Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হলে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন কুবির ছাত্রলীগ নেত্রীরা!

কুবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৫৮ পিএম | আপডেট : ৯:১৮ পিএম, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা। হলে সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গান বাজানো, দলীয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়া, নিজেদের ইচ্ছায় হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেয়া, রাতে নির্ধারিত সময়ের পর হলে প্রবেশ ও বের হওয়া, সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করাসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শাখা ছাত্রলীগের পশ্রয়ে এবং হল প্রশাসের নির্লিপ্ততায় এসব করছেন তারা।
গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা নয়টার দিকে ছাত্রলীগ নেত্রী অর্পণা নাথ, জিনাত ইভাসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের টিভি রুমে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সিসিলি জামানের জন্মদিনের পার্টি করছিলো। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকায় কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদকর্মী ও প্রততত্ব বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে বিষয়টি জানালে তিনি সেখানে গিয়ে উচ্চশব্দে গান বাজানোর কারণ জানতে চান। এসময় তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন ছাত্রলীগ নেত্রী অর্পণা নাথ। এসময় উলটো গানের সাউন্ড আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি পরে প্রভোস্টকে জানালে কিছুক্ষণ পর গান বন্ধ করা হয়।
এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও এসব পার্টিতে জুনিয়রদের যেতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জোরপূর্বক তাদের পক্ষে এসব জুনিয়রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করানো অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে হলের ডাইনিং নিয়ে যখন তখন মিল বন্ধ করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, অনেকেরই এখন পরীক্ষা চলছে, এসময় বাহিরে যেয়ে খাওয়া সম্ভব না। হলের ডাইনিং এর খাবারের মান নিয়ে কথা বলায় মান ভালো না করে উল্টো ডাইনিংই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ছাত্রী হলে রাত নয়টার প্রবেশ এবং বাহির হওয়া নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে ছাত্রলীগ পরিচয়ে এসব নেত্রীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গভীর রাত পর্যন্ত হল থেকে বের হওয়া ও প্রবেশ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এই নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া করার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
হল ছাত্রলীগের নেত্রীদের এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, হলে তারা যাচ্ছেতাই করছে, প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের উচ্চস্বরের পার্টির কারণে হলে পড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হলের ডাইনিং এর খাবার, ছাত্রলীগ নেত্রীদের কোনো অনিয়ম নিয়ে কথা বললেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। দেওয়া হয় হল ছাড়া করার হুমকি।
এরআগেও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের নেত্রী ইসরাত জাহান জেরিন, অর্পণা নাথসহ কয়েকজন সেসময়কার ডাইনিং ম্যানেজার লিপি আক্তারকে রুমে নিয়ে সাউন্ড বক্সে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে মারধর করে। সে ঘটনায়ও শাখা ছাত্রলীগ কিংবা হল প্রশাসনকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
উচ্চস্বরে গান বাজানোর বিষয়টি অস্বীকার করে অপর্ণা নাথ বলেন, দুইজনের জন্মদিন ছিল। জুনিয়ররা আমাকে এসে নিয়ে গেলে সেখানে ১৫ মিনিটের মতো গান বাজানো হয়েছে। তবে একজন এসে অভিযোগ করলে তার কথাবার্তার এপ্রোচ ভাল ছিল না বলে তাকে বের হয়ে যেতে বলেছি। আমরা কাউকে দিয়ে পোস্ট করাইনি। দুইটা পোস্ট আসছিল এবং তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ডাইনিং আমরা হল প্রশাসনের নির্দেশেই বন্ধ করেছি।
শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। এইরকম অভিযোগ অনেকেই করে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর হলে প্রবেশ ও বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই এখন রাত দশটায় হলে প্রবেশ করে। আপনারা কি এসব দেখেন না। আর এসব বিষয় প্রশাসন দেখে, আমার কিছু বলার নাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, গতকালের বিষয়ে অভিযোগ করার পর আমি ও প্রভোস্ট স্যার নির্দেশ দিলে তারা বন্ধ করে দেয়। তবে পরীক্ষার সময় উচ্চস্বরে গান বাজানো ঠিক হয়নি। আবার যদি এরকম করে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাতে নেত্রীদের বের হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে আমাদের কোন আমাদের কোন সাংগঠনিক কাজে তাদের ডাকি না। যারা বাহিরে যায় তারা ব্যক্তিগত কাজে যায়, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আর এসব বিষয় হল প্রশাসন দেখবে।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট মো: সাদেকুজ্জামান বলেন, উচ্চস্বরে গান বাজানো নিয়ে আগে কখনো এইরকম অভিযোগ আসেনি। অভিযোগের বিষয়ে আমরা দুইপক্ষের সাথে কথা বলব। কেউ বার্থডে সেলিব্রেশন করলে বাধা দেওয়া যায় না। তবে নিয়মের মধ্য থেকেই করতে হয়। তবে ডাইনিং বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ডাইনিং বন্ধ করার বিষয়ে আমি কোন নির্দেশ দেইনি। যারা ডাইনিং মেইনটেইন করে তারা আমার সাথে ডাইনিং বিষয় নিয়ে কথা বলবে বলে জানিয়েছে। হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে রাত ১০টার পর কাউকেই এলাউ করা হয় না। যদি কেউ বের হয় তাহলে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করে থাকে। যদি কেউ লেট করে প্রবেশ করে, তাহলে অবশ্যই তাকে যৌক্তিক কারণ দর্শাতে হবে।
তবে হল প্রভোস্ট ডাইনিং বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি জানালে অর্পণা নাথকে পুনরায় এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, প্রশাসন অফ করেছে আমি এমন কথা বলিনি৷ আমি বলেছি ম্যানেজাররা দ্বায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। তাই এক সপ্তাহের জন্য ম্যানেজাররা অফ করে দিয়েছে।
এসকল বিষয়ে রেজিস্ট্রার ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা হল প্রশাসনের সাথে কথা বলবো যাতে হলে সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় থাকে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ