পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘যদি বর্ষে আগণে- রাজা যায় মাগনে’। বহুল প্রচলিত এই খনার বচনের অর্থ হলো, যদি অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে দুর্ভিক্ষে রাজাকে ভিক্ষা করতে হবে। হঠাৎ অকালে দেশজুড়ে বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পার হচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই অঝোর ধারায় বর্ষণের মধ্যদিয়ে। ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে অসময়ের এই বৃষ্টিপাত বিশেষ করে কৃষি-খামার সেক্টরে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। গতকাল সোমবারসহ দু’তিন দিন ধরে সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, অনেক স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে ১৬৩ মিলিমিটার। ঢাকায়ও এ সময়ে ১৩২ মি.মি. বৃষ্টি ঝরেছে। এতে করে ফসলের মাঠে মাঠে কৃষকের পাকা, আধপাকা আমনধান এমনকি জমিতে কেটে রাখা ধান এবং বোরো বীজতলা ভূমিস্যাৎ হয়েছে কিংবা পানিতে ভাসছে। ভাসছে ফল-ফসল, সবজিক্ষেত। পানিতে ভিজে-ডুবে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সরিষা, ভুট্টা, তৈলবীজ, বাদাম, তিল, তিসি, মসুর, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, আলুসহ শাক-সবজি ক্ষেতের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় ও মধ্যাঞ্চলে ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ, শুঁটকির মহাল। চোখের সামনেই ফসলের সর্বনাশ দেখে কৃষকের বুকে চাপা কান্না ও আর্তনাদ উঠেছে সবখানে।
কৃষি ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে পড়ায় এর সরাসরি আঘাত না এলেও এর প্রভাবে অসময়ের বৃষ্টিপাতে কৃষি ও কৃষকের জন্য উপকারের তুলনায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। উপকার সীমিত। অপকারই বেশি। বৃষ্টির ধারায় শুকনো মাটি ভিজে সতেজ সজীব হয়েছে। কেটে গেছে রুক্ষ আবহাওয়া। কিন্তু ফসলহানির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এলাকাওয়ারি বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরির কাজ শুরু করেছে। এদিকে আকাশ মেঘলাসহ আজ মঙ্গলবারও দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
বিগত দুয়েক মাসের অনাবৃষ্টিতে ফল-ফসলি জমি, মাঠ-ঘাট দ্রুত শুকিয়ে প্রায় চৌচির। এমনকি শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই খাল-বিল, নদী-নালাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। গেল নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অঞ্চলভেদে হিসাবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এক ফোটা বৃষ্টিও ঝরেনি। এ অবস্থায় গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ দুর্বল নিম্নচাপ, লঘুচাপ আকারে ক্রমেই কেটে যাওয়ার সময় শনিবার থেকে দেশে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিতে পরিবেশ-প্রকৃতি স্নিগ্ধ হলেও কৃষিখাতে আচমকা আঘাত এসেছে। এতে ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আসাদুল্লাহ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অনেক দিন ধরে মাটি শুষ্ক ছিল। এখন বৃষ্টির পানিতে মাটি সিক্ত হয়েছে। পানি শুষে টেনে নেবে। জমিতে পানি দীর্ঘসময় জমে থাকবে না। এই বৃষ্টিপাত ফসলের জন্য ভালোই হবে। তবে বৃষ্টির কারণে সরিষা, গম চাষে বিলম্ব হবে। শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির জন্য বৃষ্টি উপকারি। জমিতে কৃষকের সেচের বিপুল খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। তবে আরও কিছুদিন বৃষ্টি হলে কৃষিখাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এদিকে ‘জাওয়াদ’ ক্রমেই ভারতের উড়িষ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে দুর্বল লঘুচাপে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় সবখানে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কিংবা আংশিক মেঘলাসহ অনেক জায়গায় হিমেল হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে ১৬৩ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ১৩২, ফরিদপুরে ১৫২, চট্টগ্রামে ৮১, কুমিল্লায় ১০৩, মাদারীপুরে ৯০, চাঁদপুরে ৭০, শ্রীমঙ্গলে ৫৪, খুলনায় ৪৯, সাতক্ষীরায় ৭৩, বরিশালে ৪২, পটুয়াখালীতে ৪৩সহ অধিকাংশ স্থানে হালকা, মাঝারি, ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এরআগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফরিদপুরে ৭৬ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ৪৪, টাঙ্গাইলে ১৯, মাদারীপুরে ৪৫, গোপালগঞ্জে ২৯, ময়মনসিংহে ৬, নেত্রকোণায় ৭, চট্টগ্রামে ১২, রাঙ্গামাটি ও স›দ্বীপে ৬, কুমিল্লায় ৩১, চাঁদপুরে ২৯, ফেনীতে ২২, কুতুবদিয়ায় ১৩, সিলেটে ৪, শ্রীমঙ্গলে ১২, রাজশাহীতে এক, পাবনা ১১, খুলনা ও মংলা ২৫, সাতক্ষীরা ৩১, যশোর ৬৮, চুয়াডাঙ্গা ৫০, কুষ্টিয়া ৪২, বরিশাল ও পটুয়াখালী ১৪, ভোলায় ৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর বিভাগে বিক্ষিপ্ত হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে এবং অন্যান্য বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমতে পারে। এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা হ্রান পেতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরো দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলে অবস্থান করছে। এটি আরও দুর্বল ও গুরুত্বহীন হয়ে কেটে যাবে।
লঘুচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, বরিশাল অঞ্চলে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমির পাকা আমনধানে মই দেওয়ার মতো দুর্যোগ নিয়ে এসেছে ‘জাওয়াদ’। ‘বাংলার শস্য ভান্ডার’ বরিশাল অঞ্চলে মাঠে আমনের ছড়া যথেষ্ট আশা জাগালেও ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ফসল নিয়ে কৃষকের কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ গভীর হচ্ছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। ধানের ছড়া হলুদ বর্ণ ধারণকালেই ‘জাওয়াদে’ ভর করে এই বৃষ্টিতে মাজরা পোকার আক্রমণ এবং ধান মাটিতে কাৎ হয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি করছে। ধানে চিটা হওয়ার শঙ্কাও বাড়ছে। ভাটি এলাকা বরিশালে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২৫ ভাগ। প্রায় ৭৫ ভাগ আমন ফসল নিয়ে কৃষকের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কা থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই থেকে ব্লক সুপারভাইজারদের সরেজমিন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে গতকাল বিকেলের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এর প্রভাবে বৃষ্টিসহ গত দু’দিন বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যা এ সময়ে আমনের জন্য অনুকূল নয়। আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে।
খুলনা থেকে ডি এম রেজা জানান, টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে খুলনায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার রূপসা, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ায় সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। বোরো বীজতলা তলিয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানে। আমনের ক্ষেতে পানি জমেছে। শীতকালীন তরিতরকারির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে। উপক‚লীয় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। জোয়ারের পানির চাপে জেলার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে জেলার আমন ও বোরো বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান এখনো নিরূপন করা হয়নি। দুয়েক দিন সময় লাগবে।
যশোর থেকে শাহেদ রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র যশোরে ভারী বর্ষণ হয়েছে। বৃষ্টিতে কৃষকের পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি যদি দীর্ঘ হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে জানান কৃষকেরা। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, দুদিন আগে ১২ কাটা জমির আমন ধান কেটে রেখেছি। দুদিন ধরে বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে গেল। বৃষ্টি যদি অব্যহত থাকে ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এই কৃষক। বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর জেলার কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলা শেষ পর্যায়ে। বৃষ্টিতে শীতকালিন সবজি, মসুর ও সরিষার ক্ষতি হবে। এতে কৃষিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চুু জানান, ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে সরিষা ও আমন ধান ভাসছে। সবজি ক্ষেতে পানি জমায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি গ্রামের কৃষক লালটু, শরিফুল, মিজানুর রহমান জানান, তিনদিন ধরে বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক বাড়বে। বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন শ্যামনগর উপকূলের কৃষক। অসময়ের এই ভারী বর্ষণে সবজিসহ হাজার হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিতে কর্তকৃত আমন ধান পানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, অসময়ের এই বৃষ্টির কারণে তারা সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে কোন কোন জায়গায় জমিতে কেটে রাখা আমন ধান তলিয়ে আছে। কিছু সবজি ক্ষেতেও পানি জমে আছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানতে পারেননি।
শরণখোলা (বাগেরহাট) থেকে সান্তানুর রহমান খোকন জানান, জাওয়াদের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টিতে সুন্দরবনের দুবলারচর ডুবে যাওয়ায় জেলেদের শুঁটকির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে জেলেদের নৌকা ও ট্রলার সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। দুবলার চরের মাঝেরকিল্লা থেকে চট্টগ্রামের জাহিদ বহদ্দার ও শরণখোলার জেলে ইউনুস আলী ফকির জানান, রোববার রাতে জাওয়াদ দুবলারচর অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এসময় প্রবল বর্ষণের সাথে বঙ্গোপসাগরের পানি বেড়ে ৩/৪ ফুট উচ্চতায় মাঝেরকিল্লাসহ আশেপাশের চরসমূহ ডুবে যায়। পানিতে সেখানের কোটি টাকার শুঁটকি মাছ ভিজে নষ্ট এবং বিপুল পরিমাণ ঘেরের মাছ সাগরে ভেসে গেছে।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) থেকে ইসমাইল খন্দকার জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কৃষকদের চোখে এখন কষ্টের পানি। দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে সিরাজদিখান উপজেলার আলু ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার আলু চাষী এখন বিপদে। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। লগ্নি করে সুদে টাকা এনে আলু রোপণ করেছেন অনেক কৃষক। সেই আলু এখন বিনষ্ট হওয়ার পথে। চাষিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহর মধ্যে যারা আলুবীজ রোপণ করেন তাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ আলুর জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবার ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু বপণ করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে বেশিরবাগ জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি থামলে কৃষকরা তাদের আলু জমি থেকে পানি সেচের মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে সিরাজদিখানে আলু চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) থেকে মো. রনি শেখ জানান, জাওয়াদ’র প্রভাবে অকাল বর্ষণে আলুর জমিতে পানি জমে গেছে। এতে সদ্য রোপণ করা আলুবীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানিতে প্রতিনিয়ত কৃষকের জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের বুকে হাহাকার উঠেছে। গত বছর আলুতে বিপুল পরিমাণ লোকসানের পর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক যখন ধারদেনা করে আলু আবাদ শুরু করেছেন, তখন টানা এই তিন দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের জমিতে পানি জমে আলুবীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার প্রায় ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ধীপুর, মান্দ্রা, পাঁচগাঁও, চাঠাতিপাড়া, কাইচমালধা, ফজুশা, আড়িয়ল, বালিগাঁও, যশলং চর ছটফটিয়া এলাকায় আলু জমিগুলো পানিতে তালিয়ে আছে। চর ছটফটিয়া গ্রামের আলু চাষী মো. মমিন শেখ আলু ক্ষেত ডুবে যেতে দেখে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, গতবার আলু চাষ করে অনেক লোকসান দিয়েছি। এবার ঋণ করে আলু বীজগুলো লাগাই। এই বীজ আলু পঁচে যাবে। সংসার কীভাবে চলবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।