পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর নানাবিধ ও নানামাত্রিক অস্বচ্ছতা, খামখেয়ালি ও প্রতারণার কারণে দেশের ১০ কোটির বেশি মোবাইলফোন গ্রাহকের পকেট থেকে বছরে ঠিক কি পরিমান অর্থ লোপাট হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো হাতেই নেই। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সেবার মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত বিটিআরসি’র। নিবন্ধনের শর্ত অনুসারে, ইন্টারনেটের গতি ও সেবার মান নিশ্চিত করতে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি তার মূল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় অপারেটর কোম্পানীগুলো একদিকে জনগণের কাছ থেকে বছরে অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের মত অভিযোগও উঠেছে। এসব বড় বড় অভিযোগ সম্পর্কে বিটিআরসি রহস্যজনক ভূমিকা পালন করলেও এবার কলড্রপের কারণে মোবাইলফোন অপারেটরদের ফাঁকিবাজি একটি পরিসংখ্যান হাজির করেছে বিটিআরসি। তাদের হিসেবে মতে ২০২০-২১ অর্থবছরে কলড্রপের কারণে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের ক্ষতি হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণেই সাধারণত কলড্রপের মত ঘটনা ঘটে থাকে। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করলেও কলড্রপ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা বিটিআরসি’র দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের একটি নির্দেশনা অনুসারে, প্রতি মিনিট কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একমিনিট ফ্রি দেয়ার কথা থাকলেও অপারেটর কোম্পানীগুলো সে নির্দেশা কখনোই মানেনি।
মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপণ ও নানাবিধ অফারের সাথে বাস্তবের তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। গত অর্থবছরে ৫২.৫৯ কোটি কলড্রপ মিনিটের আর্থিক ক্ষতি সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ধরা হলেও বাস্তবে এর আর্থিক মূল্য আরো অনেক বেশি বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে নেটর্ওয়াক ডিজরাপশনের ক্ষতি শুধুমাত্র মিনিটের হিসাবে কমপেনসেট বা ক্ষতিপূরণ করা অসম্ভব। কথাবলা বা ইন্টারনেটে কাজ করার মাঝখানে নেটওয়ার্ক বিভ্রাটের আনুসাঙ্গিক ক্ষতির অংক অথর্নৈতিক ক্ষতির অংকের চেয়ে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসি বরাবরই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অদক্ষতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের নৈমিত্তিক স্বার্থ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিটিআরসির ব্যর্থতা, দুর্বলতা, অসঙ্গতি ও অস্বচ্ছতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোর দুর্নীতি-লুটপাটের সাথে বিটিআরসি’র একশ্রেণীর কর্মকর্তার সিন্ডিকেটেড যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। সেসব বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি দ্বৈতবেঞ্চে একটি রিটের শুনানি শেষে বিটিআরসির রেগুলেশন আইনের অধীনে কাজ করা মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে বিটিআরসি’র নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, মর্মে একটি রুল জারি করা হয়েছে। আমরা আশা করি, সে রুলের জবাবে বিটিআরসি তাদের যথাযথ ভূমিকার প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হবে।
গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতি ও সেবার মান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানীগুলোর ব্যর্থতা নিরসনে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে ও অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরকার শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো তার সুফল কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। অপারেটর কোম্পানী তাদের বেইজ স্টেশনগুলোকে ফাইবার অপটিক্যাল লাইনের দ্বারা সংযুক্ত করলে নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও কলড্রপ কমিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারত। সাবমেরিণ ক্যাবলে বিনিয়োগ করার সাথে সাথে এই নেটওয়ার্কের সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন বাস্তবায়নে বিটিআরসিকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা মানতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট অপারেটর কোম্পানীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সক্ষমতা বিটিআরসিকে দেখাতে হবে। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা নানাভাবে হাতিয়ে নেয়ার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে মোবাইলফোন অপারেটরদের বিরত রেখে সেবার মান বাড়াতে বিটিআরসিকে অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে দেয়া আদালতের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির মহাসরণিতে আমাদের অনেক সম্ভাবনা সত্যেও শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতির কারণে আর পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।