বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইহসানের যে আদেশ করেছেন, তার বিশ্লেষণ ও বাস্তব প্রয়োগ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ও সুন্নাহ্য় উল্লেখিত ও পরিস্ফুট হয়েছে। তাই ইহসান সম্পর্কিত মৌলিক তিনটি হাদীস উল্লেখ করা হলো :
১. শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ওপর ইহসানকে অবধারিত করেছেন। অতএব তোমরা (হত্যার উপযুক্ত কাউকে) হত্যা করলে সুন্দরভাবে হত্যা করো এবং (কোনো পশু) জবাই করলে সুন্দরভাবে জবাই করো। জবাইকারী যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং জবাইয়ের পশুকে শান্তি দেয়। (সহীহ মুসলিম : ১৯৫৫)।
২. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীস, যা ‘হাদীসে জিবরীল’ নামে পরিচিত। তাতে রয়েছে- একদা সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসা ছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম মানুষের আকৃতিতে এলেন। সাহাবায়ে কেরামের কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। তিনি নবী (সা.)-এর সামনে এসে বসলেন এবং তাঁর হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। এরপর তাঁকে দ্বীন সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। একটি প্রশ্ন করলেন ইহসান সম্পর্কে।
উত্তরে নবী (সা.) বললেন : ইহসান এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তবে তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। (সহীহ মুসলিম : ৮।
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন : আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন- তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজ করে, সে যেন তা নিখুঁতভাবে করে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, খ. ০৪, পৃ. ২৫৩ : ৪৩৬৯)।
এই হাদীসগুলো থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় জানতে পারি : ক. সবার প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ: এটি ইহসানের মৌলিক একটি দিক। খ. ইবাদতের মাঝে ইখলাস পয়দা করা এবং আল্লাহর ধ্যান-খেয়াল অন্তরে জাগ্রত রাখা : এটি ইবাদত সংশ্লিষ্ট ইহসানের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এর গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, নবী (সা.) জিবরীল আ.-এর প্রশ্নের জবাবে ইহসানের এই দিকটিই তুলে ধরেছেন।
এর দ্বারা অন্তরে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব, মহত্ত্ব, মর্যাদা ও ভয় জাগ্রত হয়। ফলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, আমলে ইখলাস পয়দা করা এবং সুন্দর ও সুচারুরূপে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং ইহসানের অন্যান্য দিক আঞ্জাম দেয়া সহজ হয়।
এই হাদীসে বিশেষভাবে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে যে, ইবাদতে এই ধ্যান-খেয়াল জাগ্রত রাখবে। কেননা জীবনের মূল উদ্দেশ্যই তো আল্লাহ তাআলার ইবাদত। তবে এই বিধান শুধু ইবাদতের নয়; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের। তাই সর্বাবস্থায় অন্তরে এই চিন্তা জাগ্রত রাখবে। চেষ্টা করবে, এটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। কোরআন মাজীদে আমাদেরকে এই নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তোমরা যা-কিছুই কর, তিনি তা দেখেন। (সূরা হাদীদ : ৪)।
আরো ইরশাদ হয়েছে : তুমি কি দেখনি আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহ জানেন? কখনও তিনজনের মধ্যে এমন কোনো গোপন কথা হয় না, যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি না থাকেন। এবং কখনো পাঁচজনের মধ্যে এমন কোনো গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন- তারা যা কিছু করত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুজাদালা : ৭)।
এ ধরনের আরো অনেক আয়াত কোরআন মাজীদে আছে। এগুলো নিয়ে যদি আমরা চিন্তা-ভাবনা করি এবং মোরাকাবা অব্যাহত রাখি তাহলে ইনশাআল্লাহ একসময় তা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যাবে এবং এর ফায়দা ও বরকত আমাদের জীবনে উপলব্ধি করব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।