Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

গত এপ্রিলে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে ৪ জনের মৃত্যুর পর আবারও সোয়ারিঘাটের একটি কেমিক্যালের ড্রাম ভর্তি জুতার কারখানায় আগুন লেগে ৫ জন শ্রমিক পুড়ে মৃত্যুবরণ করেছে। পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লেগে মানুষের হতাহতের ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটল। পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায়, ঐদিন দিবাগত রাত ১টায় সোয়ারিঘাটের একটি জুতার কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যায়। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারখানায় প্রচুর কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের দ্রব্য থাকায় আগুনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট দুই ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় লোকজন জানায়, জুতার কারখানাটিতে বার্মিজ ও স্পঞ্জের জুতা তৈরি হতো। এতে রাবার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল ভর্তি ড্রাম ছিল। ফলে আগুন লাগার সাথে সাথে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পুরো কারখানাটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

কেমিক্যালের গোডাউন, প্লাস্টিক দ্রব্যসহ দাহ্যপদার্থের বিশাল ভান্ডার হয়ে রয়েছে পুরান ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই এলাকাটিকে বোমা সদৃশ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছেন। কিছুদিন পর পর এলাকাটিতে বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। অসংখ্য মানুষ জ্বলেপুড়ে মৃত্যুবরণ করে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুড়িহাট্টার একটি কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ ভর্তি কারখানায় আগুন লেগে ৭০ জনের মতো মৃত্যুবরণ করে। ২০১০ সালে নিমতলীর ট্র্যাজেডিতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এ বছরের জুলাই মাসে নারারণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় আগুন লেগে অর্ধ শতাধিক শিশু শ্রমিক আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানায় একের পর এক আগুন লেগে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হলেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আগুন লাগার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দিলেও তা আর প্রকাশিত হয় না। এক সময় তা ডিপ ফ্রিজে চলে যায়। আরেকটি ঘটনা না ঘটনা পর্যন্ত তার টনক নড়ে না। প্রতিকারের ব্যবস্থা না থাকায় পুরান ঢাকায় একের পর এক কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা গড়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, সিদ্দিক বাজার ও সদরঘাট এলাকাজুড়ে ৫৩৭টি কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্লাস্টিকের কারখানা থেকে শুরু করে কসমেটিক্স ও রাবারের পণ্যের কারখানা। এসব গোডাউন ও কারখানায় আগুনের ঘটনায় পুরো এলাকা ভস্মিভূত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। নিমতলি ট্র্যাজেডির পর ফায়ার সার্ভিস পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা স্থাপনের লাইসেন্স বন্ধ করে দেয়। তারপরও একের পর এক এসব কারখানা গড়ে উঠছে। ঘটছে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক জীবনসংহারী অগ্নিকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডে যে শুধু মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তা নয়, কোটি কোটি টাকার সম্পদও পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। নগরবিদরা পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার তাকিদ দিলেও সরকারের তা সরানোর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নিমতলি ট্র্যাজেডির পর সরকার পুরান ঢাকা থেকে কেরানিগঞ্জে ৫০ একর জায়গায় বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গঠনের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে তা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় ৩০৮ একর জায়গায় নির্মাণ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সময় নির্ধারণ করার জটিলতার কারণে তা এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। কবে এই শিল্পপার্ক হবে তা কেউ বলতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় কোনো ধরনের শিল্পকারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউন করা নিষিদ্ধ। অথচ পুরান ঢাকায় শত শত বাসাবাড়িতেই কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা গড়ে উঠেছে। এ এক ভয়াবহ চিত্র। এসব দেখার যেন কেউ নেই। ফলে একেকটি আগুন লাগার ঘটনায় মানুষের জীবন ও সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের পর তার কারণ উদ্ঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা মনে করি, পুরান ঢাকা থেকে অবিলম্বে কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের কারখানা ও গোডাউন স্থানান্তর করতে হবে। বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। নতুন করে যাতে কেউ কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন স্থাপন করতে না পারে, এজন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নজরদারি করতে হবে। অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন