা.)বলেন- ‘শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ)। খালীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে।
শীতকালে আমরা অধিকহারে ঠান্ডা অনুভব করি এবং গ্রীষ্মকালে আমরা প্রচন্ড গরম অনুভব করি। এ দুই কালে ঠান্ডা ও গরমের প্রচন্ডতার কারণ কি তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে অভিযোগ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (প্রচন্ড উত্তাপের কারণে) আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচন্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা গরমের যে প্রচন্ডতা অনুভব করো তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।’ (সহিহ বুখারি)।
শীতকাল আল্লাহ তা’য়ালার দেওয়া নিয়ামত ও ইবাদতের বিশেষ মওসুম বা সিজন। এই মওসুম বা সিজন যে ভাবে ফলফলাদির বিশেষ সিজন ঠিক তেমনি আ’মালের জন্যও বিশেষ মওসুম বা সিজন। কাজেই শীতকালের এই মওসুমকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য মুমিনের জন্য কিছু উওম ইবাদত নিম্নে তুলে ধরা হলো : শীতকালের রোজা রাখা। ঈমানদারের জন্য শীতকাল বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। হাদিসে এসেছে, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৫) শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট।
তাই শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই কারো যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করে নেওয়া। তা ছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি এক দিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৪০)।
শীতকালের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো : প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে শীত ও শৈত্যপ্রবাহ। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড়-কাঁপানো শীতে নাকাল দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা : দাহার, আয়াত : ০৮)। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় শীতকালে অনেক গরিব মানুষকে কষ্ট করতে হয়। শীতার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় বস্ত্র দিয়ে জান্নাতের মহা নিয়ামত লাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৯)। আমাদের নিকটস্থ অভাবী মানুষটিকে একটি শীতবস্ত্র কিনে দিয়ে আমরাও পেতে পারি জান্নাতের সেই সবুজ রেশমি পোশাক।
শীতকালের ইবাদত হল তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা : শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। কেউ চাইলে পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত পড়তে সক্ষম হতে পারে। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৬)।
শীতকালের অজু ও গোসলের ব্যাপারে সচেতন হওয়া : শীতকালে মানুষের শরীর শুষ্ক থাকে। তাই যথাযথভাবে ধৌত না করলে অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় হয় না। আর অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। গ্রীষ্মকালে মানুষ ইবাদত-বন্দেগি স্বাভাবিকভাবে করলেও শীতকালে কিছুটা অলসতাবোধ করে। কেউ কেউ আবার শীতের তীব্রতার কারণে মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ কাজাও করে ফেলে। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে; এমনকি শীতের মৌসুমে গরম পানি দিয়ে অজু করলেও সওয়াবে কমতি হবে না। শীতের সময় প্রচ- ঠান্ডায় যাতে কেউ অজু করতে অবহেলা না করে, সে কারণে অজু ও নামাজের প্রতি যত্নবান হতে এবং বড় পুরস্কার ও ফজিলতের কথা এভাবে ঘোষণা করেছেন : ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না! যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তোমাদের গোনাহসমূহ মিটিয়ে দেবেন (তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন) আর (আল্লাহর কাছে) তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন- অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল! নবিজী সাল্লাল। লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- (শীত বা অন্য যে কোনো ঠান্ডার) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫১)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে শীতকালে ইবাদত বন্দীগি করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।