Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা

এ মাসেই আসছে শৈত্যপ্রবাহ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আন্দামান সাগর ও এর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘটা তৈরি হচ্ছে। সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু-অন্ধ্র অথবা উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এটি বাংলাদেশের খুলনা-বরিশাল উপকূলও অতিক্রম করতে পারে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আসার আশঙ্কা কম। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে বৃষ্টির পরই শীত জেঁকে বসবে।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মধ্য আন্দামান সাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ বিহার ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এদিকে অগ্রহায়ণ মাস পড়েছে তৃতীয় সপ্তাহে। পঞ্জিকার পাতায় হেমন্ত ঋতু শেষের দিকে। ঘনিয়ে আসছে শীত ঋতুর পৌষ মাস। সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় রোদ ঝলমলে দিনের বেলায় গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে রাতের বেলা থেকে ভোর-সকাল পর্যন্ত বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলসহ অধিকাংশ জেলায় উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ভর করে শীত পড়ছে। সেই সাথে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা, কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে মাঠ-ঘাট, শহর-গ্রাম-জনপদ, নদ-নদী অববাহিকা।
গতকাল উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকায়ও পারদ নেমেছে ১৮ ডিগ্রিতে। দেশের অধিকাংশ স্থানে রাতের তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৬ ডিগ্রি। পৌষ মাস আসার আগেই শীতের কামড়, হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩২.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০.৫ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩১ এবং সর্বনিম্ন ১৯ ডিগ্রি সে.।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সকালের দিকে দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা : দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস
চলতি ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ) মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এটি বাংলাদেশের উপকূলে আসার আশঙ্কা কম। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। তবে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। ডিসেম্বরের শেষের দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে ২টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অবশ্য ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল, সিলেট অঞ্চলসহ অনেক জেলায় অগ্রহায়ণেই আগাম শীতের কামড় শুরু হয়েছে। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১১.৩ ডিগ্রিতে। ডিসেম্বর মাসে দেশের নদ-নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
গতকাল আবহাওয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় ভার্চুয়ালি সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং দেশের অন্যত্র স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে বিভাগওয়ারি হিসাবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে কোন বৃষ্টিপাতই হয়নি। ইতিপূর্বে গত অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ২৮.৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। গত জুলাই মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণ) দেশে বৃষ্টিপাতের গড় স্বাভাবিকের কাছাকাছি ছিল। জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি, মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম, এপ্রিল মাসে ৭৯ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গেল নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দশমিক ৪ ডিগ্রি সে. বেশি এবং রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ