Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ে করে বিপাকে মালালা ইউসুফজাই

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৫ পিএম

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের বিয়ের খবরটি বিশ্বব্যাপি সংবাদমাধ্যমেই ছিল এক বড় ঘটনা। আর ফেসবুক-টুইটারের মত সামাজিক মাধ্যমে এটি ছিল অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।

মালালা - যিনি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের তালেবান-নিয়ন্ত্রিত সোয়াত উপত্যকার মিঙ্গোরায় মেয়েদের স্কুলে যাবার পক্ষে সাহসী ভুমিকার জন্য মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন - তার বিয়ের খবর প্রকাশ করেন টুইটারে। এতে জানানো হয়, ব্রিটেনের বার্মিংহ্যাম শহরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মালালা ইউসুফজাই ও আসের মালিকের 'নিকাহ' সুসম্পন্ন হয়েছে। আসের মালিক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের একজন কর্মকর্তা। টুইটার বার্তায় মালালা জানান, "আসের এবং আমি একত্রিত হয়েছি জীবনের জন্য। সামনের দিনগুলোতে একসাথে পথ চলার জন্য আমরা বেশ উদ্বেলিত।" মালালা বলেন, এই দিনটি তার জীবনের একটি মূল্যবান দিন।

এই বিয়ের খবর সাথে সাথেই সারা বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে হাজার হাজার মন্তব্য। মূলতঃ দু'ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর অধিকাংশই অভিনন্দনসূচক বার্তা, যাতে মালালার সুখী বিবাহিত জীবন কামনা করে তার জন্য উচ্ছসিত শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতটিও ঘটেছে - আর সেটাই বিশেষ করে নজরে পড়ার মত।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ২৪-বছরের এক ব্রিটেন-প্রবাসী পাকিস্তানি মুসলিম তরুণী - যিনি একজন নোবেলজয়ী পৃথিবীবিখ্যাত নারী অধিকার কর্মী - তিনি পাকিস্তানেরই একজন মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছেন, এর মধ্যে নিন্দা-সমালোচনার কি থাকতে পারে? কিন্তু সেটাই ঘটেছে - আর তার কারণ বিয়ে বিষয়ে মালালার নিজেরই কিছুকাল আগে করা একটি উক্তি।

গত জুন মাসে ব্রিটিশ 'ভোগ'‌ সাময়িকীকে দেয়া সাক্ষাতকারে মালালার সেই উক্তিটি বার বার উদ্ধৃত হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সেই পাতাটির স্ক্রিনশটও দিয়েছেন। তাতে মালালা বলেছিলেন, "আমি এখনো বুঝতে পারি না যে মানুষকে বিয়ে করতে হবে কেন। যদি আপনি একজন মানুষকে জীবনসংগী করতে চান, তার জন্য কেন বিয়ের দলিলে সই করতে হবে, কেন এটা শুধুই একটা পার্টনারশিপ হতে পারবে না?"

জুন মাসে করা মালালার এই উক্তি প্রকাশিত হয়েছিল ভোগ সাময়িকীর জুলাই সংখ্যায়। তার পর ছয় মাস পার না হতেই তিনি নিজেই বিয়ে করে ফেললেন । ব্যাপারটা টুইটারে অসংখ্য 'বিস্মিত' প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তাকে নিয়ে চলছে ট্রোল। আর এসব প্রতিক্রিয়ার বেশিরভাগই নেতিবাচক। টুইটার/ফেসবুক ঘেঁটে ধারণা পাওয়া যায় - এসব প্রতিক্রিয়ার একটা বড় অংশই এসেছে দক্ষিণ এশীয় ব্যবহারকারীদের দিক থেকে।

ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টুইটার ব্যবহারকারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতরা - তারাই মূলত জড়িয়েছেন এ বিতর্কে। এরা মালালাকে আক্রমণ করেছেন বিয়ে বিষয়ে তার উক্তির জন্য। তাদের মন্তব্যগুলোর মূল প্রশ্নটা এই রকম: দৃশ্যতঃ বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পর ছয় মাস না পেরোতেই মালালা নিজে বিয়ে করলেন কেন? "টিপিক্যাল ডাবল স্ট্যান্ডার্ড" - মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ নামে একজন - যার নামের পাশে বাংলাদেশ ও প্যালেস্টাইনের পতাকা দেখা যাচ্ছে।

পাকিস্তান থেকে শাখান নামে একজন উর্দূতে টুইট করেছেন - যার অর্থ, "মালালা এক সময় দাড়ি ও বিয়ে দুটোরই বিরোধী ছিল, আর এখন সে দাড়িওয়ালা একজনকে বিয়ে করেছে, আমাদের বোকা বানিয়েছে।" লিভিংডেডএক্স নামে একজন টুইট করেছেন "যদি আমি ঠিক মনে করতে পারি - কেউ একজন কয়েকমাস আগে নিকাহর সমালোচনা করে পার্টনারশিপকে শ্রেয়তর মনে করেছিল ...আহ, ভন্ডামি কাকে বলে?" কুরাত_কুয়াসার নামে একজন উর্দুতে টুইট করেছেন - "আপনি যদি পার্টনারশিপ করেই থাকতে পারতেন তাহলে বিয়ে করার ইচ্ছে হলো কেন?"

মিস্টারসি-স্মোকার নামে একজন টুইট করেছেন, মালালা, আপনি বিয়ে করলেন কেন? এটা ছাড়াও তো আপনি পরিবার গড়তে পারতেন। এই মেয়ে কয়েক মাসে আগেই নিকাহর নিন্দা করছিল। কত বড় ভণ্ডামি!" বিলাওয়াল নামে একজনের টুইট: "ইনিই কি সেই যিনি কয়েক মাস আগে বিয়ে না করে একসাথে থাকাকে উৎসাহিত করেছিলেন?" একই ধরনের মন্তব্য করেছেন রাজীআইয়ার নামে একজন। তিনি বলেছেন - "মালালা বলেছিলেন, মানুষকে কেন বিয়ে করতে হয় আমি বুঝি না, এখন তিনি তা না বুঝেই বিয়ে করেছেন। ভণ্ডামির আরেক নাম মালালা।" প্রণব_ধীর নামে একজন - যার নামের পাশে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের পতাকা দেখা যাচ্ছে - মন্তব্য করেন "হিপোক্রিসি যদি আর্ট হয়, তাহলে মালালা হচ্ছেন তার পিকাসো।"

তবে এ বিতর্কে মালালার পাশে যে কেউই দাঁড়াননি - তা মোটেও নয়। বিনা শাহ নামে পাকিস্তানি লেখক ও কলামিস্ট টুইটারে মন্তব্য করেছেন: "মালালা বিয়ে করতে চায় না, লোকে বিচলিত। মালালা বিয়ে করেছে - তাতেও লোকে বিচলিত। সমস্যা সম্ভবত আপনারই, মালালার নয়।" এরা ওই একই সাক্ষাতকারে মালালার আরেকটি উক্তি শেয়ার করছেন - যেখানে মালালা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়া পর্যন্ত তিনি ভাবতেন তিনি কখনো বিয়ে করবেন না - কিন্তু তখন তিনি বোঝেননি যে মানুষ চিরকাল একরকম থাকে না, তার পরিবর্তন হয়। ট্রুথ ফর এসএসআর নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, "সবারই মত পরিবর্তন করার স্বাধীনতা আছে। আমাদের উচিত তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করা।" সাদিয়া বশির নামে পাকিস্তান থেকে টুইট করেছেন, " মালালার সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আমিও বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম - কিন্তু তার কিছুকাল পরই আমি বিয়ে করি।" সাথে তিনি জুড়ে দিয়েছেন হাসির ইমোজি।

নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখক তসলিমা নাসরিনও মন্তব্য করেছেন মালালার বিয়ে নিয়ে। তার করা একটি মন্তব্য বেশ আলোচিত হয়েছে। তসলিমা নাসরিন লিখেছেন: "মালালা একজন পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করেছে দেখে আমি হতবাক। তার বয়স মাত্র ২৪ । আমি ভেবেছিলাম সে অক্সফোর্ডে পড়তে গেছে, ওখানে সে একজন সুদর্শন প্রগতিশীল ইংরেজের প্রেমে পড়বে, ৩০ বছর বয়স হবার আগে বিয়ে করার চিন্তা করবে না, কিন্তু…।.‍" তার এই মন্তব্যও বেশ কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মেন'সডেআউট নামে একজন যে মন্তব্য করেছে‍ন যার অর্থ খানিকটা এই রকম -"এই নারীবাদীরাই অন্যদের যৌনবৈষম্যবাদ ও নারীবিদ্বেষ বন্ধ করতে বলে।"

পাকিস্তান থেকে 'খারাবঅওরাৎ' (বাংলায় বলা যায় 'মন্দ মেয়ে') নামে একজন মন্তব্য করেছেন, "২৪ বছর বয়স এমন কিছু কম বয়স নয়... আর সবাই যে শ্বেতাঙ্গ কমপ্লেক্সে ভুগবে বা ইংরেজ বিয়ে করার স্বপ্ন দেখবে, যেন তারা শ্রেয়তর জাতের মানুষ - তাও নয়। এটা কি ধরনের মানসিকতা?" মালালার বিয়ের খবরে বিশেষ করে পাকিস্তানে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেছিলাম ইসলামাবাদে বিবিসি উর্দুর সাংবাদিক সারা আতিকের সাথে। তিনি বলছিলেন, "ভোগ সাময়িকীতে প্রকাশিত মালালার মন্তব্যটি অনেকে সঠিক প্রেক্ষাপটে দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং ধরে নিয়েছেন যে তিনি বিয়ের বিরোধী এবং বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ককে উৎসাহিত করছেন। আসলে তা নয়। " "প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানে যারা মালালার প্রতি আগে থেকেই বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন - তাদের অনেকে এ উক্তিটি ব্যবহার করে তাকে আক্রমণ করছেন।"

পাকিস্তানে নারীবাদী গোষ্ঠীগুলোর অনেকেও জড়িয়ে পড়েছেন এই বিতর্কে - বলছিলেন সারা আতিক। "একদল মনে করেন মালালার বয়স এখনো কম এবং তিনি স্বনির্ভর নন - তাই তার এসময় বিয়ে করা ঠিক হয়নি। কিন্তু অন্য অনেকে বলছেন, মালালা এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী তাই এতে কোন অসুবিধা নেই।" হিরা আজমত নামে একজন টুইট করে তিনটি মতামত তুলে ধরেছেন। তার মতে - মালালা তার বিয়ের খবর দেবার টুইটে তার স্বামীকে ট্যাগ করেননি, স্বামীর পুরো নামও দেননি - এতে তিনি নারীর শক্তিকে তুলে ধরেছেন। "দ্বিতীয়তঃ তিনি আচমকা এই বিয়ের খবর ঘোষণা করে "দেশী" মানসিকতাকে খোঁচা দিয়েছেন। তৃতীয়তঃ তিনি নিজেকে ও আসেরকে 'পার্টনার' বলে বর্ণনা করে পাকিস্তানি দক্ষিণপন্থীদের এ যাবৎকালের সেরা আঘাতটি করেছেন।"

জোইয়া রেহমান এক টুইটে মালালার স্বামীর টুইটার হ্যান্ডল জানতে চেয়েছেন। তিনি লেখেন, আমি তাকে জানাতে চাই যে আমরা তার ওপর কড়া নজর রাখবো - তিনি আমাদের মালালার যত্ন নিচ্ছেন কিনা।" এ্যাবস-পাই-পাই নামে একজন মালালার স্বামীকে 'হট' বলে বর্ণনা করে টুইট করেন, একজন হট স্বামীই মালালার প্রাপ্য। সূত্র: বিবিসি।

 



 

Show all comments
  • Faruqe Rashed ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৩৪ পিএম says : 0
    কিল্লাই বিয়া করছে? হেতি ত কইছে বিয়া করার দরকার নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sofior Rahman Pramanik ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৩৪ পিএম says : 0
    Congratulations to the newly married couples.
    Total Reply(0) Reply
  • Nasrin Akter ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৩৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ তা'য়ালা এইভাবেই সকল মুসলমানদের ইসলামের নিয়ম নীতি পালন করার জন্য মানসিকতা পরিবর্তন করতে সাহায্য করুক,আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nirob Prodhan ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৩৫ পিএম says : 0
    মালালা কেন বিয়ে করলো! আমার মাথায় আসেনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ