পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শহীদ মতিউর পার্ক। পরিচিত গুলিস্তান পার্ক হিসেবে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে অবস্থান বলেই গুলিস্তান পার্ক হিসেবেই সবাই চেনে। অযত্ন অবহেলায় পার্কটির অবস্থা এখন বেহাল। নজরদারি না থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান স্থাপনা ও দামি যন্ত্রপাতি। যত্নের অভাবে মরে যাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় নানা জাতের বৃক্ষ। গতকাল শনিবার গুলিস্তানের মতিউর পার্কটি ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে নিহত মতিউরের নামে গুলিস্তান এই পার্কের নাম রাখা হয়। পার্কের আয়তন প্রথম দিকে ৩৭ দশমিক ৯ বিঘা থাকলেও বর্তমানে চারদিকের অনেক জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় আয়তন কিছুটা কমে গেছে। যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনায় ১৯৯৫-৯৬ সালে পার্কের ভিতর দিয়ে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে পার্কের জায়গা নিয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চ নির্মাণ করা হয়। এই মঞ্চে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কটির চারদিকে ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় এর আশেপাশের রাস্তাগুলো সবসময় থাকে ময়লা আবর্জনায় ভরা। দক্ষিণ পাশের সড়কে রাজধানীর বাইরে যাওয়ার বেশকয়েকটি বাসের কাউন্টার। এখানে সবসময় লোকজনের জটলা লেগেই থাকে। এই পাশে পার্কের লোহার গ্রিল দেয়া ছোট একটি গেইট দিয়ে লোকজন আসা-যাওয়া করে। গ্রিলের বাউন্ডারি লাগোয় স্থানে অনেক দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এসব দোকানের পরিত্যক্ত খাবার ও খাবারের প্যাকেট, কাগজ ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে পার্কের ভিতর। পার্কের ভিতরে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে লোকজন বসবাস করতে দেখা গেছে।
পূর্ব পাশের রাস্তায় বেশিরভাগ সময়ই লেগে থাকে যানজট। বাসের পর বাস লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এখানে। দিনের পর দিন এই রাস্তার অর্ধেক জায়গা দখলে রাখে এই বাসগুলো। এই পাশেই রাস্তার পাশে গড়ে তোলা হয়েছে দোতলা জিমনেসিয়াম ভবন। ব্যায়াম করার জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম আছে এখানে। ভবনটিতে উন্নতমানের কাঁচ ব্যবহার করায় ভেতর ও বাহিরের দুই দিকের দৃশ্য দেখা যায় পরিস্কারভাবে। কিন্তু এতো দামি জিনিসপত্র রয়েছে প্রায় নিরাপত্তাহীন। ব্যায়ামাগারের নিচ তলায় দড়িতে ঝুলছে লুঙ্গি, গামছা, নানা রকমের পোশাক।
পার্কের পশ্চিমপাশে বাইরে গুলিস্তানের মূল সড়ক। পার্কের সাথের ফুটপাথে শত শত ছোট দোকান। ইলেকট্রনিক্স ও বাহারি পণ্যের দোকানের সব ময়লা কাগজ ফেলা হয় পার্কের ভেতরে। এতে এলাকাটি নোংরা স্থানে পরিনত হয়েছে। পার্কের ভেতরে পশ্চিম পাশের কোণায় বসে থাকে কিছু মাদকাসক্ত ব্যক্তি। জটলা বেধে বসে মিলিতভাবে টানছে মাদক। ভেতরে মহানগর মঞ্চের বাহিরের খোলা জায়গায় পড়ে আছে ময়লা কাগজ ও পলিথিন। এর সামনে লোহার ভাঙা গ্রিল রাখা হয়েছে। মনে হয় বেশ অনেক দিন আগেই রাখা হয়েছে। গাছের কোণায় বসে নিয়মিত মাদক সেবনের চিহৃও দেখা যায় এসব স্থানে। মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনের হাঁটার পথ ও আঙিনায় চিপসের খালি প্যাকেট ও আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। মূল ফটকে কয়েকজন বসে বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন। ভবনের জানালার কয়েকটি কাঁচ ভাঙা লক্ষকরা গেছে। সামনের ফোয়ারায় পানি নেই আছে ময়লার স্তুপ।
উত্তর পাশে রয়েছে পার্কে প্রবেশের পাশাপাশি দুইটি বড় গেইট। মহানগর নাট্য মঞ্চে অনুষ্ঠান থাকলে অতিথিরা এই গেইট ব্যবহার করেন। ভিতরে প্রবেশ করতেইই চোখে পড়ে সুন্দর দামি ইট ও সিমেন্টের তৈরি ফুটপাথ। কিন্তু ফুটপাথের দুইপাশে ঘাস লাগানো স্থানে কাগজ ও ময়লা কাপড় ফেলে নোংরা স্থানে পরিণত করা হয়েছে। পার্কের বিভিন্ন স্থানে জটলা বেধে বসে আছে ছিন্নমূল কিছু নারী-পুরুষ। গাছের নিচে পলিথিন মোড়ানো কয়েকটি ঝোপড়ি। ঝোপড়িগুলোতে কিছু মানুষের বসবাস। কয়েকটি স্থানে আছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। ভাত, ডিম, ডাল বিক্রি করছেন মধ্যবয়সী এক মহিলা। রাজধানীর রিকশা চালকরাই মূলত এই দোকানের প্রধান ক্রেতা।
পার্কের ভিতরে চারদিক বাঁধাই করা পুকুর। চারদিকের পাড় বাঁধাই করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পুকুর পাড়ের গাছগুলোর নিচে লাল ইট দিয়ে বাঁধাই করে দেয়া হয়েছে। পুকুরের পানিতে ফেলা হয় কাগজ, পুরানো কাপড় ও প্লাস্টিক। পুকুরের দৃশ্য উপভোগের জন্য পূর্ব পাড়ে তৈরি হয়েছে বসার মাচা। সেই মাচাও ব্যবহার হয়না ঠিকভাবে। মাচার নিচে বাঁশের আরেকটি মাচা তৈরি করা হয়েছে রাতে কেউ কেউ এখানে থাকে। মানুষের গোসলের জন্য রয়েছে একটি সুদৃশ্য ঘাট। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে সুদৃশ্য ঘাটটি দেখে যে কারো নজরকাড়ে। কিন্তু ছিন্নমূল, টোকাই শেণির লোকজনের অসচেতন ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে। পার্কে বিভিন্ন স্থানে স্টিলের ল্যাপে দামি বাতি, এছাড়াও মাটিতে স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের বাতি। এতে সৌন্দর্য বেড়েছে পার্কের। পার্কে আছে আম, জাম, ঝাউ, মেহগনি, পাতাবাহার, আকাশি, দেবদারু, গাব, বকুল, ইউক্যালিপটাস গাছ। এছাড়াও কিছু নাম না জানা বিভিন্ন জাতের গাছও দেখা যায়। এসব গাছের ভাঙা ডাল পড়ে আছে কয়েকটি স্থানে।
শুধু চারদিকের সীমানা প্রচীর দেয়া হয়েছে ভালোভাবেই। আর ভেতরে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বালাই নেই। এই পার্কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কাউকেই দেখা যায়নি। সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পার্কে আসা মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে এর সংস্কারকাজে সবশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। তবে, এতো টাকায় কি কি কাজ হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। পুরো পার্কে আধুনিক ময়লার ঝুড়ি থাকলেও ব্যবহার হয় মাত্র কয়েকটি।
গুলিস্তানের কাপড় বিক্রেতা নয়ন মিয়া বলেন, এই পার্কে কোন ভদ্রলোকরা বেড়াতে আসেন না। অসামাজিক কার্যকলাপ ও মদকসেবীদের করণে রাতে এই পথ দিয়েও লোকজন হাটতে ভয় পায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যত্ন নিলে মানুষ নিয়মিত আসবেন বলে জানান তিনি।
পার্কের ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী সরোয়ার আলম। তিনি বলেন, উন্নত সবকিছুই কিন্তু ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে এই পার্কের। সকাল ও বিকেল বেলার অবসর সময়ে সময় কাটানোর কোন ব্যবস্থা নেই। নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সবসময় মাদকসেবীদের আখড়া থাকে এখানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।