Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অকাস নিয়ে ইন্দোনেশিয়া-অস্ট্রেলিয়া বিভাজন বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৫৩ পিএম

‘বিতর্কিত অকাস’ চুক্তির ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন এই অঞ্চলকে আশ্বস্ত করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভ্রমণ করছেন। অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক শক্তির সাবমেরিন অধিগ্রহণের ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অপ্রসারণে যে প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে ইন্দোনেশিয়ার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রশমনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কিন্তু জাকার্তা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক রাজধানীকে আশ্বস্ত করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্ষমতার ভবিষ্যত নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে একটি গভীর এবং স্থায়ী বিভাজনের কারণ হিসাবেই থেকে যাচ্ছে অকাস। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল সমালোচনামূলক, এবং পরবর্তীতে অক্টোবরের মাঝামাঝি ঘোষণা করা হয়েছিল যে, জাকার্তা পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন রাষ্ট্রগুলোকে পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য অপ্রসারণ চুক্তির পর্যালোচনা চাইবে। এটি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ইয়ের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার সিনিয়র মন্ত্রীদের দ্বারা জারি করা করা হয়েছিল। এটি ছিল অকাস-এর প্রথমে পরোক্ষ এবং পরে প্রত্যক্ষ সমালোচনা।

সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ রিপোর্ট করেছে যে, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ‘বারবার এবং জোর দিয়ে’ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কাছে অকাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। অকাস-এর উপর সাম্প্রতিক এই কূটনৈতিক বিভাজন সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের প্রতিবেশীদের সাথে জড়িত থাকার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী অগ্রাধিকার ভাগ করে নেয়। এই অগ্রাধিকারের মূলে এই দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করে এবং রাষ্ট্রগুলোকে সামরিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রাখে।

কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বিপরীতে, অস্ট্রেলিয়া মার্কিন নেতৃত্বের পছন্দের ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মরিসন যেমন বলেছেন, ক্যানবেরা বিশ্বাস করে যে ‘শক্তির ভারসাম্য যা স্বাধীনতার পক্ষে’ শুধুমাত্র ‘আমেরিকান শক্তি’ দ্বারা টিকিয়ে রাখা যেতে পারে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক নীতির কিছু দিক সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে - বিশেষ করে বাণিজ্য এবং ভূ-অর্থনৈতিক নীতি - ক্যানবেরা তার বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকা বজায় রাখার জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টাকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করে। অকাস নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব এবং অস্ট্রেলিয়ায় আরও মার্কিন বাহিনী মোতায়েন করার জন্য ক্যানবেরা ওয়াশিংটনের সাথে তার সামরিক আলিঙ্গনকে আরও গভীর করছে এবং ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চাভিলাষী কৌশল বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য নিজেকে অবস্থান করছে।

এর বিপরীতে, জাকার্তার কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনের অভিপ্রায় সম্পর্কে ঠিক ততটাই সতর্ক, যতটা তারা বেইজিংয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে। ক্যানবেরা ওয়াশিংটনের সাথে তার নিরাপত্তা সম্পর্ককে ‘দীর্ঘস্থায়ী’ হিসাবে দেখতে পারে। তথাপি ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা এশিয়ার সহিংস প্রধান শক্তি প্রতিযোগিতা ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোত্তম, একটি প্রয়োজনীয় কৌশলগত ভারসাম্যকারী হিসাবে দেখেন। আজ তা যতই ন্যায়সঙ্গত হোক না কেন, মার্কিন শক্তির এই গভীর সংশয় ইন্দোনেশিয়ার ঔপনিবেশিক পরাধীনতার দীর্ঘ ইতিহাস এবং বিদেশী বিদ্রোহ ও হস্তক্ষেপের একাধিক অভিজ্ঞতার ফসল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সহ প্রধান শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক পরিচালনা করার জন্য ইন্দোনেশিয়ার কৌশল ছিল, আসিয়ানকে কেন্দ্র করে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার একাধিক স্তরে তাদের জড়িত করা। জাকার্তার আশা হল যে, এটি তার স্বার্থকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সর্বোত্তম স্থান পাবে যখন এটি বড় শক্তিগুলোকে সুবিধা দিতে পারে। কারণ তারা আসিয়ান-কেন্দ্রিক দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। তবে অবশ্যই, ইন্দোনেশিয়ার কৌশল পুরোপুরি কার্যকর প্রমাণিত হয়নি এবং চীনকে তার লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করার জন্য জবরদস্তিমূলক কৌশল ব্যবহার করতে বাধা দেয়নি।

ইন্দোনেশিয়ার কৌশলটি চীনকে কীভাবে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কেও নীরব রয়েছে কারণ পিপলস লিবারেশন আর্মি এমনকি জাহাজ নির্মাণ থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যাই হোক না কেন, জাকার্তা এবং ক্যানবেরার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী কৌশলগত সম্পর্তের বিপরীতে, ইন্দোনেশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে ‘মাঝখানে দাঁড়াতে’ এবং আসিয়ানকে শক্তি প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে একটি বাফার হিসাবে ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জাকার্তা এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাজধানীতে কূটনৈতিক সফর সত্ত্বেও, বড় শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তীব্র করতে দেখা যায় এমন ক্ষুদ্রতর ব্যবস্থার প্রতি ইন্দোনেশিয়ার অবিশ্বাস থাকবে।

ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া চিরকালের জন্য ভৌগলিকভাবে আবদ্ধ থাকবে। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিকের নতুন ক্ষমতার রাজনীতি কীভাবে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে গভীরভাবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সহ, এই ভৌগলিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি কৌশলগতভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চলমান ঝুঁকি রয়েছে। সূত্র: দ্য ইন্টারপ্রেটার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ