Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের

এলডিসি তালিকা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিতে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ : চ্যালেঞ্জ দেখছেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় গত বুধবার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক বিবৃতিতে বলেন, এই ঐতিহাসিক অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক মাইলফলক।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের যে অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নযাত্রা, এটি তারই একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই সাফল্যের অংশীদার এ দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
বিবৃতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং আরও অধিকতর উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে যখন সমগ্র দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখাসহ মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতিকৌশল ও পদক্ষেপ প্রণয়ন করছে সরকার।
তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে উন্নয়নের যাত্রা যে খুব ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন না সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বরং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ তার। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে উন্নয়নের যাত্রা যে খুব ত্বরান্বিত হবে, সেই প্রত্যাশা করা বাস্তবসম্মত না। এখন আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) কমিটির ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছিল। এখন সেটা আরও এক ধাপ এগুলো। তবে এখন আমাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। একটা হচ্ছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত যে সুবিধা আছে, সেটা আর থাকবে না। তাই সেটার জন্য জিএসপি প্লাস একটা সিস্টেম আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের, সেটার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সেখানে আবার বেশ কিছু শর্ত থাকে। যেমন শ্রমিক অধিকার, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ইত্যাদি। আমাদের তাই সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আলোচনা করা লাগবে।
এছাড়া রফতানির বহুমুখীকরণ ও পণ্যের মান উন্নয়নের মাধ্যমে ভালো দাম পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে বলে মত সাবেক এ উপদেষ্টার। তিনি বলেন, মেধাস্বত্ব আইন, যেটার ওপর ভিত্তি করে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উন্নয়ন হয়েছে, সেটাও থাকবে না। তবে এখনো সময় আছে পাঁচ বছর। এখানে আমরা আরও সময় পেতে পারি কি না, সেটার জন্য চেষ্টা করা লাগবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের সামনে মোকাবিলা করা লাগবে। এটার জন্য রফতানির বহুমুখীকরণের দরকার আছে। রফতানি পণ্যের মান উন্নয়ন করে আমরা যাতে ভালো দাম পেতে পারি, সেটার চেষ্টা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একইসঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে।
প্রস্তুতিকালীন এই ৫ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেত তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে ২০২৬ সালের পর আরও ৩ বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ