গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর শেষ স্তর কিংবা দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহতদের তীব্র কষ্ট লাঘবে চিকিৎসকরা বিশেষ বিবেচনায় ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। অথচ অক্সি-মরফোন নামের তীব্র ব্যথানাশক এই ওষুধটিই স¤প্রতি মাদক হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে যুবসমাজের মধ্যে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র জিসকা ফার্মা ওষুধটি উৎপাদন করার অনুমতি রয়েছে। আর আলাদা অনুমোদন সাপেক্ষে সারাদেশে ১২০ জন ডিলারের এটি বিক্রয়ের অনুমতি আছে। এত বিধি-নিষেধের মধ্যেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে ওষুধটি বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত শুক্রবার বাবু বাজার ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ধানমন্ডি শাখায় অভিযান চালিয়ে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোনসহ আলমগীর ও জাহিদুল নামে দুজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। এর পরেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
মাদক হিসেবে ক্যানসারের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি বলেন, ক্যানসারের রোগীদের সেবনের অক্সি-মরফোন এখন ব্যবহার হচ্ছে মাদক হিসেবে। উঠতি বয়সী তরুণেরা এই ভয়ংকর মাদক সেবন করছে। অস্ত্রোপচারের আগে-পরে রোগীর ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয় মরফোন জাতীয় ওষুধ। অক্সি-মরফোন ওষুধটি মূলত ক্যানসারের রোগীদের শেষস্তর, হার্ট, দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। সরকারের কাছে ওষুধটির কাঁচামাল ব্যবহারেরও হিসাব দিতে হয় কোম্পানিকে। শুধু তাই নয়, এই ওষুধ বিক্রি করতেও লাগে আলাদা লাইসেন্স। যা বাংলাদেশে শুধুমাত্র একটি কোম্পানি এই ওষুধ তৈরি করে। ওষুধটির কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে উৎপাদন, কেনা-বেচায় আছে কঠোর বিধিনিষেধ। যে কোনো ফার্মেসিতে বিক্রির সুযোগ নেই। এগুলো তদারকির দায়িত্বে ওষুধ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সব উপেক্ষা করে এখন খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ওষুধটি।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সি-মরফোন বিক্রি ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়। যা নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স প্রদর্শনপূর্বক পরিবহনের রুট প্রদর্শন করে ও কার কাছে বিক্রি করা হবে তা প্রদর্শন করে গ্রহণ এবং বিক্রি করতে হয়। দেশে অক্সি-মরফোন আমদানি ও বিক্রির জন্য একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। যারা সারা দেশে ১২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সরবরাহ করে থাকে। গত ৫ মাসে ৫ লাখ ডোজ অক্সি-মরফোন বিক্রি করেছে তারা। এটি শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের অনুমোদিত পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায়, ইদানিং ওরাল ফরমেটে অক্সি-মরফোন খুচরা বাজারে ব্যাপকহারে বিক্রি হচ্ছে। যুবসমাজ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অক্সি-মরফোন গুড়ো করে যে কোনো সিরাপ বা পানীয়র সঙ্গে মিক্স করে মাদক হিসেবে ব্যবহার করছে, যা উদ্বেগের কারণ।
ডিবি প্রধান বলেন, অক্সি-মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচন্ড আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগনাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন অসাড় হয়ে যায়। ক্রমাগতভাবে অক্সি-মরফোন ব্যবহারে এটির প্রতি নির্ভশীলতা তৈরি হয়। ব্যবহারকারীরা এটি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কাজ করছি কীভাবে এতোগুলো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাচ্ছে। কীভাবে খুচরা বিক্রেতার কাছে যাচ্ছে এবং কীভাবে যুবসমাজের মাঝে চলে যাচ্ছে। এই ওষুধের যারাই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আছে, যারা ডিলাররা আছেন তাদের বলবো এটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষতি করতে পারে। এই ড্রাগ যেন যুবসমাজের মাঝে না যায় সেই ব্যাপারে আমরা কাজ করবো। যারা এই ড্রাগ বিক্রি করছেন তাদের যদি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ ঠিক না থাকে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এই ওষুধটির বাজারমূল্য ৪০০ টাকা। কিন্তু এটি মাদকসেবীদের কাছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ওষুধ প্রশাসন জিসকা ফার্মেসিকে অনুমোদন দিয়েছে এই ওষুধ তৈরি করার জন্য। বাংলাদেশে একমাত্র তারাই ওষুধটি তৈরি করে। আর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এটির পারমিশন দিয়ে থাকে। আমরা তাদের সঙ্গে বসবো, কারণ এটি সুচারুরুপে ও প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে এটি বিক্রি না হয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার ও বিক্রির অনুমোদন দিয়েছি। যেটির বিপণণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াও রয়েছে। এটির অনুমোদনের ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। উৎপাদিত অক্সি-মরফোন বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং ও পরিদর্শন করে থাকে প্রশাসনের পরিদর্শকরা। তবে, এটি মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটি দেখার দায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। বিপণনের ক্ষেত্রে যদি অনুমোদনের বেশি মজুদ ও বিক্রির তথ্য আমরা পাই তবে, কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অক্সি-মরফোন ওষুধ হিসেবে আমরা লাইসেন্স দিয়ে থাকি। আমরা বিষয়টি জেনেছি যে, অক্সি-মরফোন মাদক হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এমন অসাধু কাজে আমাদের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কেউ ছাড় পাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।