Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসএসসির প্রশ্নফাঁসের নামে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৫০ পিএম

চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, কালিমুল্লাহ, আল রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান। আজ রবিবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার এ বিষয়ে বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। প্রতারণার জন্য এসব চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালায়। এদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে সাইবার পেট্রলিং করে ডিবি।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পূবাইল থানা এলাকা ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত দুটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তিনটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, নগদ ১২ হাজার টাকা ও ছয়টি সিম। ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, চক্র দুটি মূলত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সব বিষয়ের প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞাপন দিতো। প্রশ্ন পেতে পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সদস্যপদ নিতে হতো। এরপর প্রতিটি প্রশ্নের জন্য দিতে হতো ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

চক্রগুলো বিভিন্ন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের এই বলে প্রলোভন দেখাত যে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবেন। সেই ছবি তারা বিভিন্নজনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম ও জিমেইলে সেন্ড করে দেবে। এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে চক্রগুলো নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেসেঞ্জার, ফেসবুক পাবলিক গ্রুপগুলো হলো, কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিক, পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি- অল এক্সাম হেল্পিং জোন ও এসএসসি ২০২১ অল বোর্ড ইত্যাদি। প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৭০০ জন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আল রাফি ওরফে টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। সে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আলমগীর হোসেন নামে একটি ফেক আইডি খোলে। আইডিটি খোলার জন্য তিনি টেম্পোরারি মেইল আইডি নিদিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেন। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিনদিন সক্রিয় থাকার পর অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়।তিনি বলেন, গ্রেফতাররা আসলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব। কিছু ছাত্র ও অভিভাবক ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রশ্নপত্র কেনার চেষ্টা করেন। গ্রেফতাররা মূলত এসব অমনোযোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা আকর্ষণীয় অফার দিত।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে ম্যানুয়ালি ও সাইবার পেট্রলিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িতদেরকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করেন এবং কেনার চেষ্টা করেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। গ্রেফতার কালিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, গ্রেফতার আল রাফি টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আল মারুফ হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ