Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাফাতসহ সবাই খালাস

আদালতের সময় নষ্ট করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১২ এএম

বনানীর ওই হোটেলে কোনো ধর্ষণ হয়নি : দুই শিক্ষার্থী আগে থেকেই যৌন কাজে অভ্যস্ত : অভিযোগকারীরা স্বেচ্ছায় আসামিদের শয্যাসঙ্গী হন
মামলার বাদী দুই শিক্ষার্থী আগে থেকেই যৌন কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় বনানীর ওই হোটেলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তারা সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৪ দিন পর তারা ‘ধর্ষিত হওয়া’র অভিযোগ আনেন। বনানাীর ওই হোটেলে কথিত ‘ধর্ষণ মামলা’র রায়ে এ মন্তব্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বনানীর একটি হোটেলে ‘আলোচিত ধর্ষণ’ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। রায়ে অভিযুক্ত সাফাত আহমেদসহ ৫ আসামিকেই বেকসুর খালাস দেয়া হয়। একই সঙ্গে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ভৎর্সনা করে আদালত বলেন, এখন থেকে ঘটনার ৭২ ঘন্টা পর কোনো ধর্ষণ মামলা নয়।

বনানীর বহুল আলোচিত ওই ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার আলোচিত এ মামলার রায় দিলেন। সাফাত আহমেদ ছাড়াও খালাসপ্রাপ্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন এবং নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯ টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে দুই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার ‘ধর্ষণ করা হয়েছে’ মর্মে অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়। ঘটনার সোয়া মাস পর ওই বছর ৬ মে দায়ের করা হয় মামলাটি।

অথচ বনানীর হোটেলে ওই ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তদের ধর্ষক হিসেবে প্রমাণ করতে কিছু গণমাধ্যম কোমড় বেঁধে মাঠে নামে। বিচারের আগেই হয়ে যায় মিডিয়া ট্রায়াল। পেশাদার যৌনকর্মী দুই শিক্ষার্থীকে নিরপরাধ (ইনোসেন্ট) প্রমানের চেষ্টা করা হয়। এমনকি মামলা দায়েরের পর কিছু মিডিয়া, এনজিও, নারী নেত্রী এবং তথাকথিত প্রগতিশীল ব্যাক্তি ঘটনার চেয়ে ঘটনাস্থল ওই হোটেলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ফলাও করে প্রচার করেন। এছাড়াও স্বেচ্ছায় আসামিদের শয্যাসঙ্গী হওয়া উচু তলার যৌনকর্মী ওই দুই শিক্ষার্থী নিষ্পাপ হিসেবে প্রমাণের চেস্টা করেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই যৌন কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৪ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

আদালত বলেন, আপনারা (প্রসিকিউশন) বলছেন-এটি একটি আলোচিত মামলা, কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে সব মামলাই আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলাটির মেডিক্যাল রিপোর্টে কিছুই পাওয়া যায়নি। ডাক্তাররা কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। ঘটনার পকানো সাক্ষী নেই। আলামত নেই। তরুণীদের কাপড়ে কোনো পুরুষের সিমেন্স পাওয়া যায়নি। তথাপি চার্জশিট দিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করে আদালত বলেন, মোট ৯৪ কার্যদিবসের বিচারে আদালতের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যে কারণে প্রকৃত ধর্ষণের মামলার বিচার ব্যাহত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতের এই সময় নষ্ট করেছেন।

রায়ের পর সাফাত আহমেদের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট এবং ২২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি-সবকিছুর আলোকে এ ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা টিমের সবাই আনন্দিত। এই মামলায় যারা তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এই মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা কাউকে খুশি করার জন্য এই কাজ করেছিলেন।

নাঈম আশরাফের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বলেন, সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী ও কতিপয় ব্যবসায়িকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে এই মামলা করেছেন। মেডিক্যাল রিপোর্ট, ডিএনএ টেস্ট, আসমিদের জবানবন্দি এবং ২২ জন সাক্ষীর জবানবন্দির জেরা পর্যালোচনা করে আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। মিথ্যা মামলায় ৯৬ কার্যদিবস আদলতের সময় নষ্ট করা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, বনানীর আবাসিক হোটেলটিতে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হলেও ওখানে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানে অভিযোগকারীরা স্বেচ্ছায় আসামিদের সঙ্গে মদ্য পান করেন। পরে তারা স্বেচ্ছায় আসামিদের শর্যাসঙ্গী হয়েছেন। সেখানে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০১৭ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের ‘উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ১৯ জুন একই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। ওই বছরের ১৩ জুলাই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শফিউল আজম পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন।

চার্জশিটে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। মামলার অন্য তিন অভিযুক্ত সাদমান সাকিফ, আলী ও বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধেও একই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। বিচার প্রক্রিয়ায় গত ৩ অক্টোবর সরকার ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়।

এর আগে একবার ১২ অক্টোবর রায় ঘোষণার তারিখ ছিলো। কিন্তু ওইদিন বিচারক অসুস্থ থাকায় রায়ের তারিখ ধার্য হয় ২৭ অক্টোবর। কিন্তু ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ইন্তেকাল করায় তার সম্মানে দেশের সকল আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে গত বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন আদালত। সে অনুযায়ী গতকাল ঘোষণা করা হয় এ রায়।

এদিকে চার বছর আগের সংঘটিত ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে একশ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম ঘটনার একতরফা তথ্য উপস্থাপন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। অপরাধের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, কারা এই অপরাধ ঘটিয়েছেন-সেটির ওপর। একজন আসামি দেশের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণশিল্পে সুখ্যাতি পাওয়া ‘আপন জুয়েলার্স’র মালিকের ছেলে-এটিই হয়ে ওঠে মুখ্য। বস্তুনিষ্ঠতার জায়গায় ক্রমাগত প্রচার করা হয় অতিরঞ্জিত তথ্য। আসামি কার পুত্র এবং ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে- সেটি দেখানো হয় বড় করে। এভাবে জুডিশিয়াল ট্রায়ালের আগেই টানা চার বছর চলে মিডিয়া ট্রায়াল। আর এ মিডিয়ার দায়িত্বহীন প্রচারণার ‘নির্মম শিকার’ হন খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। আদালতের রায়ে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এসেছে। এ মন্তব্য করেছেন বনানীর হোটেলে কথিত ধর্ষণ মামলা’র খালাসপ্রাপ্ত অন্য ব্যক্তিদের আইনজীবীরা।

 

 

 



 

Show all comments
  • Shopnil Tuhin ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    আদালত তাদের খালাস দিয়েছে, কিন্তু পূর্বে মূল ধারার মিডিয়া এদের ধর্ষক হিসাবে ছবি সহ প্রকাশ করেছে। মেয়ে যে মিথ্যা অভিযোগ করেছে, তার বিচার কে করবে? তার ছবি এখন মিডিয়াতে দেওয়া হবে না? মিডিয়ার মদতে, তথাকথিত মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে মেয়েরা আর কত কাল ছেলেদের সম্মান নষ্ট করবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Masum Akand ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    আল্লাহ হলেন উত্তম ন্যায়বিচারক।
    Total Reply(0) Reply
  • Waheduzzaman Tutul ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    যে মেয়েগুলো এই ছেলেদের নামে মামলা দিয়েছিল, তাদের শাস্তি দাবি করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Salman Shuvro ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও মেয়েলি কেইস গুলোর বেশিরভাগ ই মিথ্যা হয়ে থাকে। মেডিক্যাল টেস্ট এবং সরাসরি ডাক্তার কর্তৃক প্রদান করা সাক্ষ্যই বলেদেয় মামলাটি মিথ্যা ছিলো। এখানে, মামলার বিবাদিকে দোষারোপ করা অনুচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Mamun ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
    মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য বাদির ফাঁসি বা আমৃত্যু কারাদন্ড হওয়া উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ