Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৭২ ঘণ্টার পর মামলা না নেয়ার কোনো নির্দেশনা রায়ে নেই

রেইনট্রির ‘ধর্ষণ মামলা’র পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিচারিক এখতিয়ার স্থগিত হওয়া বিচারক মোছা: কামরুনন্নাহারের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে ‘৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া’ সংক্রান্ত কোনো পর্যবেক্ষণ উল্লেখ নেই। তার দেয়া ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত মঙ্গলবার রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। লিখিত ওই রায়ে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নিতে বিচারক কামরুন্নাহারের কোনো নির্দেশনা কিংবা পর্যবেক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার রায় দিয়ে আলোচনায় এসেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। রায়ে পর্যবেক্ষণ দেয়ায় সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারিক এখতিয়ার স্থগিত করেন। আইন মন্ত্রণালয় তাকে ওই আদালত থেকে প্রত্যহার করে আইন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত করেন। গত ১১ নভেম্বর রেইনট্রি হোটেলে কথিত ধর্ষণ মামলার রায় দেন তিনি।

প্রকাশিত রায়ে দেখা যায়, বিচারক মোছা: কামরুন্নাহার লিখেছেন, যৌনজীবনে অভ্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অনেক নারী এখানে বিচারের জন্য আসেন, যেখানে দেখা যায় কথিত ঘটনার অনেক দিন পর তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওপর যৌন সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলা করার সময় বিষয়টিতে নজর রাখা হলে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে, ধর্ষণের যে কোনো ধরনের নমুনা যথাযথভাবে পাওয়া গেলে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো প্রমাণ হলে, তা ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গ্রহণ করা যায়।’

আলোচিত ওই মামলার লিখিত রায় মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ হয়। বিচারক কামরুন্নাহারের স্বাক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টে। ওই রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন, সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল টেস্ট করা না হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে লেখা পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে মামলাকারী তরুণীদের ‘যৌনকাজে অভ্যস্ত’ মর্মেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ট্রাইব্যুনাল বহু ধর্ষণ মামলা দেখেছেন উল্লেখ করে বিচারক লিখেছেন, যৌনজীবনে অভ্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অনেক নারী এখানে বিচারের জন্য আসেন, যেখানে দেখা যায় কথিত ঘটনার অনেক দিন পর তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওপর যৌন সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলা করার সময় বিষয়টিতে নজর রাখা হলে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে (বহু মামলায় চিকিৎসকেরা যেমন মতামত দিয়েছেন), ধর্ষণের যে কোনো ধরনের নমুনা যথাযথভাবে পাওয়া গেলে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো প্রমাণ হলে, তা ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গ্রহণ করা যায়।’ ‘তখন ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার এবং ন্যায়বিচার সর্বোত্তমভাবে করা সম্ভব।’

মামলার দুই বাদীর বিষয়ে কামরুন্নাহার লিখেছেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক দুই ভুক্তভোগীর মেডিক্যাল পরীক্ষা যদি ঘটনার পরপরই হতো অথবা যত দ্রুত সম্ভব করা হতো, তাহলে বিচারের ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত পাওয়া সম্ভব হতো। এমনকি তারা ঘটনার পরপরই বা ওই দিনই মামলা করলে পুলিশ তাদের মুখ, গাল বা শরীরের অন্য কোনো অংশে যৌন সহিংসতার আলামত চিহ্নিত করতে পারত। আর বিচারের ক্ষেত্রে সেগুলো হতো নথিভুক্ত প্রমাণ।’
ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা হওয়ায় এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণের অভাবে অভিযোগের সত্যতা আদালতে প্রমাণ করা যায়নি বলেও রায়ে উল্লেখ করেন এই বিচারক। তিনি লিখেছেন, ‘বাদীরা প্রথমে মামলা করতে যাননি। বরং ঘটনার দীর্ঘ সময় পর সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করাতে বাদীদের নিয়ে যান। এতে প্রমাণ হয় মামলাটি সাজানো।’ ‘এছাড়া বাদীপক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে রয়েছে অসঙ্গতি, অসামঞ্জস্যতা, যেটি ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে না। এটি মামলাটির গোড়ায় আঘাত করেছে।’

রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ের ‘আদেশ’ অংশে বলা হয়েছে, ‘অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিব, বিল্লাল হোসেন ও রহমত আলীর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাদের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১)/৩০ ধারায় অপরাধ থেকে খালাস দেয়া হলো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ