Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুজন’র গোলটেবিল বৈঠক: উপকূলের জলাবদ্ধতা নিরসনে দখল উচ্ছেদ ও নদী খাল খনন জরুরী

সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৩২ পিএম

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এরই সাথে মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে দেশের দক্ষিণ উপকূল জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। দিনদিন এই জলাবদ্ধতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগামী কোন এক সময় সাতক্ষীরার উপকূলভাগ পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলা শহর সাতক্ষীরাও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। উপকূলজুড়ে জলাবদ্ধতা এখন এক ভয়ানক আতংকের নাম।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরও বলেন, জরুরী ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ না করলে এ অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু পালন স্থবির হয়ে পড়তে পারে। নোনা পানিতে উপকূল সয়লাব হচ্ছে এবং সেই সাথে পরিবেশ ও শ্যামল প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

সুজন’র জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আরিফুর রহমান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অনেকগুলো নদীর সংযোগ রয়েছে। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নানা কারণে এই সমন্বয় না থাকায় আমাদের দেশের নদীগুলো মরণোন্মুখ হয়ে উঠছে। বাড়ছে নদীভাঙন। মানুষ হারাচ্ছে তার সহায় সম্পদ। সেইসাথে সাতক্ষীরাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল হয়ে পড়ছে জলাবদ্ধ। এই দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারের যেমন মহাপরিকল্পনা দরকার পাশাপাশি প্রশাসন এবং জনসম্পৃক্ত সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ, নদীখাল দখল করে মাছের চাষ, নদীতে নেটপাটা দেওয়া বন্ধ করতে না পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের আরও সোচ্চার হতে হবে। তাদেরকে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজে নামতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে নদীর বর্তমান অবস্থা, নদী অথবা প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে প্রচলিত আইনসমূহ, বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত সমূহ তুলে ধরা হয়।

এতে সাতক্ষীরার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, তালা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটাসহ ৭টি উপজেলার নদনদী ও খালসমূহের বর্তমান অবস্থাও তুলে ধরা হয়।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তারা বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

বক্তারা নদীর দুইপাশ দখলদার উচ্ছেদ, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ বন্ধ করা, কৃষিজমি নষ্ট করে বাড়িঘর তৈরী না করা, সাতক্ষীরা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, জেলার সবগুলো নদী ও খাল খননের আওতায় এনে পানিপ্রবাহ সচল করা, বাড়িঘর নির্মাণ আইন অনুসরণ করা, বসতঘরের ভিটা উঁচু করা, পুকুর জলাশয় ভরাট বন্ধ করা, সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল খননের নামে চলমান দুর্নীতি রোধ করার আহবান জানান।

বক্তারা আরও বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদী দখলকারীর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দেশের নদী দখলকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ী চাষের নামে ব্যবসা বন্ধ করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া সব খালগুলো খনন করে নদীর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। স্থানীয়ভাবে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে সাতক্ষীরাবাসী মুক্ত হতে পারবে বলে গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, সনাক সাতক্ষীরার সভাপতি অধ্যাপক পবিত্র মোহন সরকার, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শহিদুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য শাহনাজ পারভিন মিলি, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, হাঙ্গার প্রজেক্টের রুবিনা আক্তার, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু নসর, প্রভাষক হেদায়েতুল ইসলাম, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, ফিংড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৈঠক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ