Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার হাদীসের শায়খ মাওলানা ফখরুদ্দীন (র)- স্মৃতিচারণ

ডঃ আবুল কালাম আজাদ | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৮ এএম

ফাজিল পরীক্ষার রেজাল্টের পর সিদ্ধান্ত নিলাম মিল্লাতেই কামিল পড়ব। আমরা হব মিল্লাতের প্রথম ব্যাচের কামিল। দূর্বাটি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব মরহুম মাওলানা আব্দুস সালাম সাহেবের সাথে বুখারীর প্রথম সবকও নিলাম।

ছুটিতে বাড়ি গেলাম- যশোরে। ফিরে এসে পুরাদমে ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে ফিরে এসে প্রথমেই এলাম বুয়েটের তিতুমীর হলে আমার সেজো ভাইয়ের ওখানে। এরপর কি কারণে গেলাম ঢাকা আলিয়ার হলে বর্তমান যশোরের লাউড়ি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফিজ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে পেলাম আমার মিল্লাতের ক্লাস মেট ও অন্তরঙ আব্দুস সালাম আজাদীকে।

আজাদীকে সেই কাল থেকেই চাচা বলে ডাকি। সালাম চাচা বলি। সালাম চাচা বললো- চাচা, মিল্লাতে তো আর পড়া হচ্ছে না।

আমি বললাম- সর্বনাশ ! কেনো? কি হলো?
সে বললো- আমি তো ঢাকা আলিয়াতে ভর্তি হয়েছি। আর তোমার জন্যেও একটা ফরম নিয়ে রেখেছি।
আমি তো একেবারেই অপ্রস্তুত। আমি হঠাৎ করে এতো বড় সিদ্ধান্ত?

সে বলল- ঢাকা আলিয়াতে বড় বড় মুহাদ্দিস আছেন। এর মধ্যে একজন হলেন মাওলানা ফখরুদ্দীন। খুবই ভালো শিক্ষক। তাছাড়া আছেন- মুকাদ্দাস আলী হুজুর, আব্দুর রহীম হুজুর, ওয়াজিউল্লাহ হুজুর। আমি ইস্তেখারা করেছি। ইস্তেখারাতে ঢাকা আলিয়া পড়ার ব্যাপারে ইশারা পেয়েছি।

আমি মুফিজ ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করলাম। উনিও ঢাকা আলিয়াতে পড়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন। পরামর্শ দিলেই তো হবে না। বাড়ি থেকে বাবার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত পাল্টাবার চেষ্টা করতে হবে। কারণ ঢাকা আলিয়া পড়া মানে মাসে ১০০০ টাকা খরচ (১৯৮৯ সালে)। সেজ ভাইয়ের সাথে কথা হলো। বাবার কাছে বিস্তারিত চিঠি লেখা হলো। কারণ তখন বাড়িতে ফোন ছিলো না। এদিকে আমিও ঢাকা আলিয়াতে ভর্তি হবার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

আব্বা ফেরত চিঠিতে অনুমতি দিলেন। ঢাকা আলিয়াতে ভর্তি হয়ে গেলাম।
মুফিজ ভাই পরের দিন বিকালে বললেন- চলেন আপনাকে ফখরুদ্দীন হুজুরের বাসায় নিয়ে যাব। পরিচয় করিয়ে দিব।

হুজুর থাকতেন বখশীবাজারের খাজে দেওয়ান রোডের ছোট্ট একটা বাসায়। এতো বড় একজন শিক্ষক এতো সাধারণ একটা বাসায় থাকেন দেখে আমি একটু অবাক হলাম। আরো অবাক হলাম দুইটা কারণে। উনার বাসায় অনেক বই-কিতাব আছে। উনি প্রচুর পড়াশুনা করেন। যতক্ষণ উনার ওখানে ছিলাম ততক্ষণ ইলমী বিষয় নিয়েই আলোচনা হলো।

পরে জানলাম- প্রতিদিন আসরের পর হুজুরের ওখানে ভালো ছাত্ররা চা-নাস্তা নিয়ে যান এবং বিকাল বেলা হুজুরের সাথে ইলমী গল্প করে কাটান। আমার কাছে এই ইলমী আড্ডাটা খুবই পছন্দ হলো। উলামায়ে কেরামের কাছে বসলে যদি ইলমী আলো না পাওয়া যায় তাহলে সেখান থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই কল্যানকর।

আমার জন্যে আরেকটা সুযোগ হলো- আমি ছিলাম খ বিভাগে এবং শায়খ ফখরুদ্দীন হুজুর ছিলেন আমাদের গ্রুপের টিউটর। আর আমি ছিলাম খ গ্রুপের মনিটর। ফলে, হুজুরের সাথে আমার সম্পর্ক তৈরীতে বেশী সময় লাগে নি। তাড়াতাড়ি হুজুরের অতি নিকটে আসার আরো একটা কারণ ছিলো আমার অরাজনৈতিক অবস্থান। আমি কোন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না সচেতনভাবেই। অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি আমাদের প্রজন্মকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাদারিত্বের অনেক নিচে গিয়েছে বলে আমার ধারণা ছিলো। আমার আশেপাশে অনেক ভালো ছাত্রকে দেখতাম সারাদিন মিছিল-মিটিং করে বেড়াতো অথচ এক লাইন আরবি ভালো করে পড়তে পারতো না। (চলবে)

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক। মুদীর, ইউরোপিয়ান জামিয়া ইসলামিয়া, ইউকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাদীসের শায়খ মাওলানা ফখরুদ্দীন (র)- স্মৃতিচারণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ