চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো দুশ্চিন্তা করি না। আমার মৃতদেহের কি হবে, সেটা নিয়ে কোনো অযথা আগ্রহ দেখাই না। আমি জানি, আমার মুসলিম ভাইয়েরা করণীয় সবকিছুই যথাযথভাবে করবে। তারা প্রথমে আমার পরনের পোশাক খুলে আমাকে বিবস্ত্র করে তুলবে। আমাকে গোসল দেবে। এরপর আমাকে কাফন পরাবে। আমাকে আমার বাসগৃহ থেকে বের করবে। আমাকে নিয়ে তারা আমার নতুন বাসগৃহ কবরের দিকে রওনা হবে। আমাকে বিদায় জানাতে বহু লোকের সমাগম হবে। অনেক মানুষ আমাকে দাফন দেবার জন্য তাদের রোজকার কাজকর্ম কিংবা সভার সময়সূচি বাতিল করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ মানুষ এর পরের দিনগুলোতে আমার এই উপদেশগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবে না।
আমার ব্যক্তিগত জিনিসের ওপর থেকে আমি অধিকার হারিয়ে ফেলবো। আমার চাবির ছড়াগুলো, আমার বইপত্র, আমার ব্যাগ, আমার জুতাগুলোÑ সবকিছুর ওপর থেকে আমার অধিকার খর্ব হয়ে যাবে। হয়তো আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে উপকৃত করার জন্য আমার ব্যবহারের জিনিসপত্র দান করে দেবার বিষয়ে একমত হবেন। আমি নিশ্চিত, এই দুনিয়া আমার জন্য দুঃখিত হবে না, অপেক্ষাও করবে না। এই দুনিয়ার ছুটে চলা এক মুহূর্তের জন্যও থেমে যাবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু চলতে থাকবে আপন গতিতে। শুধু রবো না একলা একা আমি। আমার দায়িত্ব কিংবা কাজ অন্য কেউ সম্পাদন করা আরম্ভ করবে। আমার ধন-সম্পদ বিধিসম্মতভাবে আমার ওয়ারিসদের হাতে চলে যাবে। অথচ এরই মাঝে এই সম্পদের জন্য আমার হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হয়ে যাবে। ছোট-বড়, অণু এবং কিয়দাংশ পরিমাণ সবকিছুর হিসাব নেওয়া হবে।
আমার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম হারাতে হবে আমার নাম। কেননা যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো, সবাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, ‘লাশ কোথায়?’ কেউ আমাকে আমার নাম ধরে সম্বোধন করবে না। যখন তারা আমার জন্য জানাজার নামাজ আদায় করবে, বলবে, ‘জানাজা নিয়ে এসো।’ তারা আমাকে আমার নাম ধরে সম্বোধন করবে না। যখন তারা দাফন করবে, বলবে, ‘মৃতদেহকে কাছে আনো।’ একটিবারের জন্যও তারা আমার নাম ধরে ডাকবে না। এজন্যই দুনিয়ায় আমার বংশ পরিচয়, আমার গোত্র পরিচয়, আমার পদ মর্যাদা এবং আমার খ্যাতি, কোনো কিছুই আমাকে যেনো ধোঁকায় না ফেলে, সেই কামনা করে যাচ্ছি। দুনিয়ার জীবন কতোই না তুচ্ছ, আর যা কিছু সামনে আসছে, তা কতোই না গুরুতর বিষয়। জেনে রাখা উচিত, আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য তিনভাবে দুঃখ করা হবে : ১. যারা আমাকে বাহ্যিকভাবে চিনতো, তারা আমাকে ‘হতভাগা’ বলবে। ২. আমার বন্ধুরা বড়জোর আমার জন্য কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন দুঃখ করবে। তারপর তারা আবার গল্পগুজব বা হাসিঠাট্টাতে মেতে রবে। ৩. যারা খুব গভীরভাবে দুঃখিত হবে, তারা আমার পরিবারের লোকজন। তারা এক সপ্তাহ, দু’সপ্তাহ, একমাস, দু’মাস কিংবা বড়জোর একবছর দুঃখ প্রকাশ করবে। এরপর তারা আমাকে স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।