Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গে দাবি আদায়ে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১১:০৯ এএম

কৃষকদের অবিচল আন্দোলনে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে আসা পেশাজীবীরা এখন তাদের সাফল্যে উজ্জীবিত।

ভারতের কৃষক আন্দোলনে নজর ছিল সারা বিশ্বের। সেই আন্দোলন সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে। পশ্চিমবঙ্গেও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। মূলত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে আন্দোলন বারবার নজর কেড়েছে। এখন নার্সদের প্রতিবাদ চলছে এসএসকেএম হাসপাতালে। সমকাজে সমবেতন ও বদলি নীতির প্রতিবাদে গত জুলাই-আগস্টে ১২ দিনের জন্য অনশন আন্দোলন করেন নার্সরা। বেতন বৈষম্যসহ বদলির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের দাবিপূরণ এখনো হয়নি।

প্রথম দফার আন্দোলনের পর তিন মাস কেটে গেলেও রাজ্য দাবিদাওয়া মানেনি বলে নার্স সংগঠনের অভিযোগ। তাই তারা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। শনিবার নার্সদের আন্দোলন ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। নার্সেস ইউনিটির পক্ষে ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হোক। না হলে মন্ত্রী বলুন, মিথ্যে বলেছিলাম। রোগী পরিষেবা বজায় রেখেই আন্দোলন চালাচ্ছি। কৃষকদের আন্দোলন আমাদের ১০০ শতাংশ উজ্জীবিত করেছে। যেভাবে তারা মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, তা শিক্ষণীয়।’’

কৃষক আন্দোলনের সাফল্যে অনমনীয় নেতৃত্বই কৃতিত্বের দাবিদার। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও কৃষকরা লড়াই ছাড়েননি। আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, সংসদে আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে। এই জেদি মানসিকতা কি পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলনকারী নেতৃত্বের মধ্যে দেখা যাচ্ছে? সিংঘুতে উপস্থিত হয়ে কৃষক আন্দোলনের পাশে ছিলেন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এর সম্পাদক চিকিৎসক অংশুমান মিত্র। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কৃষিজীবীরা টানা অবস্থানে বসে আছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নার্সরা ডিউটি জারি রেখে আন্দোলন করছেন কয়েক বছর ধরে। আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা শুধু জনবিরোধী নয়, কর্মীবিরোধীও বটে। কম লোকবলে কাজ করতে হয়। তার মধ্যেও দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়।’’

এ রাজ্যেই আছে যুগান্তকারী আন্দোলনের সাম্প্রতিক অতীত। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম বিশ্বের নজর কেড়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাস্কর সিংহরায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কৃষকদের উপর কিছু চাপিয়ে দিতে গেলে কী ফল হয়, তার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে। এই আন্দোলনের জেরে বদলে যায় দেশের জমি অধিগ্রহণ আইন। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সেই ধারাতেই সফল হয়েছে।’’

এই একই একাগ্রতা কি পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে, প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা। শিক্ষকরা বছরভর আন্দোলনে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে রাজ্য সরকারকে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের দাবিতে হবু শিক্ষকেরা দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে মামলা হওয়ায় নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেছেন, ‘‘আদালতের জট কাটিয়ে আগামী দু মাসে ১৫ হাজার নিয়োগ হবে এসএসসিতে।’’

লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের পার্শ্বশিক্ষকরাও। বিধানসভার গেট টপকে অন্দরে প্রবেশের চেষ্টা থেকে আদিগঙ্গায় সাঁতার কিংবা বিষপান, নানা নাটকীয়তায় ভরা এই আন্দোলন। প্রতিবাদের ঝাঁজ আছে যথেষ্ট, কিন্তু সেই অনুযায়ী ফল মিলেছে কি?

শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা, শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের মইদুল ইসলাম সহ এই নজরকাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা সরাসরি যোগ দিতে চলেছেন শাসক দল তৃণমূলে। ঘটনাচক্রে মইদুল ও বিষপানকারী পাঁচ শিক্ষিকার এই সিদ্ধান্ত সামনে এসেছে শুক্রবার, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দিনেই। এতে কি এ রাজ্যে আন্দোলনের নেতৃত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে না? শিক্ষক নেতা কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু যারা প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বিষপানের মতো পদক্ষেপ করলেন, এমন কী ঘটল যে তারা সরাসরি শাসক শিবিরে নাম লেখালেন? ভোটের আগে এদের কেউ কেউ সরকারবিরোধী ভূমিকা নিয়েছেন। এখন আবার ক্ষমতার দিকে ঢলে পড়েছেন।'' অংশুমানের ভাষায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অনেক আন্দোলন হচ্ছে যা রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট। ফলে ক্ষমতার ভাগ নেওয়ার লোভ থাকবেই। তবে তাতে সব আন্দোলনের উপরই প্রশ্নচিহ্ন বসবে না।’’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশ্চিম বঙ্গ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ