পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র অগ্রবর্তী অংশ গতকাল শনিবার রাতে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের আকারে ঝাপটা দিতে শুরু করেছে। ‘জাওয়াদ’র মূল অংশ বা ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ আজ রোববার আঘাত হানছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ ‘জাওয়াদ’ পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকা থেকে সরে আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর গতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ শুক্রবার রাত থেকে দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। সউদী আরবের দেওয়া ‘জাওয়াদ’ নামের অর্থ ‘উদার’ বা ‘মহান’। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ দীর্ঘ সময় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানের কারণে ভারতের উপকূলে আঘাতের সময়ে দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ বা নিম্নচাপ আকারে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পরে এটি আরো শক্তি হারিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে যেতে পারে। ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে গতকাল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা মেঘলাসহ, হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় সীতাকুন্ড ও কুতুবদিয়ায় ২ মিলিমিটার। উপকূলভাগ ও নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। প্লাবিত হয়েছে অনেক নিম্নাঞ্চল।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে দেশের দক্ষিণ উপকূলে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামসহ চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। ‘জাওয়াদ’ ও মেঘ-বৃষ্টি কেটে গেলে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস ও মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বাড়বে শীতের প্রকোপ।
গতকাল রাতে সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল সন্ধ্যায় ‘জাওয়াদ’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮২৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
‘জাওয়াদ’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার আন্দামান সাগর ও এর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে একই স্থানে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং রাতে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে শুক্রবার সকাল থেকে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে। একই দিনে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদে’ পরিণত হয়।
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অনেক স্থানে আকাশ মেঘলা অথবা মোঘাচ্ছন্ন এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৩.৯ এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ৩১.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ২৬.৭ এবং সর্বনিম্ন ১৯.৯ ডিগ্রি সে.। উপকূলীয় অঞ্চলে বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া।
আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুছ জানান, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. কমতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বগুড়া ব্যুরো : বগুড়ায় গতকাল সারাদিনই ছিল মেঘলা আকাশ ও গুমোট আবহাওয়া। মাঝে মাঝে হালকা ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরে। অন্যদিনের তুলনায় শীত অনুভ‚ত হয় বেশি। শহরে মানুষের আনাগোনাও ছিল তুলনামূলক কম।
সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখার সময় বগুড়া আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেরসিয়াস কমে যাওয়ার অর্থ হল শীত নামবে দ্রুত। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবেই দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।