পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি, শিক্ষা কারিকুলামে ধর্ম শিক্ষার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এবং জাতীয় শিক্ষা কমিশনে হাইয়াতুল উলইয়ার প্রতিনিধি বাধ্যতামূলক রাখাসহ ৭ দফা দাবিতে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। বিকেলে গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাটহাজারি মাদরাসারা মুহতামিম মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে অংশ নেন। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন, নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, সালাউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সোবহানী, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী। বিকেল ৪ টা ১০ মিনিট থেকে সোয়া ৫ টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন হেফাজত নেতারা।
জানা যায়, মাওলানা মামুনুল হকসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে হেফাজত নেতাদের আলোচনা হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের কাজী বশীর মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হেফাজত আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন, মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। আরো বক্তৃতা করেন, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, নায়েবে আমির আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, দেওনার পীর প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মুফতী জসিম উদ্দিন, মুফতী মোবারক উল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম যশোরী, মুফতী হাবিুরর রহমান কাসেমী, মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা আব্দুল বাসেত খান, মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার, মাওলানা মীর ইদরীস নদভী, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, মাওলানা মাসুদুল করীম, মুফতী হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, মাওলানা ফয়সাল, মাওলানা জুনাইদ বিন ইয়াহিয়া, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার, মুফতী ইলিয়াস হামিদী, মাওলানা মুসতাকিম বিল্লাহ হামিদী, মাওলানা গাজী ইয়াকুব উসমানী।
হেফাজতে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি (রহ.) ঘোষিত হেফাজতের ১৩ দফা আন্দোলনে ক্ষমতা কেন্দ্রিক কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। হেফাজতে ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর রেখে যাওয়া আমানত এবং আমাদের পূর্বপুরুষ ওলামায়ে দেওবন্দ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছে এবং চলবে। তবে একজন মু'মিনের কাছে তার জানের চেয়েও ঈমান প্রিয়, এজন্য দেশের প্রত্যেকটা মুসলমানই হেফাজতের নেতা কর্মী বা সমর্থক। তাই যখনই ঈমান আকিদার বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের স্বার্থ সংরক্ষণে এবং হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নে ডাক আসবে তখন দল মত নির্বিশেষে, নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এজন্য সবার মানসিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টিকে ভয় করুন, বিশেষ করে মজলুম হাফেজ, আলেমদের চোখের পানিকে ভয় করুন। এসব জুলুম ও নির্যাতনের কারণে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা অবনতীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবংদেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
হেফাজত আমির বলেন, হজরত ইউসুফ (আ.) যখন কারাবন্দি ছিলেন তখন ওইদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সর্বশেষ নবী। পৃথিবীতে আর কোন নবী রাসূলের আগমন ঘটবে না, ওলামায়েকেরাম নবী রাসূলের উত্তরসূরী। তাদের বন্দি রেখে দেশে শান্তি এবং স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দেশের এ ক্রান্তি কালে অশান্তি ও দুরবস্থা থেকে মুক্তি এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষে প্রথমত হেফাজত নেতা কর্মীদের নামে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন এবং তাদেরকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে মজলুমদের কান্না বন্ধ করুন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, হেফাজত শাইখুল ইসলামের ১৩ দফা বাস্তবায়নের পক্ষে আগের নিজেদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ১৩ দফা হেফাজতের ঘোষিত এজেন্ডা। এর বাস্তবায়নের জন্য হেফাজত অতীততেও কাজ করে গেছে, আগামিতেও করবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে আমাদের অনেক আলেম-ওলামা বন্দী অবস্থায় কারাগারে দুর্বিষহ জীবন-জাপন করছেন। তাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ধ্বংসের মুখে। আলেম-ওলামাদের কেউ কেউ কারাগারে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থাতেও রয়েছেন। আমরা মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী হারুন ইজহার, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও মাওলানা নাছিরউদ্দীন মুনিরসহ হেফাজতের সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে যারা জামিনে বের হয়েছেন তাদেরকে প্রায় প্রতিদিন কোর্টের দরজার গিয়ে উপস্থিত হতে হচ্ছে। কোন মানুষের পক্ষে এভাবে মামলার হাজিরার নামে হয়রানি বরদাশত করা সম্ভব নয়। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৬ ও ২০২১ সালেরসহ হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আলেম-ওলামাদের এভাবে হয়রানি করবেন না। তাদের এসব মামলার বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিন। মামলা চালাতে চালাতে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিন।
শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের শিক্ষানীতি নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র করা হয়। ইতঃপূর্বে ২০১১ ও ২০১৬ সালে শিক্ষানীতি নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বাঁধার মুখে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। আমরা জানতে পেরেছি সেই ষড়যন্ত্র আবারো শুরু হয়েছে। এবার তারা ধর্মীয় শিক্ষার পরীক্ষাই বাতিল করে দিচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যে বিষয়ে পরীক্ষা থাকবে না সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কিভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে! এটা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেয়ারই নামান্তর। আমরা এ ষড়যন্ত্র মেনে নিতে পারি না। শাইখুল ইসলামের শিষ্যরা এখনো জীবিত আছেন। আমরা কোনভাবেই এ ধরণের জাতি ধ্বংসকারী সিদ্ধান্তকে মেনে নেব না। আমাদের দাবি অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামবিদ্বেষী লেখাগুলো বাদ দিতে হবে এবং সব শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর ১০০ নাম্বারের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সাথে জাতীয় শিক্ষা কমিশনে ‘'আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়ার'’ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, দিল্লীর মাওলানা সা'দ সাহেবের বাংলাদেশে আসাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশের দাওয়াতে তাবলীগের মধ্যে নজিরবিহীন বিভেদ তৈরি হয়েছে। ঘরে ঘরে, মসজিদে মসজিদে ফাসাদ তৈরি হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি এবারও ইজতেমা উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশে আসলে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে। শান্ত ও সুন্দর পরিবেশ নস্যাৎ হয়ে যাবে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, মাওলানা সা'দ সাহেবকে কোনভাবেই যেন বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।