Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কিউবানদের ঢল দেখে বিস্মিত গ্রিস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আফ্রিকা এবং এশিয়ার শরণার্থীদের জন্য ইউরোপের বন্দরে পরিণত হয়েছে গ্রিস। কিন্তু স¤প্রতি সেখানে কিউবার মানুষদের ঢল নেমেছে। কর্তৃপক্ষ এমনটা দেখে বিস্মিত। বিষয়টি নজরে আসে ২৮শে অক্টোবর। ওইদিন প্রায় ১৩০ জন কিউবান অ্যাজিয়ান সমুদ্রের দ্বীপ জাকিনথোস থেকে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ইতালির মিলানে। তার মধ্যে ২৮ বছর বয়সী পেদ্রো অন্যতম। তিনি আল-জাজিরাকে বলেছেন, কিউবার এত মানুষ একত্রে একস্থানে এটা আকস্মিক। সাধারণত কিউবানরা বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, পুলিশ যখন এসব কিউবানদের একটি বাসে তোলার চেষ্টা করে, তখন উত্তেজনা দেখা দেয়। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার আশ্রয় প্রার্থীরা তুরস্কের বা লিবিয়া থেকে রাবারের তৈরি ডিঙ্গি নৌকায় করে পূর্ব অ্যাজিয়ান দ্বীপে পৌঁছার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের মতো নন কিউবানরা। তারা পাচারকারীদের শিকারে পরিণত নন। পেদ্রো এবং তার প্রেমিকা লরা হাভানা থেকে বিমানে করে গিয়েছিলেন মস্কোতে। কারণ, কিউবানদের জন্য মস্কো সফর করতে কোনো ভিসা লাগে না। মস্কো থেকে এসব কিউবান বিমানে করে চলে যান বেলগ্রেডে। বেলগ্রেড যেতেও তাদের ভিসা লাগে না। সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে করে চলে যান সার্বিয়া ও উত্তর মেসেডোনিযার ভিতর দিয়ে গ্রীক সীমান্তে। হাভানায় প্রেমিক পেদ্রোর সঙ্গে যৌথভাবে একটি রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন লরা (২৭)। তিনি বলেছেন, আমরা সমস্ত কিছু বিক্রি করে দিয়েছি। তা দিয়ে টিকেট কিনেছি। সব খরচ হয়ে গেছে রাশিয়ায়। আশ্রয়প্রার্থী আরেকজন কিউবান কার্লোস (২৩) বলেন, তিনি ভিন্ন একটি রুটে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রথমে তিনি মস্কো এসেছেন। সেখান থেকে মিনস্ক, বেলারুশ। তারপর ইস্তাম্বুল হয়ে বেলগেড। এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা এখন কয়েক শত। আশ্রয়প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আরেক আশ্রয়প্রার্থী হুয়ান স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন ৪০০ মানুষের। তিনি বলেছেন, আরো কমপক্ষে ২০০ মানুষ স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ, তারা পরিচয় গোপন রাখতে চান। স্বাক্ষর দিয়েছেন যারা তার মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র ও পেশাদার। তাদের বয়স ৫০ বছরের নিচে। সঙ্গে আছে কিছু শিশু। হুয়ান বলেন, এসব মানুষের মধ্যে আছেন আইনজীবী, চিকিৎসক এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে আমাদের মেধা ব্যবহার করে সমাজের উন্নতি করতে পারবো। আমরা সম্পদের লোভে আসিনি। দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি। সমাজের অংশ হতে এসেছি। কিন্তু কেন কিউবার মানুষগুলো এভাবে দেশান্তরী হচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, দেশটির অর্থনীতি ধসে পড়েছে। নিষ্পেষণ চলছে। এসব কারণে তারা দেশ ছাড়ছেন। পেদ্রো বলেন, মৌলিক চাহিদার সরবরাহ নেই বললেই চলে। ওষুধ, সাবান, টয়লেট পেপার, খাবার প্রচÐ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যখন এর সরবরাহ আসে তখন তা হয় খুব ব্যয়বহুল। কর্তৃপক্ষ স¤প্রতি একটি ক্যাশকার্ড ইস্যু করেছে। তা ব্যবহার করে লোকজন ওইসব পণ্য কিনতে পারে ভাল কিছু দোকান থেকে। কিন্তু এই কার্ড ইস্যু করা হয়েছে শুধু ওইসব ব্যক্তিকে যাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ আছে। লরা বলেন, যদি আপনার হাতে এই কার্ড থাকে তাহলে আত্মীয়স্বজন আপনাকে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাতে পারবেন এবং আপনি তাহলে বেঁচে থাকতে পারবেন। যদি বিদেশে আপনার এমন কেউ না থাকেন, তাহলে আপনাকে অনাহারে থাকতে হবে। খাদ্য সংকটের কারণে গত ১১ই জুলাই দেশটিতে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। হুয়ান বলেন, ওই বিক্ষোভে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তারা মনে করছেন তাদের চেহারা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। পরে পুলিশ তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করেছে। পেদ্রো বলেন, আমার অনেক বন্ধুকে প্রহার করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা চাকরি হারিয়েছেন। হুয়ান আত্মগোপনে ছিল। আমি বাবা-মাকে বলেছি, আমি গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এসেছি। একজন বন্ধু তাদেরকে রাশিয়া যাওয়ার টিকেট কিনে দিয়েছেন। তার পরিকল্পনা ছিল গ্রিসে পৌঁছা। এটি হলো আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি বন্দরের মতো। এখানে প্রথমে আশ্রয় নিয়ে পরে তারা ইউরোপের ভিতরে প্রবেশ করতে চান। কারণ, গ্রিস হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ২৬টি সদস্য দেশের সংগঠন শেনজেন এরিয়ার অংশ। এসব দেশের মধ্যে কোনো সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ নেই। হুয়ানের মূল লক্ষ্য হলো স্পেন বা ইতালি। আল-জাজিরা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিউবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ