পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাড়ার মিটার অকার্যকর : মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু
অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে : ট্রাফিক পুলিশ
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর বাসভাড়া নিয়ে চলছে তুগলকি কান্ড। সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়ার চেয়ে প্রতিটি রুটে চলাচলকরা বাসে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিন সড়কে চলছে- অবরোধ, প্রতিবাদ, সংঘাত-সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে ছাত্রছাত্রীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণের দাবি করছেন। অন্যদিকে কর্মজীবীদের অনেকেই বাধ্য হয়েই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করছেন। কিন্তু সিএনজিচালিত অটো রিকশাগুলো বাস-মালিকদের মতো যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। মিটারে অটোরিকশা চালানোর ব্যাপারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সরকারের দেয়া নির্দেশনা তোয়াক্কা করছে না অটোরিকশা চালকরা। ফলে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ যেন গণপরিবহন আর অটোরিকশার চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিটার আছে। আলোও জ্বলছে। যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে মিটার অনুযায়ী চলাচল করবে, এটাই আইন। কিন্তু গত ২০ বছরেও এই আইন বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো যাত্রীদের সাথে নিয়মিত ঝগড়া করছেন চালকরা। প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশাই নয়, অ্যাপসনির্ভর মোটরসাইকেলগুলোও চুক্তির ভিত্তিতে যাত্রী পরিবহন করছে। তবে চালকদের এই নৈরাজ্য দমনে ট্রাফিক বিভাগের কোনো তৎপরতা নেই এমন অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় ২০০২ সালের শেষ দিক থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ভাড়া বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালীন চার্জ ১ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়। পরে ২০১৫ সালে ভাড়া ও জমা বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালে সিএনজির জমা ৯০০ টাকা এবং যাত্রীদের জন্য প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, পরে প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোনো সিএনজি অটোরিকশা চালক এই ভাড়া একদমই মানেন না। উল্টো যাত্রীদের কাছ থেকে তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করেন।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, মিটারে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা যাত্রীদের সঙ্গে চুক্তি করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। যে গন্তব্যে মিটারের ভাড়া আসে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সেখানে পৌঁছাতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। চুক্তিতে যাত্রী তুলে চালকরা মিটার চালু করেই পথ চলেন। আবার যাত্রীদেরও বলে দেন, ট্রাফিক পুলিশ ধরলে বলবেন মিটারে যাচ্ছি। এদিকে যদি কেউ মিটারে যেতে রাজি হন, তবে মিটারের চেয়ে বাড়তি বকশিশ চাওয়া হয় অন্তত ৫০ টাকা।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মিটারে না গিয়ে চুক্তিতে যাওয়ার কোনো ঘটনা নজরে এলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিটারচালিত সিএনজি অটোরিকশার কোনো ডাটা দেয়নি। যদি মিটারচালিত সিএনজি অটোরিকশাগুলোর ডাটা আমাদের কাছে থাকত, তাহলে অভিযান চালাতে সুবিধা হতো।
বিমানবন্দর, কমলাপুর, ফকিরাপুল, মহাখালী, গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সিএনজি অটোরিকশায় মিটার ব্যবহারের কোনো বালাই নেই। চালকরা যোগসাজশ করে একই রকম ভাড়া হাঁকেন। ধূসর রঙের ব্যক্তিগত মালিকানার অটোরিকশায় (প্রাইভেট) যাত্রী পরিবহনের অনুমতি নেই। কিন্তু ইচ্ছেমতো ভাড়ায় তাতেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার চালকদের দাবি- পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়েই তারা রাজপথে অটোরিকশা চালান।
সম্প্রতি মোজ্জামেল নামের এক যাত্রী ইনকিলাবকে জানান, তিনি সিলেট থেকে জরুরি কাজে ঢাকায় আসেন। এনা পরিবহনের একটি বাসে মহাখালী টার্মিনালে আসার পর সিএনজি অটোরিকশা যোগে তিনি ফার্মগেট যান। এ সময় তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালককে মিটারে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু চালক মিটারে ভাড়ায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি ২০০ টাকা চুক্তিতে তিনি গন্তব্যে যান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিটারে গেলে সেখানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আসার কথা। এ জায়গায় ২০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে চালক।
মনিরুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী ইনকিলাবকে জানান, তিনি কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। মোজাম্মেলের মতো তিনিও মিটারে যেতে চান। কিন্তু চালক মিটারে যেতে রাজি হয়নি। পরে ৪০০ টাকা ভাড়া চুক্তি করে গন্তব্যে পৌঁছান তিনি। তবে রাস্তায় পুলিশ জিজ্ঞাসা করলে মিটারে যাওয়ার কথা বলতে বলেন চালক। তবে চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিটারে গেলে তাদের পোষায় না। কারণ প্রতিদিন সিএনজি অটোরিকশার মালিককে ১০০০ টাকা দিতে হয়। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে চুক্তিতে ভাড়া আদায় করা হয়।
মখলিছুর রহমান নামের এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, আমি প্রতিদিন মালিককে ১০০০ টাকা জমা দেই। এছাড়াও আমার সংসারের খরচ। সব মিলিয়ে যে টাকা আয় তা দিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছি। রহমত আলী নামের আরেক চালক বলেন, এটা ঠিক যে সিএনজি চালকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আাদয় করে। কারণ আমাদের মিটারে চলাচল করলে লাভ থাকে না। এমনিতেই জমার টাকা বেশি। দোষ চালকদের হলেও আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকরা। তারা নির্ধারিত টাকার চেয়ে প্রতিদিন অতিরিক্ত জমার টাকা আদায় করছেন। আবার যানটি দুই বেলা দুই চালকের কাছে দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিএনজির ক্ষেত্রে এখন সরকার নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু মালিকরা আমাদের কাছ থেকে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু ইনকিলাবকে বলেন, মিটার এখন অকার্যকর। এটা শতভাগ সত্য। ঢাকায় বৈধ সিএনজি অটোরিকশা সংখ্যা ১৫ হাজার। তবে আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলে অবৈধ। ওইসব অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর জেলা থেকে আনা হয়েছে। ওইসব সিএনজিতে মিটার নেই। তারা মিটার ছাড়াই চলাচল করে। ওইসব সিএনজি অটোরিকশা রাজধানীতে চলাচল করায় মিটার লাগানো গাড়িগুলোর অকার্যকর হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করলে তারা শুধু ওয়্যারলেস মেসেজ দেয়। এসময় দুই থেকে তিন দিন বন্ধ থাকে। পরে আবার পুলিশ ডেকে নিয়ে আসে এবং বলে আমরা তো রাস্তায় ডিউটি করব তোদের অসুবিধা কি? তিনি আরো বলেন, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা রাজধানীতে না থাকলে মিটারে যাত্রী পরিবহন করা যেতো। এছাড়াও অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ করলে রাজধানীতে যানজটও কম থাকবে।
তবে চালকদের কাছ থেকে মালিকপক্ষ বেশি টাকা আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মালিকপক্ষও প্রতিদিন ১০০০ টাকা নিচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক সেট ওয়েল সেট ছিল আগে ১২০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে এক সেট ওয়েল সেট ৬০০ টাকার উপরে। শুধু তাই নয়, প্রতি কেজি গ্রিরিজে দাম ১০০ টাকা করে বৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ৮৭ ভাগ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। ৯২ ভাগ অটোরিকশা মিটারের অতিরিক্ত ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়। যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৮ শতাংশ অটোরিকশা চালক।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, মালিক ও চালকদের কাছে অসহায় যাত্রীরা। তারা ইচ্ছেমতো জমা ও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের যৌথ অভিযানের মাধ্যমে মিটারবিহীন চলাচল বন্ধ করার কথা। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে ভাড়া নির্ধারণ, নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠানো এক স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিআরটিএ’র পরিচালক এবং মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।