পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকলে গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা একের পর এক এমন গণবিরোধী ভ’মিকায় অবর্তীর্ণ হতে পারত কি? একজন পরিবহন শ্রমিক নেতাকে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর পদে বসানোর পর আমরা সেই মন্ত্রীর ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রায়শ: আলোড়ন তুলতে দেখেছি। মানুষ এখন আর রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। রাজনৈতিক অধিকার নিয়েও সাধারণ মানুষের তেমন মাথাব্যথা নেই। এই যে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক-অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়া; অত:পর অসময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে গণপরিবহণে ভাড়াবৃদ্ধির সাথে সাথে আরেক দফা পণ্যমূল্যবৃদ্ধির আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেটেড কারসাজির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠলেও রাজপথে তার তেমন কোনো প্রিিতক্রিয়া দেখা যায়নি। অন্যদিকে, এরচেয়ে অনেক গৌণ বিষয়েও বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে রাজপথে তুলকালাম ঘটাতে দেখা যায়। এই কিছুদিন আগেও ভারতের কৃষকদের আন্দোলনে রাজধানী দিল্লী অচল হয়ে পড়েছিল। সেখানে পুলিশের সাথে কৃষকদের সংঘাতে অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের দেশে মানুষের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা ক্রমেই ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এর একটি ইতিবাচক বিপরীত দিকও আছে। গত একযুগ ধরে দেশে কোনো রকম রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম না থাকায় এক ধরণের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবেশি ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবে এর প্রতিফলন যাই হোক, পরিসংখ্যানের হিসাব অন্তত সেই তথ্যই দেয়। তবে ভারত ও পাকিস্তান অনেক আগেই এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যেতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশকে এলডিসির তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশকে এজন্য ২০২৬ সাল বা আরো ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে ধনী আরো ধনী হওয়া, গরিব আরো গরীব হওয়া, মূদ্রাস্ফীতি ও দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধারণ মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয় না। এসব পরিসংখ্যানের উন্নয়ন টেকসই ও সার্বজনীন উন্নয়নের নিশ্চয়তা বহন করে না।
গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য এবং ঔদ্ধত্য এবং তা থেকে সৃষ্ট মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ও বিক্ষোভ আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অনগ্রসরতাকেই নির্দেশ করছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সম্মিলিত অভিপ্রায় তেমন কোনো ভ’মিকা রাখতে পারছে না। গত এক দশকে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তার ফুটপাতে অপেক্ষমান শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী একটি গণপরিবহণের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। জাবালে নূর নামের একটি বাস আরেকটি বাসের সাথে রাস্তায় প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ফুটপাতে চাপা দিয়েছিল। সহপাঠি বন্ধুদের এমন মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল। সমাজের সব স্তরের, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনের সাধে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। এমনকি সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাও শিক্ষার্থীদের ৯ দফা যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার ঘোষনা দিয়েছিলেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্লাকার্ড নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের ভ’মিকা নিয়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলা ও বিচারপতিদের গাড়িকে চ্যালেঞ্জ করে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি মূলত গণদাবি হয়ে ওঠায় তার ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানানো হলেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের মদতে ধানমন্ডিতে হেলমেট বাহিনীর তান্ডব, গুলশান-বাড্ডা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর যৌথ বাহিনীর অভিযান ও গণগ্রেফতারের সেই দৃশ্যপট বলে দেয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চোখ রাঙানি সরকার স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হওয়া সেই আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেয়ার কথা বলা হলেও, দাবি অনুসারে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ণ করা হলেও সে সব আইন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের সড়ক-মহাসড়ক আগের মতই অনিরাপদ ও যাত্রী সাধারণের জন্য মৃত্যুর বিভীষিকা হয়ে আছে। গত এক সপ্তাহে শুধুমাত্র ঢাকা শহরের কয়েকটি ঘটনা থেকে বুঝা যায়, গণপরিবহণ যাত্রীরা আগের চেয়েও অনেক বেশি আক্রান্ত, অনিরাপদ ও প্রাণঘাতি হুমকির শিকার। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা কোনো নতুন চাপিয়ে দেয়া বিষয় নয়। ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ গণপরিবহন সিএনজি চালিত হলেও তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে বাসভাড়া বৃদ্ধির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষ এবং নৈমিত্তিক যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়েছে। একজন কলেজ ছাত্রী হাফভাড়া দিতে গেলে পরিবহণ শ্রমিকের দ্বারা ধর্ষণের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। নটরডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ীর ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করেছে। এর একদিন পরে ঢাকা উত্তরে বাস চাপায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চোরদার হওয়ার আগেই আগের হেলমেট বাহিনীর মতই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীতের লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে চিত্র ভাইরাল হয়েছে।
যেখানে রাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদের সব পথই রুদ্ধ হয়ে আছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে রাজপথে নেমে অধিকার আদায়ে সফল হচ্ছে। গত ১০ বছরে বিরোধী দলের কোনো আন্দোলন সফল না হলেও ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন, ২০১৯ সালের কোটা বিরোধি আন্দোলনের মত নির্দলীয় ও মৌলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবি আদায়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাওয়া এ দেশের ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সম্ভাবনাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক, প্রগতিশীল আন্দোলনে মারমুখী ভ’মিকা নিয়ে বার বার ছাত্রলীগের আবিভর্’ত হওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ও গৌরবময় ঐতিহাসিক ভ’মিকার সাথে একেবারেই বেমানান। যে সব যৌক্তিক দাবির আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে, সে সব আন্দোলনকে ছত্রখান করে ছাত্রলীগ কার স্বার্থ রক্ষা করছে? সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোটা সংরক্ষণ যেমন মেধাবিদের বঞ্চিত করছে, তেমনি রাস্তায় বেপরোয়ার গাড়ি চালনায় সহপাঠিদের হতাহতের ঘটনা অথবা স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার পুরনো সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবিকে দাবিয়ে দেয়ার মধ্যে ছাত্রলীগের স্বার্থ কোথায়, সে প্রশ্ন ক্রমে জনমনে দানা বাধতে শুরু করবে। হাফ ভাড়া দেয়ার কারণে যারা কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের হুমকি দেয়, প্রতিবাদী তরুণ শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলতেও যারা দ্বিধা করেনা, তাদের সাথে ছাত্রলীগের যোগসুত্র কোথায়? এই রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে? কেন দাঁড়াচ্ছে? একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধকে ক্রমাগত অনিশ্চিত ও অকার্যকর করে তোলার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ প্রগতি ও সম্ভাবনাকে ক্রমশ পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নে রাষ্ট্রকে কার্যকর ভ’মিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রেঁনেসা যুগের ফরাসি দার্শনিক-লেখক ভল্টেয়ার বলেছিলেন, আমি তোমার মত সমর্থন নাও করতে পারি, তবে আমি তোমার মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারি। এটি ব্যক্তি ভল্টেয়ারের কণ্ঠে উচ্চারিত হলেও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্যভেদি অভিপ্রায়। রাজপথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও আন্দোলনকে বর্বর পন্থায় দমন করার মাধ্যমে ছাত্রলীগ নামধারীরা রাষ্ট্রের সেই মহত্তম লক্ষ্য ও অভিপ্রায়কেই যেন স্তব্ধ করে দিতে চায়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার কথা বলা হচ্ছে, তার পাশাপাশি সামাজিক ঐক্য ও গণতান্ত্রিক-মানবিক মূল্যবোধকে দাবিয়ে রাখার বাস্তবতা আমাদের সমাজকে অনেক বেশি পিছিয়ে দিচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি ২০১২ সালে নিজ ফ্ল্যাটে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। দেশের সাংবাদিক সমাজ এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই হত্যাকান্ড মামলার অগ্রগতি দেখভালের দায়িত্ব গৃহিত হয়েছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারিদের ধরে বিচারের সম্মুখীন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আটচল্লিশ ঘন্টা ৪৮ দিন নয়, ৪৮ মাস পেরিয়ে ১২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সেই ঘটনার বিচার পায়নি সাগর-রুনির সন্তান ও পরিবার। এ সপ্তাহে ৮৩ বারের মত সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের চার্জশিট দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে। বুয়েটের ছাত্রাবাসে মেধাবি শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত রবিবার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও প্রায় ২ সপ্তাহ পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ পুন:নির্ধারণ করেছেন দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। এ ক্ষেত্রে পুরনো ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে কুপিয়ে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকান্ড মামলার রায়ের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিরোধিদলের হরতালের সময় শিবির সন্দেহে কুপিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যার পর হত্যাকারিদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এক বছরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। এরপর হাইকোর্টের আপীলে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে কয়েক জনের খালাস ও যাবজ্জীবনের রায় ঘোষিত হওয়ার পর আরো ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বেশিরভাগ আসামিকে ধরতেই পারেনি পুলিশ। একেকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার ঘটনা, ধরা পড়ে যাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং রায় ঘোষিত হওয়ার পরও ধরাছোয়ার বাইরে থাকার এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। এমনকি মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদেরও রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় বেরিয়ে এসে গডফাদার বনে যাওয়ার উদাহরণও আছে। এই মুহূর্তে দেশের এক নম্বর আলোচ্য ও প্রত্যাশিত ইস্যু হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী, বয়োবৃদ্ধ -মুমুর্ষু খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার মত ঔদার্য সরকারের দেখানো উচিত। দেশের সাধারণ মানুষ এমনটাই প্রত্যাশা করে। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন ঢাকার রাজপথ সরগরম হতে শুরু করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে যথারীতি ‘আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য’ সৃষ্টির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারিও শোনা গেছে। এভাবেই আমাদের রাজনীতি থেকে মানবিকতার নির্বাসন চলছে।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখন একটি সংকটকাল পার করছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে শিক্ষিত বেকারের হার। করোনাকালে দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া হাজার হাজার মেয়ে শিক্ষার্থী বিয়ের বয়েস হওয়ার আগেই বাল্য বিয়ের সম্মুখীন হয়েছে। বিনিয়োগে অচলাবস্থা, ব্যাপক মানুষের চাকরি ও কর্মসংস্থান হারানোর মধ্য দিয়ে কয়েক কোটি মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। কোটি কোটি মানুষ নতুন করে অতি দরিদ্র শ্রেণীর তালিকায় নেমে গেছে। এ বিপরীতে বছর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজারের বেশি। করোনাকালীন অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্যে যখন লাখ লাখ মানুষ বেঁেচ থাকার ন্যুনতম অবলম্বন হারিয়েছে, তখন দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এর মানে হচ্ছে, দেশের কোটি কোটি মানুষের আয় কমলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে কিছু মানুষের অ্যাকাউন্টে পুঁজির স্ফীতি ঘটছে। দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলের তালিকায় উঠার জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদরা যতই আপ্লুত হোন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধস, নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার, পরিবেশগত ভারসাম্য ও সুশাসনের জনপ্রত্যাশা যেন ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অধিকার, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহের আইনগত নিরপেক্ষ ভ’মিকা পালনের সক্ষমতা ছাড়া শ্রেফ পরিসংখ্যানগত উন্নয়নের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। মানুষের প্রথম ও প্রধান প্রত্যাশা হচ্ছে, স্বস্তি ও নিরাপত্তা। আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহের দলনিরপেক্ষ ভ’মিকা ছাড়া এ প্রত্যাশা পুরণ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সংবিধান সরকারের সমালোচনা করার অধিকার সব নাগরিককে দিয়েছে। রাজনৈতিকদল সরকার গঠন করলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, সরকার এবং রাষ্ট্র নি:সন্দেহে ভিন্ন বিষয়। বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন সরকারের কর্মকান্ডে পড়তে পারে। সরকারের বিরোধিতাকে রাষ্ট্রবিরোধিতা তথা রাষ্ট্রদ্রোহীতা বলে নাগরিকদের অভিযুক্ত করা হলে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গৎবাধা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়নের চেয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও জনবান্ধব করে তোলাই হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রের কাছে জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।