Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন-বেপরোয়া মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানে বাড়ছে দুর্ঘটনা

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু থামছেই না। যত দিন যাচ্ছে বড় হচ্ছে মৃত্যুর সারি। প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে, কেউ বরণ করছেন পঙ্গুত্ব, আবার কেউ হারাচ্ছেন মূল্যবান জীবন। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যত কোন সফলতা মিলছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবহন সেক্টরের অনিয়ম আর দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে চলতি বছরের ৭ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৯৫ জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যা ২০২০ সালের তুলনায় অনেক বেশি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন মনে করছেন, করোনা মহামারিতে সড়কে বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ কারণে সাত মাসেই গত বছরের তুলনায় বেশি মানুষ মারা গেছেন।
পুলিশের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সাত মাসের মধ্যে মে মাসেই সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের প্রথম সাত মাসে দুই হাজার ২শ’ ১১ জন নিহত হলেও চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে এ সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৯৫ জন হয়েছে। জানা গেছে, করোনার কারণে মহাসড়কে বেশকিছু দিন বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলেছে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কুষ্টিয়ার মিরপুরে ট্রাকচাপায় তোয়া খাতুন (১০) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া শিমুলতলা বালুঘাট এলাকায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জেলার কচুয়া-গৌরীপুর বিশ^রোডের কচুয়া ডাক্তার বাড়ি নামক স্থানে বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় সিএনজিতে থাকা ৩ কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিক চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার চালক মো. সেলিম (৪৫) ও যাত্রী মো. জাভেদ (৩৮) ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। একই দিনে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের চালক রবিউল ইসলাম সরদার (২৮) নিহত হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ সম্পর্কে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন না হলে কোনোভাবেই কমবে না দুর্ঘটনা। এই আইন বাস্তবায়নের অভাবে বিপজ্জনক ওভারটেকিং করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা তো রয়েছেই। এছাড়া মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে সড়কে কমছে না দুর্ঘটনা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এটি কার্যকর করেনি। আইনটি পাস হওয়ার পরপরই এটি পরিবর্তনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা দুই দফায় ধর্মঘট ডাকে। শ্রমিকদের দাবি আইনটির অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে এবং জরিমানার টাকা কমাতে হবে। সেই থেকে কাগজে-কলমে আইনটি থাকলেও আইনটি বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৬ সালের পর সারাদেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। স¤প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকদের আইন না মানার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের মানসিকতা। নগর-মহানগরীর রাস্তা এবং হাইওয়েগুলোয় ট্রাফিক সিগন্যালের বালাই নেই। অথচ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কোন চালক ট্রাফিক আইন ভঙ্গের চিন্তা করে না। এ কারণেই চালকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসেব অনুযায়ী, দেশে যত সড়ক মহাসড়কে রয়েছে, আর যত যানবাহন চলাচল করছে তা রীতিমতো বিস্ময়ের বিষয়। সড়ক-মহাসড়কে অধিক যান চলাচল, সড়কের দু’পাশের শতকরা ৫০ ভাগ বেদখল থাকা, সড়ক মহাসড়কে খানাখন্দ, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন, অদক্ষ চালক, ধারণ ক্ষমতার অধিক মাল নিয়ে যান চলাচল, গতিসীমা না মানা, মাদকসেবন করে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, পাল্লাপাল্টি করে ড্রাইভিং, চালকদের বেপরোয়া স্বভাব, ছিনতাই চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধের ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। দেশে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় গড়ে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ, চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করে অন্তত ৩০ হাজার। এদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মুক্তাদির বলেন, দেশে সাধারণত বিটুমিন দিয়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মিত হয়, যা দামে সস্তা। ফলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে। এজন্যও দুর্ঘটনা বাড়ে। একবার পানি উঠলেই পুরো সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। ঢাকার সড়কগুলোর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানবাহন

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ