পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নিজ যোগ্যতা গুণেই তারা স্থান করে নিচ্ছেন মেধাক্রমের শীর্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি আরও ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এক শ্রেণির মাদরাসা শিক্ষাবিরোধী শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী। বিশেষ করে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যখনই মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যখনই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে তখনই তারা শুরু করেন সমালোচনা। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ইংরেজির ভিত্তি দুর্বল, কম মেধা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেনে নিচে নামাচ্ছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এমন নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু এসব শিক্ষক ও শিক্ষাবিদের সমালোচনায় থেমে নেই মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। সমালোচনার মধ্যেই গত কয়েকবছর ধরেই ভর্তি পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বেড়েছে আরও বেশি।
সর্বশেষ চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় ‘খ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া, ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন একই মাদরাসার আরেক শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান। এই শিক্ষার্থী ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীদের সাথে একই প্রশ্নপত্রে, সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফল হওয়ার পরও সমালোচনায় হতবাক মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঘ ইউনিটে মানবিক বিভাগে প্রথম হওয়া আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে মূলত যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উপযোগী তাদেরকে সিলেক্ট করার জন্য। এখানে উচ্চমাধ্যমিক কে কোথা থেকে পাশ করে এসেছে তা বিবেচনার বিষয় নয়। কারণ এডমিশনের পর অনার্স লেভেলে যে পড়াটা শুরু হয় তা পুরোপুরি নতুন ধারার একটা বিষয়। এটার সাথে ইন্টারমিডিয়েট বা উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার তেমন একটা মিল নেই। সুতরাং এখানে যে পরিশ্রম করবে আসলে সেই ভালো করবে। আর যদি কেউ মনে করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অনুক‚লে করা হচ্ছে তাহলে তাদেরকে প্রশ্নের প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে।
একই বিভাগে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথম হওয়া শাহ মারুফ বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কম মেধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে এমন কথা যারা বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা মাদরাসা শিক্ষা বিদ্বেষী। কারণ আমিও একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের জীবনে এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়নি যেটা কলেজ শিক্ষার্থীরা পারে কিন্তু আমরা পারিনি। তিনি বলেন, কলেজ শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিকে দু’টো ভাষার উপর জোর দেয়। অপরদিকে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি আরবি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। সুতরাং বলা যায়, ত‚লনামূলক বেশি মেধা নিয়েই মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণের হার বেড়েছে অনেক বেশি। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ‘খ’ ইউনিটে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে ৮৪ জনের মধ্যে ৭৯ জন ছাত্র এবং ৫ জন ছাত্রী সুযোগ পায়। এরমধ্যে খ ইউনিটে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন ওই মাদরাসার শাহ মারুফ এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রাজধানীর ডেমরার দারুননাজাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী তাসনীম ইসলাম। ডেমরার দারুননাজাত মাদরাসা থেকে প্রায় ৬৬ জন, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া থেকে ৩৫ জন, নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া, ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসাসহ দেশের বিভিন্ন সেরা মাদরাসা থেকে কয়েক শত শিক্ষার্থী সেবার ঢাবিতে চান্স পেয়েছেন।
একই বছর ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে খ ইউনিটে চতুর্থ হওয়া শাহ মারুফ। একই ধারা আরো জোরালো হয় ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে। সে বছর ঘ ইউনিটের প্রথম পাঁচজনের পাঁচজনই ছিলেন মাদরাসা শিক্ষার্থী। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঘ ইউনিটে মানবিক থেকে প্রথম হন তা’মিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আমিন। সে বছর খ ইউনিটেও সেরা দশে জায়গা করে নেন দুই মাদরাসা শিক্ষার্থী। সবশেষ ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা থেকে খ ইউনিটে প্রথম হন মো. জাকারিয়া। ঘ ইউনিটে প্রথম হন একই মাদরাসার শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান। এছাড়াও সরকারি সাত কলেজের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, গুচ্ছ ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রথম স্থান অধিকার করেন দারুননাজাতের শিক্ষার্থী। ঢাবির গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম হন তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (মহিলা শাখা) শিক্ষার্থী হামিদা ইসলাম।
ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দূর্বল এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। বরং যে ভালো পড়াশোনা করবে সেই ভালো করবে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।