Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা সম্পর্কে যা বলা হয় সর্বাংশে তা সত্য নয়

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভাই বোনেরা, আপনারা আমার সালাম নেবেন। বেশ কিছু দিন হলো আপনাদের খেদমতে হাজির হতে পারিনি। আসলে আমার করোনা হয়েছিল। সংক্রমণটা মোটামুটি গুরুতরই ছিল। আমার পজিটিভ ধরা পড়ে ২২ সেপ্টেম্বর। সাধারণত ধারণা করা হয় যে, ১৪ দিন পর করোনা নেগেটিভ আসে। আরো ধারণা করা হয় যে, সাধারণত ১২ দিন পর ভাইরাসগুলো নিষ্ক্রিয় হয় অথবা মরে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এসব কিছুই হয়নি। এমনকি গত ৮ অক্টোবর ১৮ দিন পর আমি যখন টেস্ট করি তখনও আমার পজিটিভ আসে। কেউ যদি মনে করেন যে ১৮ দিন পর যে, পজিটিভ আসে সেগুলো ছিল ডেড সেল বা মৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃত ভাইরাস, কিন্তু বাস্তবে সেটি ছিল না। আমি আমার ব্যক্তিগত ঘটনা উল্লেখ করছি একারণেই যে, আমি ৮ অক্টোবর গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হই। ১০ দিন হাসপাতালে ছিলাম। এই কয়দিন হাসপাতালে ডাক্তার নার্স এবং অন্যান্য করোনা রোগীর সাথে অনেক আলোচনা হয় এবং করোনা সম্পর্কে এমন অনেক কথা জানতে পারি যেগুলো করোনা সম্পর্কে নতুন এবং আমার বাস্তব অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। সেসব নতুন কথাই আপনাদেরকে জানাবো।
আগেই বলেছি, ৮ অক্টোবর আমার করোনার নেগেটিভ আসার কথা। ঐ দিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আমি টেস্ট করাই এবং সেদিনও পজিটিভ আসে। অথচ, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আমার নেগেটিভ আসার কথা। ৮ তারিখ বিকাল ৪টার দিকে আমার যুগপৎ প্রচন্ড বমি, পাতলা পায়খানা অর্থাৎ ডায়রিয়া এবং গলগল করে কফ পড়তে থাকে। অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়ে পড়লে আমাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে আমাকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির প্রফেসর মাহবুবুল আলমের অধীনে ভর্তি করা হয়। ইমার্জেন্সিতে তিনটি ইনজেকশন দিয়ে আমার বমি এবং লুজ মোশন বন্ধ করা হয়। তারপর সপ্তম তলায় অবস্থিত কোভিড ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। আমাকে রাখা হয় ৭২১ নং কেবিনে। পরদিন আমাকে মেডিসিনের প্রফেসর তৈমুর নওয়াজের অধীনে নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, বিগত ৪৫ বছর ধরে আমি আইবিএসের রোগী। আমি ভেবেছিলাম যে, আমার আইবিএস প্রকট আকার ধারণ করেছে। কিন্তু পরদিন থেকে সম্পূর্ণভাবে কোভিডের চিকিৎসা করা হয়। আমার ইকো, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ নানান পরীক্ষা করা হয়। সব রিপোর্টই ভালো ছিল। জানতে পারি যে, করোনা ভাইরাস আমার আইবিএসে আঘাত হেনেছে। এজন্য প্রফেসর নওয়াজ আমার অন্যান্য সব ঔষধ বাতিল করে শুধুমাত্র করোনার ট্রিটমেন্ট করেন।

হসপিটালে থাকাকালীন জানতে পারি, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তখন, যখন তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল নেমে যায়। একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ বলেন যে, অক্সিজেন লেভেল ৯৩ পর্যন্ত নরমাল। ৯৩ এর নিচে গেলেই চিন্তার বিষয়। আমাকে দ্বিতীয় দিন থেকেই বিরতিহীনভাবে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তারপরেও তৃতীয় বা চতুর্থ দিনের রাতে আমার অক্সিজেন লেভেল নেমে ৮৮ তে আসে। ডাক্তাররা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। রাত ৪টার দিকে আমার অক্সিজেন লেভেল ৯৪ এ উন্নীত হয়। আমার আগেও বিশ^াস ছিল, তখনও বিশ^াস ছিল এবং এখনও বিশ^াস করি যে, রাখে আল্লাহ মারে কে! আসলে হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। এই যে ডাক্তার সাহেবরা চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ করেন সেটি আসলে ডাক্তার সাহেবরা করেন না। আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ সুস্থ হয়। ডাক্তার সাহেবরা উসিলা মাত্র। যাই হোক, ১৫ অক্টোবর আবার টেস্ট করা হয়। এবার নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ ২৫ দিন পর আমার করোনা নেগেটিভ হয়। এখান থেকেই কতগুলো বিশেষ কথা।

দুই
পত্র পত্রিকায় লেখা হয় এবং ডাক্তার সাহেবরাও মতামত দেন যে, যারা ডাবল ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের সাধারণত করোনা হয় না। হলেও তেমন সিরিয়াস হয় না। হলেও রোগীকে হাসপাতালে নিতে হয় না এবং বাড়িতেই চিকিৎসা চলে। কথাগুলো আমার ক্ষেত্রে সত্য হয়নি। ১৭ এপ্রিল আমি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিই। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার ৫ মাস পর আমি এবং আমার সহধর্মিনী একদিনে একসাথে সংক্রমিত হই। আমার সহধর্মিনীও টিকা নিয়েছিলেন। আমার অবস্থা খারাপ হয়েছিল বলেই আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়। আমার জামাতাও ডাবল ডোজ নিয়েছিল। টিকা নেওয়ার কিছুদিন পর সে করোনায় আক্রান্ত হয়। সুস্থ হওয়ার আড়াই মাস পর সে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়। আমাদের পরিবারে মোট ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়। আদের মধ্যে ১৪ জন টিকা নিয়েছিল। যারা টিকা নিয়েছিল তাদের মধ্যে অন্তত ৩ জনকে অক্সিজেন দিতে হয়। সুতরাং যখন বলা হয় যে, টিকা নিলে করোনা হতে পারে, তবে সেটা সিরিয়াস হয় না, সেই ধারণা সঠিক নয়।

হাসপাতালে যেসব ডাক্তার এবং নার্স আমার চিকিৎসা করেছেন তাদের মধ্যে একজন তরুণী ডাক্তার আছেন। আমি ইচ্ছে করেই তার নাম দিলাম না। তিনি টিকা নেওয়া সত্তে¡ও ৪ মাসে ৩ বার করোনায় সংক্রমিত হন। ইউনাইটেড হাসপাতাল একটি বিরাট হাসপাতাল। যতদূর জানি ডাক্তার, অফিসার ও কর্মচারী মিলে সেখানে ২ হাজার ৪০০ জন কাজ করেন। অনেক নার্স আমাকে বলেছেন যে, তাদের বিপুল সংখ্যক স্টাফ টিকা নেওয়ার পরেও দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

২২ সেপ্টেম্বর যখন আমার করোনা ধরা পড়ে তার পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আমাকে ৬টি রেমডিসিভির ইনজেকশন দেওয়া হয়। বলা হয় যে, রেমডিসিভির ইনজেকশন নাকি শরীরের সব ধরনের ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটি কার্যকর হয়নি। কারণ, রেমডিসিভির ইনজেকশন শেষ হওয়ার সপ্তাহ খানিক পর করোনা আমার পরিপাকতন্ত্রে আঘাত হানে। ১৫ তারিখে আমার করোনা নেগেটিভ হয় এবং ১৭ তারিখে আমাকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়। তারপরেও আমাকে অন্তত ১০ দিন বিরতিহীনভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। সুতরাং একথা ঠিক নয় যে, নেগেটিভ হলেই কেউ সব বিপদ থেকে মুক্ত হলো। অনেকের ক্ষেত্রে নেগেটিভ হওয়ার পর পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশনস বা করোনা উত্তর জটিলতা দেখা দেয়। এটিকে কেউ কেউ লং কোভিড বলেন। সুতরাং নেগেটিভ হওয়ার পর ফলোআপ অ্যাকশনে থাকতে হয়।

তিন
এবার করোনা সম্পর্কে আরেকটি কথা। আমেরিকা-ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশে বলা হচ্ছে যে, টিকা নেওয়ার ৬ মাস পর টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। এজন্য ৬ মাস পর আবার টিকা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করেছেন। এটিকে বলা হয় বুস্টার ডোজ। আমেরিকা-ইংল্যান্ড প্রভৃতি উন্নত দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বুস্টার ডোজের সুপারিশ করেছেন। ঐসব দেশের অনেক মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। আমাদের দেশেও বুস্টার ডোজ নেওয়ার বিষয়টি সরকার চিন্তা করতে পারেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ১৩ কোটি মানুষকে আগে টিকার আওতায় আনতে হবে। কথাটি সঠিক। কিন্তু যারা সিনিয়র সিটিজেন, অর্থাৎ যারা ৬০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে তাদের মধ্যে যাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ২০২২ সাল পার হয়ে যাবে। ততদিন কি এইসব বয়স্ক মানুষ আবার আক্রান্ত হবেন? প্রয়োজন হলে বুস্টার ডোজ প্রাইভেট সেক্টর বা বেসরকারি খাতে দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হলে টিকা দেওয়ার জন্য ফি অর্থাৎ মূল্য ধার্য করা যেতে পারে। আমি যেটি বলছি, সেটি বাস্তব এবং বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

Email: [email protected]



 

Show all comments
  • Mithun Mistry ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    দেশের করোনা সাইন্টিস্টরা এখন কোথায় আছে? নাকি তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়ছে?
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Roy Laxman ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    প্লিজ সবাই একটু নিষেধাজ্ঞা গুলো মেনে চলুন। অন্তত এইটুকু বোঝার চেষ্টা করুন আমাদের পরিস্থিতি ভালো নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Nitu Adhikary ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    দিনে চার বার চা খাওয়া, গরম জলের ভাপ নেওয়া, গরম জল খাওয়া,, এসবে করোনা ভাল হয়,,, এই তথ্য কতটুকু সত্য জানতে চাই,,,,!!
    Total Reply(0) Reply
  • Jaber Ahmed Rumel ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    আচ্ছা রাতের বেলা আকাশের দিকে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে করোনা ভাইরাসের সমস্যার সমাধান কি হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Rashid Khan ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    করোনা নিয়ে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ নয়, মিডিয়াকে মুক্ত করে দিন, সঠিক তথ্য সামনে এলে মানুষ সতর্ক হবে বেশি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন